আফ্রিকান ইউনিয়ন ১০ম শীর্ষ সম্মেলন ৩১ জানুয়ারী ঈথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় শুরু হয়েছে। সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য 'আফ্রিকান শিল্পের উন্নয়ন'। আফ্রিকান ইউনিয়নের ৫৩টি সদস্য দেশের নেতা বা প্রতিনিধিরা আফ্রিকার শিল্প উন্নয়ন, আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশনের চেয়ারম্যান নির্বাচন, কেনিয়ার পরিস্থিতি এবং যৌথ আফ্রিকান সরকার গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।
গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর কেনিয়ায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর তিন দিনের পর কেনিয়ার নির্বাচন কমিশন মুয়াই কিবাকিকে প্রেসিডেন্ট পদ পুনর্নির্বাচিত হওয়ার কথা ঘোষণা করে। রাইলা ওডিংগার নেতৃত্বাধীন বিরোধী পার্টি ও ডি এম ভোট গণনার প্রক্রিয়ায় ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ আনে। ও ডি এম এই নির্বাচনের ফলাফল অস্বীকার করেছে। এর পরই শুরু ব্যাপক সহিংসতা। সারা কেনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে দাঙ্গাহাঙ্গামা । এখনো কেনিয়ায় এই সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। এসব কারণেই কেনিয়ার পরিস্থিতি অন্যতম আফ্রিকান ইউনিয়ন শীর্ষ সম্মেলনের একটি প্রধান আলোচ্যবিষয়ে পরিণত হয়েছে।
আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলফা ওমর কোনারেউদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেনিয়ার সংশ্লিষ্ট পক্ষের প্রতি দ্রুত সহিংসতা থামানোর জন্য ব্যবস্থা নেয়া এবং সম্মিলিতভাবে সংঘাত নিরসনের উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগের কেনিয়া ছিল আফ্রিকার মূলভূভাগের আশা। সেই কেনিয়া এখন সহিংসতা, জাতিগত শুদ্ধি এমনকি বর্ণবাদী হত্যাকান্ডের দেশে পরিণত হয়েছে। চলমান এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ করার জন্য কেনিয়ার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া।
আফ্রিকান ইউনিয়নের আমন্ত্রণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন তার ভাষণে কেনিয়ার জনগণের প্রতি পারস্পরিক খুনোখুনি বন্ধ করার এবং দ্রুত সহিংসতা অবসানের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়াই কিবাকি এবং বিরোধী পার্টি ও ডি এমের চেয়ারম্যান রাইলা ওডিংগার শান্তিপূর্ণ পথে সহিংসতা থামাতে বিশেষ দায়িত্ব পালন করা উচিত। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত কেনিয়ায় জরুরী সহায়তা দেয়া, যাতে কেনিয়ার জনগণ দুর্দশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। এর পর বান কি মুন এদিন আদ্দিস আবাবায় সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী মুয়াই কিবাকির সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। উল্লেখ্য, বান কি মুন ১ ফেব্রুয়ারী কেনিয়া সফর করবেন।
আফ্রিকান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ কেনিয়ার বিভিন্ন পক্ষের প্রতি সহিংসতা থামানোর আহ্বান জানানোর পাশাপাশি পশ্চিম কেনিয়ার এলডোরেটে বিরোধী দলের আরেক জন সদস্য গুলিতে নিহত হয়েছেন। তিনি হচ্ছেন এ সপ্তাহে গুলিতে নিহত হওয়া বিরোধী দলের দ্বিতীয় সদস্য। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় নাইরোবিতে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে বৈঠক স্থগিত হয়ে গেছে।
কেনিয়ার সংকট কেনিয়া এবং পূর্ব আফ্রিকা এলাকার অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কেনিয়া হচ্ছে পূর্ব আফ্রিকা এলাকার অর্থনীতি ও পরিবহনের কেন্দ্র এবং নিকটবর্তী দেশগুলোর প্রধান বাণিজ্যিক দেশ। বর্তমানে কেনিয়ার রাজনৈতিক সংকট কেবল অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তা নয়, বরং এই এলাকার বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুতর প্রভাব ফেলছে।
তিন দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলনে আফ্রিকান ইউনিয়ন কেনিয়া সমস্যা নিরসনে কি কি অগ্রগতি অর্জন করে? সেটাই এখন দেখার সময়।
|