আধুনিক খাদ্য শিল্প এবং মানুষের জীবনযাপনের মান উন্নয়নের কারণে তাদের খাবারের ধারণা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি এবং সুন্দর ও সুস্বাদু খাবার খাওয়ার কারণে খাবারের মধ্যে মেদ ও তৈলযুক্ত উপাদান থাকায় তা সহজেই ডায়াবেটিস, হৃদ রোগ এবং উচ্চ রক্ত চাপসহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে । কিন্তু সম্প্রতি ইসরাইলের বিশেষজ্ঞরা গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন, মেদ বা তৈলযুক্ত খাবার খাওয়ার সময় যদি বেশি সবজি ফল বা লাল মদ খান, তাহলে এসব খাবারের ফলে শরীরে সৃষ্ট ক্ষতিকর উপাদান অনেক কমে যাবে । আজকের অনুষ্ঠানে আমি এ বিষয়েই আপনাদের কিছু তথ্য জানাবো ।
ইসরাইলের বিশেষজ্ঞদের গবেষণার ফলাফল মার্কিন জীববিদ্যা পরীক্ষা পরিষদের ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে ।গবেষণার পর তাঁরা একটি রিপোর্ট দাখিল করেন । রিপোর্টে বলা হয়েছে, সবজি, ফল ও লাল মদের মধ্যে রয়েছে পোলিফেনোলিক উপাদান উচ্চ মেদযুক্ত খাবারের মানুষের রক্তে সৃষ্ট বিষাক্ত উপাদান কমাতে সক্ষম এবং এ তত্ত্বই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে ।
গবেষকরা ৬জন পুরুষ ও ৪জন নারী স্বেচ্ছাসেবকের ওপর পরীক্ষা চালান । তাঁরা ভাজা মুরগী ও অন্যান্যউপাদান মিলিয়ে তিনটি খাবার তৈরী করেন । প্রথম খাবার হলো: ভাজা মুরগী ও পানি । দ্বিতীয় খাবার হলো মুরগী রান্না করার পর, এর মধ্যে এক চামচ লাল মদ মেশানো এবং পরীক্ষার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের এক গ্লাস প্রায় ২০০ মিলিমিটার লাল মদ পান করানো । তৃতীয় খাবার হলো , মুরগী রান্না হওয়ার আগেই লাল মদ তার সঙ্গে মেশানো এবং স্বেচ্ছাসেবকরা ভাজা মুরগী খাওয়ার পর এক গ্লাস লাল মদও পান করে ।
তিনটি খাবার খাওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে গবেষকরা স্বেচ্ছাসেবকদের রক্ত ও প্রস্রাবের মধ্যে মালোনালদেহিদ নামক উপাদানের পরিমাণ পরীক্ষা করেন । এ উপাদান হল মেদ গলানোর প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট একটি প্রয়োজনীয় উপাদান । তা হৃদ রোগ ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়াতে পারে । পরীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যায় যে, প্রথম খাবার খাওয়ার পর অথবা লাল মদ না থাকা মুরগীর মাংস খাওয়ার পর, স্বেচ্ছাসেবকদের রক্ত ও প্রস্রাবে সৃষ্ট উপাদানের পরিমাণ কোনো খাবার না খাওয়ার সময়ের চেয়ে ৪ গুণেরও বেশি । এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় খাবার খাওয়ার পর, তাঁদের রক্ত ও প্রস্রাবের মধ্যে এ উপাদান কম পরিমাণ রয়েছে ।
তা থেকে বোঝা যায়, লাল মদের মধ্যে পোলিফেনোলিক উপাদান এসব বিষাক্ত উপাদান নির্মূল করার জন্য অনেক কার্যকর ভুমিকা পালন করতে পারে ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর খাবার যেমন তৈলযুক্ত ভাজা খাবার এবং বেশি চিনিযুক্ত খাবার সাধারণত আমার খাবারের মধ্যে থাকবেই । এ জন্য শুধু নতুন পদ্ধতিতে আমরা সুস্বাদ্যু খাবার তৈরীর সময় সৃষ্টি ক্ষতি যাতে না হয় তার সমাধান করেছে । এ গবেষণার সাফল্য মানুষের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য নতুন পথ খুলে দিয়েছে । এখন লোকজন তৈলযুক্ত খাবার যেমন আলু চিপস বা ভাজা মুরগী খাওয়ার পর হৃদ ও রক্তনালীর রোগে আক্রান্ত হওয়ার চিন্তা আগের চেয়ে অনেক কমে যাবে । ভবিষ্যতে সুস্বাদু তবে শরীরের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত নয় এমন খাবার খেলে, কখনো চিন্তা হবে না বা ভয়ও লাগবে না ।
বন্ধুরা, যদিও গবেষণায় এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে । তবে তা এখনো পরীক্ষার প্রক্রিয়াধীন । আপনাদের এখনো ভাজা খাবার ও বেশি চিনিযুক্ত খাবার কম খাওয়াই ভালো । এতক্ষণ আমি আপনাদেরকে সবজি ,ফল ও লাল মদসহ বিভিন্ন পোলিফেনোলিক উপাদানের শরীরের জন্য সহায়ক ভুমিকা পালন করার কথা জানিয়ে দিলাম । আশা করি, আপনারা সবাই সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো মনে রাখার পাশাপাশি শরীর আরও সুস্থ্য হয়ে উঠবেন ।
|