চীনের ঐতিহ্যিক উত্সব – বসন্ত উত্সব। আর ক'দিন মাত্র বাকি। বসন্ত উত্সব হচ্ছে চীনাদের সবচেয়ে জীবন ঘনিষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ উত্সব। চীনা ভাষায় এই উত্সবকে 'নিয়েন' বলা হয়। আমাদের অভ্যাস অনুযায়ী, এই সুযোগে আমি আপনাদের সবাইকে বসন্ত উত্সবের সুরভিত রঙিন শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আর কামনা করছি, নতুন বছর আপনাদের জীবন সুখ ও শান্তিতে ভরে উঠুক।
এখন আপনারা 'সানন্দ' নামের সংগীতটি শুনছেন। তা শুনে মন উল্লসিত হয়ে উঠেছে, তাই না? হ্যাঁ, চীনারা বসন্ত উত্সবে উল্লাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে। কারণ, চীনারা বসন্ত উত্সবকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। সাধারণতঃ বসন্ত উত্সবের এক মাস আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হয়ে যায়। প্রতিটি পরিবার তাদের বাড়ি-ঘর ধোওয়া-মোছা করে পরিপাটি করে তোলে। এ সময় বসন্ত উত্সবের জন্য কিছু বিশেষ পণ্যও কিনতে হয়। যেমন বিশেষ ধরণের খাবার, ভোগ্যপণ্য, সবার জন্য নতুন কাপড় ও বাচ্চাদের খেলনা ইত্যাদি। তা ছাড়া কিছু কিছু অঞ্চলে দেওয়াল বা দরজার দু'পাশে বসন্ত উত্সব সম্পর্কিত বিশেষ লিপি ও ছবি লাগানোর প্রথা রয়েছে।
বসন্ত উত্সব হচ্ছে আত্মীয়স্বজনের পুনর্মিলনের উত্সব। এ আনন্দের সঙ্গে তুলনা করলে বাঙালীদের ১লা বৈশাখের মতো আর অন্য দিকে পাশ্চাত্য দেশগুলোর বড় দিনের মতো। বসন্ত উত্সবের আগের দিন মানুষ যত দূরেই থাক না কেন, সবাই যার যার বাড়িতে বাবা-মার কাছে ফিরে আসতে চেষ্টা করে। পরিবারের সকল সদস্যরা ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার সম্মিলনে একসাথে রাতের খাবার খায়। অতীতে বসন্ত উত্সবের আগের দিন লোকজন সারা রাত জেগে থেকে গল্প গুজব করে আনন্দ ফূর্তিতে মেতে ওঠে। কিন্তু চীনাদের জীবন-যাপনের মান উন্নয়নের পাশাপাশি নানা রকম বিনোদন পদ্ধতি বের হয়েছে। চীনাদের বসন্ত উত্সব কাটানোর পদ্ধতিরও অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। যেমন পরিবারের সব সদস্যদের একসাথে বসে চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন কেন্দ্রের বসন্ত উত্সবের প্রীতি সম্মিলনীও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান উপভোগ করা হচ্ছে বর্তমান চীনের অধিকাংশ পরিবারের প্রথম বাছাই। বন্ধুরা, এখন শুনুন চীনা শিল্পী চৌ লিং ইয়ানের গাওয়া 'বসন্ত উত্সব এর গান'।
গানের কথা এমন, 'বসন্ত উত্সবের আগের দিন আমি বাবা-মার সঙ্গে সারা রাত জেগে থাকি। মায়ের পাশে নিরিবিলি বসে থেকে নতুন বছরকে অভ্যর্থনা জানাই। নতুন বছর নতুন আশা বয়ে আনে। নতুন বছর নতুন বসন্তকালের আলো বয়ে আনে। নতুন বছরে আমাদের শরীর ও মন আরো উজ্জীবিত হয়ে উঠুক।'
বসন্ত উত্সবের প্রথম দিনে শিশুরাসহ পরিবারের সবাই নতুন কাপড় পড়ে আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য বেরিয়ে পড়ে। পরিচিত কারোর সঙ্গে দেখা হলে প্রথমেই "বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা" জানাই। যদি বিগত বছরে বন্ধুদের মধ্যে কোন ভুল বোঝা-বুঝি হয়ে থাকে, তাহলে বসন্ত উত্সবে পরস্পরকে একবার শুভেচ্ছা জানালেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। বন্ধুরা, এখন শুনুন "বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা জানানো" গানটি।
উত্তর চীনের গ্রামাঞ্চলে বসন্ত উত্সবের সময় জানালায় রঙিন কাগজ কেটে তৈরী করা বিভিন্ন নকশা লাগানো প্রচলন রয়েছে। নারীরা রঙিন কাগজ কেটে নানা রকম পাখি, ফুল, মাছ, পোকা ও মানুষ আঁকতে পারেন। এখন আমি "জানালার কাগজ কাটা" নামক গানটি শোনাচ্ছি।
বসন্ত উত্সবকালের আরো অনেক লোকাচার রয়েছে। মন্দির মেলা হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় লোকাচারের অন্যতম। বসন্ত উত্সব কালে মন্দির মেলা কেবল বাণিজ্যিক বাজার থাকে না, বরং তা বসন্ত উত্সব কালে এক রকম গুরুত্বপূর্ণ বিনোদন স্থানেও পরিণত হয়। বন্ধুরা, এখন আপনারা "মন্দির বাজারে যাও" নামক গান শুনবেন। মন্দির বাজারের উল্লাস উপভোগ করুন।
বসন্ত উত্সবকালের লোকাচারের মধ্যে সিংহ নৃত্য ও ড্রাগণ লণ্ঠন খেলা প্রায়শই দেখা যায়। চীনারা মনে করেন, সিংহ হচ্ছে প্রাণীর রাজা। সিংহ নৃত্য ভূত তাড়ানোর ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়া, চীনাদের চোখে ড্রাগণ হচ্ছে সুখের প্রতীক। ড্রাগন বৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করে। বিশাল ড্রাগণ ও বীর সিংহ হচ্ছে চীনা জাতির অহঙ্কার আর স্মৃদ্ধির প্রতীক। এখন শুনুন একটি গান, এ গানে রাস্তায় একটি মেয়ের ড্রাগণ-লণ্ঠন খেলা দেখানোর দৃশ্যের বর্ণনা করা হয়েছে।(ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|