উত্তর-পশ্চিম চীনের ছিংহাই প্রদেশ বহু জাতি অধ্যুষিত একটি প্রদেশ । এ প্রদেশে তিব্বতী , মঙ্গোলীয় ও হুইসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতি বসবাস করছে এবং ওখানকার সাংস্কৃতিক সম্পদ ব্যাপক সমৃদ্ধ । গত কয়েক বছরে ছিংহাই প্রাদেশিক সরকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে । এ ব্যবস্থার পথ-নির্দেশনায় বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতি নিজেদের জাতীয় আচার ব্যবহার ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কাজে লাগিয়ে আয় বাড়ানোর পথের সূচনা করেছে এবং তারা সচ্ছল হয়েছে । আজ এ অনুষ্ঠানে ছিংহাই প্রদেশে সংখ্যালঘু জাতিসমূহের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন ও তাদের সচ্ছলতা সম্পর্কে আপনাদের জানাচ্ছি আমি …
এতক্ষণ আপনারা যা শুনলেন , তা ছিংহাই প্রদেশের পিং আন জেলার আইসামে নামে সংখ্যালঘু জাতির একটি নৃত্য ও সংগীত শিল্পী দল পরিবেশন করেছে । এ শিল্পী দল প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে । অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা স্থানীয় তিব্বতী ও মঙ্গোলীয় জাতির অল্প বয়সীদের নিয়ে গঠিত । শিল্পী দল গঠনের প্রথম দিকে অভিনেতা ও অভিনেত্রীর সংখ্যা মাত্র ৬৬ জন ছিল । গত তিন বছরে এ দল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছে । শিল্পীদের সংখ্যা এখন ৫ শো বিশে দাঁড়িয়েছে । তাদের আয় অনেক উন্নত হয়েছে । যারা সবচেয়ে বেশি আয় করেছে , সাধারণ গ্রামবাসীদের তুলনায় তা দশ বারো গুণ বেশি । শিল্পী দলের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াং সিয়ান তে বলেন , শিল্পী দল ছিংহাই প্রদেশের বেশ কয়েকটি শহরে তিব্বতী ও মঙ্গোলীয় জাতির নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করেছে ।
শিল্পী দল মাত্র কয়েক দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছে । কিন্তু তারা ১২ হাজার ইউয়ান আয় করেছে । শিল্পীরা উত্ফুল্ল হয়ে উঠেছে । তাদের নিজেদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন ও সচ্ছলতা দেখে খুব ভাল লেগেছে । পরিবার পরিজনরা বলেছে , সংখ্যালঘু জাতির নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন ও সচ্ছল হওয়ায় তাদের সন্তানরা উপকৃত হয়েছে । এতে পরিবারের সদস্যরা খুব গর্বিত ।
ছিংহাই প্রদেশ জল সম্পদে সমৃদ্ধ । প্রদেশে বিস্তীর্ণ পশু পালন অঞ্চল রয়েছে । গত কয়েক বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অতিরিক্ত পশু পালনের কারণে এ প্রদেশের পরিবেশ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল । ২০০৩ সালে এ প্রদেশে পশু পালনের পরিবর্তে তৃণভূমি আবার গড়ে তোলার অভিযান চালানো হয়েছে । এ নীতি অনুযায়ী , শহরে স্থানান্তরের জন্য তিব্বতী ও মঙ্গোলীয় জাতির পশু পালকদের উত্সাহ দেয়া হচ্ছে । নতুন জীবনধারার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে প্রাদেশিক সরকার পশু পালকদের সাহায্য করেছে । সরকার এক দিকে তাদেরকে স্থায়ী বাড়ি যুগিয়েছে ও গাড়ি চালানো এবং ফসল বপনের প্রযুক্তি শিখিয়েছে , অন্য দিকে তিব্বতী ও মঙ্গোলীয় জাতির নৃত্য ও সংগীতের নৈপুণ্য কাজে লাগিয়ে সংখ্যালঘু জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পর্যটন শিল্প সম্প্রসারিত করেছে । ফলে কৃষক ও পশু পালকদের আয় বেড়েছে ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে কৃষক ও পশু পালকরা সচ্ছল হয়ে উঠেছে । এ ক্ষেত্রে সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারী ক্ষেত্র অবদান রেখেছে । প্রাদেশিক সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে বিনা পয়সায় সংখ্যালঘু জাতির নৃত্য প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়েছে । এতে তিব্বতী ও মঙ্গোলীয় জাতির অল্পবয়সীরা বৈচিত্র্যপূর্ণ নৃত্য শিখছে । এর পাশাপাশি শিল্পী দল শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাহায্যও পেয়েছে । ২০০৭ সালে ছিংহাই প্রদেশের একটি বেসরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে তিব্বতী ও মঙ্গোলীয় জাতির অল্পবয়সী শিল্পীদের জন্য সংখ্যালঘু জাতির নৃত্য প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হয়েছে । তাহলে শিল্প প্রতিষ্ঠান কেন বিনা পয়সায় প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছে । এ প্রসঙ্গে কোম্পানির ম্যানেজার ওয়াং সিয়াও পু বলেন ,
ছিংহাই প্রদেশ সংখ্যালঘু জাতির নৃত্য ও সংগীতের সম্পদে সমৃদ্ধ । তার বিকাশ ঘটাতে হবে । পশু পালকদের সচ্ছলতা বাস্তবায়নের জন্য তাদের নৃত্য ও সংগীত পরিবেশনের নৈপুণ্য উন্নত করতে হবে । ছিংহাই-এর সংখ্যালঘু জাতির সাংস্কৃতিক সম্পদ উন্নয়নের পাশাপাশি পশুপালকদের কর্মসংস্থানের সুযোগও বেড়ে যাবে ।
প্রশিক্ষণের কাজ খুব সহজ নয় । প্রাদেশিক সংস্কৃতি বিভাগের নিয়মবিধি অনুযায়ী , শিক্ষার্থীদের এক মাসের মধ্যে বেশ কয়েক ধরনের নৃত্যের নৈপুণ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । অল্পবয়সীদের নৃত্য শেখানোর ব্যাপারে মঙ্গোলীয় জাতির নৃত্য শিক্ষিকা পাও কুই হুয়া অভিজ্ঞ । তিনি বলেন ,
নৃত্য শিক্ষক ও শিক্ষিকারা তাদের সহিষ্ণুতার সঙ্গে শেখান । অল্পবয়সীরা বাস্তব অনুশীলনে নৃত্য চর্চা করে এবং তাড়াতাড়ি সাফল্য অর্জন করে ।
২৪ বছর বয়স্ক তিব্বতী নৃত্য শিক্ষক সেকোং থারও মালভূমির পশু পালন এলাকা থেকে এসেছেন । কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়ার জন্য তিনি বড় শহরে গিয়েছেন এবং নৃত্য ও সংগীতের কৃতিত্বের কারণে তিনি একজন শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হয়েছেন । বর্তমানে স্থানীয় সরকার পশুপালকদের ছেলে মেয়েদের জন্য নানা রকম প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে । শিক্ষক সেকোং থার সংখ্যালঘু জাতির নৃত্যের কৌশল শেখানোর সাথে সাথে তাদের নৃত্য পরিবেশনের তত্ত্বও উন্নত করার চেষ্টা করেছেন । তিনি আশা করেন , নৃত্যকে কাজে লাগিয়ে আয় বাড়ানোর পাশাপাশি সংখ্যালঘু জাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আরো ব্যাপকভাবে প্রচার করা হবে ।
নৃত্য শেখার জন্য প্রশিক্ষণ কোর্সের শিক্ষার্থীরা শহরে এসেছে । তাদের নৃত্য পরিবেশেনের মাধ্যমে বাইরের বহু লোক তিব্বতী জাতি সম্পর্কে আরো বেশী জানতে পেরেছেন । শিক্ষার্থীরা বাইরে নিজের জাতির সংস্কৃতি ও শিল্পকলা প্রচারের জন্য গর্বিত ।
শিক্ষকদের উত্সাহে প্রশিক্ষণ কোর্সের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদী । তিব্বতী মেয়ে ছিমো সো বলেছে ,
এ পর্যন্ত তিব্বতে ৫০ হাজারেরও বেশি কৃষক ও পশুপালক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে আয় বাড়ানোর অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে । এতে তাদের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২ শো ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে । এ অভিযানের মাধ্যমে সংখ্যালঘু জাতির শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্প্রসারিত হয়েছে । এটা অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরো বিরাট ভূমিকা পালন করছে ।
(থান ইয়াও খাং)
|