কুও ওয়েন চিং হলেন চীনের আধুনিক যুগের বিখ্যাত সুর স্রষ্টা, একই সঙ্গে তিনি অনেক জনপ্রিয় সঙ্গীতের জনক। যুক্তরাষ্ট্রের 'নিউইয়র্ক টাইমস' তাকে অভিহিত করেছে 'বিদেশে বাস না করা বিশ্বখ্যাত চীনা সুর স্রষ্টা'। অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উত্সবে তার রচিত সঙ্গীতের বিশেষ কনসার্ট আয়োজন করা হয়। আজকের অনুষ্ঠানে কুও ওয়েন চিংয়ের ওপর কিছু তথ্য আপনাদের জানাবো।
সম্প্রতি কুও ওয়েন চিংয়ের রচিত অপেরা "কবি লি বাই" যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শনের পর পেইচিংয়ে এসেছে। এই অপেরা পেইচিংয়ে প্রদর্শিত হওয়ার পর একটি আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। লি বাই হলেন এক হাজার বছর আগে থাং রাজবংশের একজন বিখ্যাত কবি। প্রায় সব চীনা তার কবিতা পড়েছেন। ' কবি লি বাই' অপেরার চারটি চরিত্র আছে, লি বাই ছাড়া বাকি তিনটি হলো তার কবিতায়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সুরা, চাঁদ আর কবিতা। এই তিনটি বিষয় লি বাইয়ের কল্পনা জগতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কুও ওয়েন চিং বলেন:
"আমি মনে করি, চাঁদ হলো নারীর প্রতীক, সুরা হলো বন্ধুর প্রতীক, সুরা আর চাঁদ থাকলে কবিতা হয়। এই অপেরাটি একটু ব্যতিক্রমী। এতে শুধু লি বাই একজন মানুষ, অন্য তিনটি হলো তার জীবনের একটি অংশ। চাঁদ, সুরা আর কবিতা হলো লি বাইয়ের জীবনও তার ব্যক্তি চরিত্রের প্রতীক।"
১৯৫৬ সালে কুও ওয়েন চিং চীনের সি ছুয়ান প্রদেশে জন্মগ্রহন করেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি যখন প্রথম শোস্তাকোভিচের '১১তম সিমফোনি' শুনেছেন তখন তার যেন বিদ্যুত স্পৃষ্ট হওয়ার অনুভূতি হয়ে ছিল। তখন থেকে তার সুর স্রষ্টা হওয়ার স্বপ্ন শুরু হয়। ১৯৭৮ সালে তিনি পরীক্ষা দিয়ে পেইচিংয়ের সেন্ট্রাল কনসার্ভেটরি অব মিউজিকে ভর্তি হন। তিনি সুর স্রষ্টি বা মিউজিক কম্পোজ বিষয়ে ৪ বছর একাগ্রচিত্তে পড়াশোনা করেন। পড়াশোনা শেষ হওয়া মাত্র সঙ্গীত ক্ষেত্রে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ তাকে বলে সেন্ট্রাল কনসার্ভেটারি অব মিউজিকের সবচেয়ে প্রতিভাবান চার জন ছাত্রের মধ্যে একজন। পরের ৩০ বছরের মধ্যে তিনি বহু সঙ্গীত, অপেরা ও সিমফোনি রচনা করেছেন। তার রচিত 'শু তাও নান' সিমফোনিকে বলা হয় 'বিংশ শতাব্দীতে কোনো চীনার তৈরি চিরায়ত সঙ্গীত'। এর পাশা পাশি তিনি চীনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক জাং ই মৌ'র ছবি 'ছিয়েন লি জৌ তান চি' এবং চিয়াং ওয়েনের 'ইয়াং কুয়াং ছান লান দা রি জি' সহ ৪০টিরও বেশি চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের জন্য সঙ্গীত রচনা করেছেন।
তিনি খুব মনযোগ দিয়ে সঙ্গীত রচনার কাজ করে থাকেন। এর জন্য তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। কখনো তার স্বপ্ন শ্রম নিয়ে এতোটুকু অনুযোগ নেই। বরং তিনি তার সুর স্রষ্টা হওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য গৌরব বোধ করেন। তিনি বলেন:
"আমি সঙ্গীত বেছে নিয়েছি। খুব ছোটবেলা থেকে বেহালা শিখতে শুরু করি। তখন অনেক কষ্ট করে বেহালার বই সংগ্রহ করতাম। তারপর এসব বইকে সঙ্গীত সৃষ্টির বইতে রূপান্তর করেছি। আসলে সেন্ট্রাল কনসার্ভেটরি অব মিউজিক স্কুলের পড়াশোনা শেষ হওয়ার সময় চাকরির সুযোগ অনেক কম ছিল। কিন্তু আমি কখনো বিচলিত হই নি। কারণ এটা আমার স্বপ্ন, আমার ভাল লাগা। আমি মনে করি আমি খুব ভাগ্যবান, কারণ আমি নিজের পছন্দের কাজ করছি।"
১৯৮৭ সালে কুও ওয়েন চিং কবি লি বাই'র কবিতা 'শু তাও নান' অনুযায়ী একটি সিমফোনি রচনা করেছেন। এতে একজন পুরুষ ধুয়েধারী এবং একাধিক কায়কের কোরাসের মিশ্রন ঘটনা হয়। এই সিমফোনি পেইচিং মিউজিক হলে প্রদর্শিত হওয়ার পর খুব সমাদর পেয়েছে। সিমফোনিটি মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। এ জন্যই সিমফোনিটি 'বিংশ শতাব্দীতে কোনো চীনার রচিত চিরায়ত সঙ্গীত'-এর মর্যাদা পেয়েছে।
কুও ওয়েন চিংয়ের জন্মস্থান সি ছুয়ান প্রদেশ হলো চীনের বা শু সংস্কৃতি'র উত্স স্থান। বা শু সংস্কৃতি কুও ওয়েন চিং-এর সমৃদ্ধ সম্পদ। তিনি এখান থেকে অনেক শিখেছেন। কিন্তু তিনি মনে করেন সঙ্গীতের দেশের কল্যাণ ও জনগণের ভবিষ্যতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত। তাই তিনি যুগ ও মানুষের চাহিদার ওপরে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়ে থাকেন।
বিংশ শতাব্দীর আশি'র দশকে অনেক সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব বিদেশে পড়াশোনা করে সেখানে থেকে গেছেন। কিন্তু কুও ওয়েন চিং তা করেন নি। তিনি সেন্ট্রাল কনসার্ভেটরি অব মিউজিকে শিক্ষক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি সঙ্গীতরচনা করছেন। খুব বিখ্যাত হওয়ার পরও তিনি কিন্তু নিজের সৃজনী নীতিতে অবিচল থাকেন। তিনি বলেন:
"আমি কখন ভাবি না যে আমার সঙ্গীত অধিকাংশ মানুষের স্বাদ কিংবা সরকারের আকঙ্কার সঙ্গে মিলবে কিনা। এমনকি আমার কাজ পশ্চিমা সঙ্গীতজ্ঞদের মানদন্ড অনুযায়ী হলো কিনা তা নিয়ে আমি ভাবি না। আমি শুধু আমার পছন্দ মতো সঙ্গীত রচনা করি।"(ইয়াং ওয়েই মিং)
|