পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ ২৮ জানুয়ারি তার ৮ দিনব্যাপী ইউরোপ সফর শেষ করেছেন। সফরের আগে বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, মুশাররফের এবারের ইউরোপ সফরের প্রধান লক্ষ্য হলো পাকিস্তান সম্পর্কে ভুলবোঝাবুঝি দূর করা, ভাবমূর্তি উন্নত করা এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সমর্থন অর্জন করা। তবে এবারের সফরে তিনি কিছু সাফল্য পেলেও ইউরোপীয় দেশগুলোর সমর্থন পাওয়া তেমন সহজ নয়।
মুশাররফ ধারাবাহিকভাবে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড এবং ব্রিটেন সফর করেন এবং দাভোসে বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামে অংশ নেন। সফরের আগে ইউরোপীয় দেশগুলো পাকিস্তানের নির্বাচন, সন্ত্রাস দমন এবং পরমাণু নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশটির ওপরে চাপ দিয়ে আসছিল। সফরকালে মুশাররফ যখনই সুযোগ পেয়েছেন তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে অপর পক্ষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ পার্লামেন্ট নির্বাচন আয়োজন করবে, কোনো ধরণের অনিয়মের সুযোগ দেবে না। পাকিস্তান স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর ওপরে আঘাত আরো জোরদার করে তুলছে। সন্ত্রাস দমনে কিছু সাফল্যও এসেছে। পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা নিরাপদে আছে, সেগুলো সন্ত্রাসীদের হাতে পড়বে না, যদিও পাকিস্তান এখন কিছু সমস্যা ও ঝুঁকি'র মুখে পড়ছে। মুশাররফ ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে আরো আশাবাদী ও সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউরোপে মুশাররফ 'গণ যোগাযোগ' বাড়ানোর পাশা পাশি পাকিস্তানেও কিছু ইতিবাচক ব্যবস্থা নিয়েছেন। সম্প্রতি পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে তারা দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নিরাপত্তা জোরদার করেছে। ধারাবাহিক সামরিক অভিযানে তারা অনেক সশস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যা বা গ্রেফতার করেছে। পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে পশ্চিমা দেশের উদ্বেগ দূর করার জন্য পাকিস্তান কৌশলগত পরিকল্পনা ব্যুরো বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে বিদেশী কূটনীতিক ও সংবাদিকদের কাছে তাদের পরমাণু ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে। অন্য দিকে পার্লামেন্ট নির্বাচন নিয়ে পাকিস্তান সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপর্যুপরি বলে এসেছেন, নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য পাকিস্তান যথাসাধ্য চেষ্টা চালাবে।
ইউরোপীয় দেশসমূহ, ইইউ এবং ন্যাটোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি একটু কমেছে। ফরাসী প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে জানানো হয়েছে, ফ্রান্স অব্যাহতভাবে পাকিস্তানের সন্ত্রাস দমনকে সমর্থন করবে। পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা, সংহতি এবং গণতন্ত্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য অনুকূল । ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন মুশাররফের সঙ্গে বৈঠককালে বলেন, সন্ত্রাস ও চরমপন্থী দমনে পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন করার জন্য তিনি অন্য দেশের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করবেন।
কিছু সাফল্য পাওয়া গেলেও ইউরোপীয় দেশগুলো পাকিস্তান সরকারের প্রতি যথেষ্ট আস্থা জ্ঞাপন করেনি। সুতরাং মুশাররফের এবারের সফরের উদ্দেশ্য পুরোপুরি পূরণ হয়নি। ইইউ'র কূটনীতি ও নিরাপত্তা বিষয়ক সিনিয়র প্রতিনিধি হাভিয়ার সোলানার অবস্থানে মুশাররফ বিব্রত বোধ করেছেন। সোলানা বলেন, পাকিস্তানের পার্লামেন্ট নির্বাচনের ওপর ভবিষ্যতের সহযোগিতা নির্ভর করবে। তাছাড়া মুশাররফ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কূটনীতি কমিশন ও ন্যাটোর পরিষদ সম্মেলনে ভাষণ দেয়ার সুযোগ পান নি।
কিন্তু এবারের ইউরোপ সফর নিয়ে পাকিস্তান সংবাদ মাধ্যমগুলোর বিশ্লেষণ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমন, বিশেষ করে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি সুসংবদ্ধ করায় পাকিস্তান যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তা ইউরোপীয় দেশগুলো স্বীকার করে। সুতরাং ইউরোপীয় দেশ মুশাররফকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে না। কিন্তু তাদের সমর্থনের বিনিময় শর্ত থাকে, যেমন প্রথমত পাকিস্তানকে আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের পরিবর্তে, অর্থনীতির উন্নয়নের মাধ্যমে চরমপন্থী নির্মূলকে ভালো বিকল্প হিসেবে দেখে। (ইয়াং ওয়েই মিং)
|