v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-01-28 21:54:12    
ড. আতিক রহমানকে সাধুবাদ

cri

    আজ ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায় পরিবেশ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ডঃ আতিক রহমান জিতে নিয়েছেন জাতিসংঘের চ্যাম্পিয়নস অফ আর্থ এওয়ার্ড বা বিশ্ব পুরষ্কার ২০০৮। কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচী বা ইউএনইপি এই পুরষ্কার ঘোষণা করেছে। এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য তাঁকে এই পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে। বাকি বিশ্বের আরো ৬ জন কৃতি ব্যক্তি একই সঙ্গে এই পুরষ্কার পেয়েছেন। যার মধ্যে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্কও রয়েছেন।

    শ্রোতা বন্ধুরা আপনারা জেনে খুশী হবেন যে এই পুরস্কারের ঘোষণাটি এমন এক সময় এসেছে যখন শুরু হতে যাচ্ছে ইউএনইপি পরিচালনা পরিষদের ১০ম বিশেষ অধিবেশন। আগামী ২০ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় এ অধিবেশনে জড় হবেন সারা বিশ্বের শতাধিক মন্ত্রী। এ বছরের পরিচালনা পরিষদ জলবায়ু পরিবর্তনের জরুরি চ্যালেঞ্জের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেবেন, বিশেষ করে নিচু মাত্রায় কার্বন নির্গমন বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য তহবিল সংগ্রহ সংক্রান্ত বিষয়টির ওপর। আর এসব ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্যই ডঃ আতিক পেয়েছেন সেরা পরিবেশবিদের স্বীকৃতি। সুতরাং নিঃসন্দেহে তিনিও থাকবেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এমনটাই বলেছেন, আচিম স্টেইনার, যিনি জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল, একই সঙ্গে ইউ এন ই পি'র নির্বাহী পরিচালক। ডঃ আতিমকে পাঠানো পুরস্কারের চিঠিতে তিনি যা বলেছেন, সেটা আমরা একটু পরে শুনি। তার আগে আমরা জেনে নেই ডঃ আতিক রহমান কি ধরনের অবদান রেখেছেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার বিচরণ কতোটা জায়গা জুড়ে।

    ডঃ আতিক রহমান হলেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর এ্যাডভান্সড স্টাডিজ(বিসিএএস)-এর নির্বাহী পরিচালক এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি)-এর অন্যতম গবেষক। তিনি ইউএনসিইডি, রিও,১৯৯২, জলবায়ু পরিবর্তন অধিবেশন বিষয়ক আন্তঃসরকার আলোচনা (আইএনসি) এবং বিভিন্ন পক্ষের সকল সম্মেলন ও ১৯৯৭ সালের কিয়োটো শীর্ষ সম্মেলনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছেন। ঐ কিয়োটো শীর্ষ সম্মেলন থেকে জন্ম নিয়েছে কিয়োটো প্রটোকল। ডঃ আতিক যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট বা এনআইটি , নগর অধ্যয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগ, ক্যামব্রিজ, যুক্তরাষ্ট্রে 'টেকসই উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ কোর্সের রূপরেখা তৈরি ও বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং শিক্ষা দিয়েছেন। ডঃ আতিক বোস্টনের টাফটস ইউনিভার্সিটির ফ্লেচার স্কুল আফ ল অ্যান্ড ডিট্লোমেসি বিভাগে আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ের ভিজিটিং প্রফেসর। এখানে তিনি টেকসই উন্নয়নের ওপর দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রেক্ষিত বিষয়ক বহুমুখী স্নাতকোত্তর কোর্সের রূপকার এবং শিক্ষক। তিনি দক্ষিণ এশিয়া জলবায়ু পরিবর্তন অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (কানসা) এর চেয়ারম্যান এবং সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থা বিষয়ক সামর্থ্য উন্নয়ন কর্মসূচীর দক্ষিণ এশীয় সমন্বয়কারী। তিনি বাংলাদেশে পরিবেশবাদী এনজিও কোয়ালিশনের চেয়ারপার্সন। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সরকারের ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান অফ অ্যাকশন (নাপা) এর সিনথেসিস গ্রুপের দলনেতা।

    ড. আতিক রহমানের জন্ম ১৯৫০ সালে বাংলাদেশে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে বিএসমি(সম্মান) ও এমএসসি করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি কমনওয়েলথ বৃত্তি পান এবং লন্ডনে ব্রুনেই ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৭৭ সালে কঠিন অবস্থার রসায়ন ও নিম্ন জ্বালানি প্রক্রিয়ার ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৪—১৯৮৮ সাল পর্যন্ত টানা ১৪ বছর তিনি বৃটেনের অক্সফোর্ড ও আবেরডিন এবং ফ্রান্সের হতে আসেস-এ শিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণার কাজ করেন।

    ইউরোপে তার বর্ণাঢ্য বিজ্ঞানী জীবনে তিনি বহু শীর্ষ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম ১৯৮৪ সালে রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রির 'থারমাল মেথড গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড', ১৯৮৫ সালে লন্ডনের রাসায়নিক শিল্প সমিতির 'স্যার এরিক রিডিল অ্যাওয়ার্ড'। এ ছাড়া, ১৯৮৬ সালে জাপানের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডভান্সড সিয়ামিকস এর ওপর লেকচার দেওয়ার জন্য লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি তাকে পুরস্কৃত করে।

    ড. আতিক রহমানের কর্মযজ্ঞ এখনো চলছে। বর্তমানে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন বৈশ্বিক-স্থানীয় সংযোগ এবং প্রফান্ড প্রক্রিয়াবলী, যেমন বৈশ্বিক সমতা ও দারিদ্র ইস্যু, জলবায়ু পরিবর্তন, জীব বৈচিত্র্য, প্রতিষ্ঠান ও সামর্থ্য উন্নয়ন, বিশ্ব দৃশ্যপট এবং প্রতিবেশ ঘনিষ্ঠ জনমানুষ নিয়ে। এসব কাজের পরিধি বিস্তৃত বিশ্বব্যাপী অংশগ্রহণ ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা চর্চার মধ্যে।

    শ্রোতাবন্ধুরা, এতো বর্নীল এতো ব্যাপ্ত যার কর্মক্ষেত্র ও অবদান তিনিই যে চ্যাম্পিয়ন অফ আর্থ পুরস্কারের জন্য যোগ্য ব্যক্তি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সে কথাই বলেছেন, আচিম স্টেইনার। ড. আতিকের কাছে পাঠানো তার পুরস্কার পত্রে।

    স্টেইনার বলেছেন, টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশ এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আপনার যে অভিজ্ঞতা তাতে আপনি নিঃসন্দেহে এ ক্ষেত্রে একজন নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞ। টেকসই উন্নয়ন ইস্যুতে আপনি আপনার এনজিও বিসিএএসকে রূপ দিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিনিধিত্বশীল থিংক ট্যাংকে। পরিবেশ এবং উন্নয়নের ওপর বাংলাদেশে আপনার প্রকাশনাগুলো আপনার সহকর্মীদের জন্য এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। টেকসই উন্নয়ন এবং উত্তর দক্ষিণ সংলাপের ওপর আপনার নকশা করা স্নাতকোত্তর কোর্সটি সৃজনশীলতার অনন্য উদাহরণ।

    জলবায়ু পরিবর্তন ও বন্যাপীড়িত দেশ বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আপনার দক্ষতা পুরো অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে আমাদের সময়ের চ্যালেঞ্জকে চিহ্নিত করে এর বিপদজনক দিক সম্পর্কে আপনি যে সচেতনতা গড়ে তুলছেন তা অনন্য।

    শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা হয়তো জানেন যে, ২০০৪ সাল থেকে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচী এই চ্যাম্পিয়নস অফ আর্থ অ্যাওয়ার্ড দিয়ে আসছে। এর আগে যারা এই পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন মিখাইল গরবাচেভ, মাসুদাহ ইবতেকার, প্রিন্স হাসান বিন তালাল, আলগোর প্রমূখ। এসব বিশিষ্ট নেতাদের সঙ্গে একই কাতারে দাঁড়িয়ে এই পুরস্কার জিতে নেওয়ার জন্য আমরা সি আর আই-এর পক্ষ থেকে ড. আতিক রহমানকে জানাচ্ছি সাধুবাদ।