v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-01-25 16:43:32    
অদৃশ্য ডানা

cri
    ল্যশান একটি বুদ্ধমূর্তি নামে বিশ্ববিখ্যাত একটি প্রাচীন নগর । ২০০৭ সালের জুন মাসে প্রাচীন ল্যশান শহর আড়ম্বরপূর্ণভাবে তার এক যুবতি নাগরিক---ছোটবেলায় দুই বাহু হারানো ১৭ বছর বয়সী মেয়ে লেই ছিংইয়াওকে স্বাগত জানিয়েছে । সদ্যসমাপ্ত চীনের চলচিত্রের হুয়াবিয়াও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে " ইনসিং ত্য ছিপাং অর্থাত অদৃশ্য ডানা"শিরোনামে ছবিটি শ্রেষ্ঠ শিশু ছবি এবং শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরস্কার পেয়েছে । ছবিটি লেই ছিংইয়াওয়ের কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে রচিত এবং স্বয়ং লেই ছিংইয়াও ছবিটির নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছে । ছবিটিতে দুই বাহু হারানো মেয়েটির নিজের শক্তির ওপর নির্ভর করে সাফল্য অর্জনের গল্প বর্ণনা করা হয়েছে। লেই ছিংইয়াওয়ের অভিনয় দর্শকদের সমাদর পেয়েছে ।

    কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণকারী লেই ছিংইয়াও ল্যশান শহরের চিয়াচিয়াং মাধ্যমিক স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী । তিন বছর বয়সে হাই টেনশন ক্যাবলের ওপর থেকে ঘুড়ি নামাতে গিয়ে বিদ্যুত স্পৃষ্ট হয়ে সে চিরকালের জন্য তার দুটি হাত হারিয়েছে । সেই মর্মাহত দুর্ঘটনা তার শিশুকালের স্বপ্নের পরিবর্তন করে দিয়েছে ।

    ২০০৮ সালের প্রতিবন্ধী অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য ল্যশান শহরের দৌড়-ঝাঁপ-নিক্ষেপ দলের এক জন খেলোয়াড় হিসেবে লেই ছিংচিয়াও চলচিত্র পুরস্কার গ্রহণ করার পর জন্মস্থানে ফিরে যায় । প্রশিক্ষণ শেষ হওয়া মাত্র কোচ ল্যু সুইয়ুন খবর পেলেন যে, লেই ছিংচিয়াওয়ের অবস্থা অনুযায়ী তার স্বল্প পাল্লার দৌড় শুধু পরিবেশন-প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে । সত্যিকারভাবে জাতীয় নির্বাচিত প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চাইলে তাকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে এক নতুন ইভেন্টের প্রস্তুতি নিতে হবে । এ জন্যে যখন কোচ ল্যু চিন্তা করছিলেন ঠিক এই সময় লেই ছিংইয়াও কোচ ল্যুকে বলল, সে অনেক আগে থেকেই সাঁতার শিখতে চেয়েছিল । সে মনে করে, পানি নিজের আকাশ । পানিতে সে অবশ্যই মাছের মতো অবাধে চলাফেরা করতে পারবে । লেই ছিংইয়াওয়ের কথায় কোচ ল্যু অবাক হলেন । কারণ তিনি স্পষ্ট জানেন , সাঁতারুর বাহুর দৈর্ঘ্য ও সামর্থ্য সাঁতারুর জয়লাভের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ । বাহুবিহীন লেই ছিংইয়াও যদি সাঁতারে শিখতে চায় তাহলে তাকে কেবল কোমর ও পা'র ওপর নির্ভর করতে হবে । লেই ছিংইয়াওয়ের পক্ষে এটা একটা অত্যন্ত কঠিন কাজ ।

    অসুবিধার কথা জানার পর লেই ছিংইয়াও কোচ ল্যুকে সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানায় । সে কোচ ল্যুকে বলল, সে এখন পা দিয়ে অনেক কাজ করতে পারে, যেমন পা দিয়ে খায়, পা দিয়ে ঘরের কাজ করে ইত্যাদি । অবশেষে কোচ ল্যু তাকে সুযোগ দিতে রাজি হন ।

    কিন্তু প্রথমবারের সাঁতার প্রশিক্ষণ ব্যর্থ হল । লেই ছিংইয়াও বারবার নিজেকে জিজ্ঞেস করে, অব্যাহতভাবে প্রশিক্ষণ নিতে পারবে তো ? সে আবার নিজেকে জিজ্ঞেস করে, তার সাঁতার শিখার প্রধান কারণ কী ?

    ছোটবেলা থেকেই ছিংইয়াও বিশ্বাস করে আসছে , প্রয়াস নিলে এক দিন তার দু ডানা পুনরায় বার হবে । ছোট ছিংইয়াওয়ের মনে দুটো ডানা থাকা এবং অবাধে খেলাধুলা করা তার স্বপ্ন । তাই দৌঁড়-ঝাঁপ-নিক্ষেপ প্রশিক্ষণ হোক আর সাঁতার প্রশিক্ষণই হোক লেই ছিংইয়াও নিজের স্বপ্নের কাছে এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে । লেই ছিংইয়াও সাঁতার শেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । সে কোচ ল্যুকে বলে, সে শুধু ভাল করে সাঁতার কাটাবে তা নয়, সে অন্যান্য সাতারুকে ছাড়িয়ে যাবে । ছিং ইয়াও কোচ ল্যুকে মুগ্ধ করেছে । তিনি ছিংইয়াওয়ের জন্য কড়াকড়ি প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা তৈরী করেন । কোচ ল্যুয়ের সাহায্যে ছিংইয়াও তাড়াতাড়ি সাঁতার শিখে ফেলে ।

    পানিতে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করায় ছিংইয়াও প্রশিক্ষণের সব কষ্ট ভুলে গেছে । সাত বছর আগে ছিংইয়াও দৃঢ় মনোবল নিয়ে সাইকেল চালানো শিখতে ফেলে । তবে পানিতে সাঁতার কাটানো স্থলের সাইকেল চালানো নয় । সবাই জানে , এক বছরের কম সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্যবান লোকের পক্ষে সাঁতার অজানা কারো পক্ষে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রবেশ করা সম্ভব নয় । বাহুবিহীন ছিংইয়াওয়ের পক্ষে তো আরও দূরের কথা ।

    ১০ বছর আগের দৃশ্য ছিংইয়াওয়ের চোখের সামনে ভেসে ওঠে । নিজের সমবয়সী ছেলেমেয়েরা ব্যাগ নিয়ে স্কুলে লেখাপড়া করতে গেছে দেখে ৬ বছর বয়সী ছিংইয়াও মাকে বলল, সেও স্কুলে যেতে চায় । মা বললেন, তোমার বাহু নেই , বই পড়তে পার না , লিখতে পার না , কীভাবে স্কুলে যাবে ? যদি তুমি লিখতে পার তাহলে তোমাকে স্কুলে যেতে অনুমতি দেব । মার কথা শুনে ছিংইয়াও মনেমনে শপথ নিল যে , বাহু নেই তবে আমার পা আছে । আমি পা দিয়ে লিখতে সহ সবই কাজ করতে শিখব । এ দিন থেকে ছিংইয়াও হাতের পরিবর্তে পা দিয়ে লিখতে শুরু করল ।

    শরত্কালের পর শীতকাল এল । শীতের পর বসন্ত এল । বসন্তকালীন স্কুল টার্মের প্রথম দিন ছিংইয়াও পা দিয়ে অক্ষর লিখতে সফল হয়েছে । এর পর অন্য ছেলেমেয়ের মতো ছিংইয়াও ব্যাগ নিয়ে স্কুলে লেখাপড়া করতে পেরেছে । ছিংইয়াও মনে করে , হাতের তুলনায় তার পা কোনো পার্থক্য নেই । সাধারণ মানুষের হাতের তুলনায় তার পা অনেক নমনীয় । সে এখন পা দিয়েই তরকারী কাটাতে , রান্না করতে, সেলাই করতে এবং ছবি আঁকতে পারে । স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর ছিংইয়াও স্কুলের দৌঁড়-ঝাঁপ-নিক্ষেপ দলে যোগ দেয় এবং আধা বছর পর ল্যশান শহরের পক্ষ থেকে সিছুয়ান প্রদেশের প্রতিবন্ধী ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ৪টি রৌপ্যপদক ও ২টি ব্রোঞ্জ পদক পেয়ে অনবদ্য সাফল্য অর্জন করে।

     লেই ছিংইয়াওয়ের কাহিনী স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং স্থানীয় লোকদের তা মুগ্ধ করেছে । ছিংইয়াও সকল ছেলেমেয়েরদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে । আজ ছিংইয়াও সাঁতারে চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করছে । কোচ ল্যুকে ছিংইয়াও বলে, অক্ষর লিখতে শেখার মতো সে হাতের পরিবর্তে পা দিয়ে সাঁতারে বিষ্ময় সৃষ্টি করবে ।

    মাত্র তিন মাস পর বিষ্ময় আবার সৃষ্টি হয়েছে । লেই ছিংইয়াও সিছুয়ান প্রদেশের পক্ষ থেকে জাতীয় প্রতিবন্ধী অলিম্পিক গেমসের বাছাই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার যোগ্যতা পেয়েছে ।