চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মধ্যাংশে অবস্থিত লামুছু হ্রদ তিব্বত মালভূমির বৃহত্তম লবণাক্ত হ্রদ । এ হ্রদ বিশ্বের এমন একটি লবণাক্ত হ্রদ , যার উচ্চতা সমুদ্র-সমতলের তুলনায় অনেক উঁচুতে । তিব্বতী ভাষায় 'ছু' মানে হ্রদ । তিব্বতীদের জন্য লামুছু হ্রদ হচ্ছে পবিত্র হ্রদ । তীর্থস্থান হিসেবে এ হ্রদটি একবার ঘুরে বেড়ালে মানুষের জন্য অজস্র উপকার হবে । ফলে মানুষ জীবনে দুর্যোগের কবল থেকে মুক্তি পাবে । সুতরাং তিব্বতীদের সারা জীবনে এখানে কমপক্ষে একবার হলেও ঘুরে দেখতে হয় ।
লামুছু হ্রদের বিস্ময়কর পরিবেশ ও সুন্দর রূপ -কথা প্রচুর পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে । এখন আরো বেশি পর্যটক এ হ্রদ ভ্রমণে আসেন । পর্যটন শিল্প দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে । সুতরাং বেশ কিছু পশুপালক পর্যটন ব্যবসার জন্য পশুপালন ত্যাগ করেছেন । তিব্বতী তরুণ কংচুছিতা তাদের মধ্যে একজন ।
নামুছু হ্রদের ধারে কংচুছিতার সঙ্গে সংবাদদাতার দেখা হয় । যখন সংবাদদাতা হ্রদের বিস্তীর্ণ ও স্বচ্ছ পানি উপভোগ করছেন , তখন একজন তরুণ একটি তিব্বতী ষাঁড় নিয়ে তার সামনে এলেন । তরুণটি চীনের স্ট্যান্ডার্ড ভাষা-ফুথুংহুয়া ভাল বলতে পারেন । তিনি পর্যটকদের জন্য ছবি তোলার ব্যবসা করেন । তরুণটি লম্বা , স্বাস্থ্যবান ও সুদর্শন , নিছক তিব্বতী লম্বা পোষাক পরেছে । সারা বছর পাহাড়ী এলাকায় থাকার দরুণ তার মুখ প্রগাঢ়লাল বর্ণের । মুখের দুই পাটির দাঁত দারুণ সাদা , চকচকে । তরুণটি ও তার পরিবার পরিজনরা আগে নামুছু হ্রদের উত্তরাংশের ছাংথাং তৃণভূমিতে থাকতো এবং পশু পালন করতো । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নামুছু হ্রদ ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে । পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকার পশুপালকদের উত্সাহ দিচ্ছে। সুতরাং তিনি বাড়ি থেকে একটি তিব্বতী ষাঁড় নিয়ে এসেছেন । তিনি পর্যটকদের জন্য ছবি তোলার ব্যবসা করছেন ।
নামুছু হ্রদের স্বচ্ছ পানি ও আশেপাশের তুষার পাহাড় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে । তিব্বতী জাতির পোষাক পরা এ তিব্বতী তরুণ এবং গায়ে রঙ বেরঙের ঘন্টা বাঁধা তিব্বতী ষাঁড় পর্যটকদের মনোযোগকে আরো আকর্ষণ করছে । পর্যটকদের পক্ষে হ্রদের ধারে ছবি তোলা খুবই প্রয়োজন । তরুণটি সংবাদদাতাকে বলেন , প্রতি বছর মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত হ্রদ ঘুরে দেখার জন্য ভালো সময় । বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকরা নামুছু হ্রদ ভ্রমণে আসেন । তখন ছবি তোলার ব্যবসার কাজে তিনি প্রতি দিন হ্রদের ধারে আসেন । তিব্বতী ষাঁড়ে চড়ে ছবি তোলার জন্য পর্যটকরা দশ ইউয়ান ফি দেন । দিনে তিনি ২ শো ইউয়ানেরও বেশি আয় করতে পারেন । এ ধরনের আয় শহরের কর্মকর্তাদের চেয়ে আরো বেশি । তিনি বলেন , সরকার নামুছু হ্রদের পশুপালকদের জন্য স্থায়ী বাড়ি নির্মাণ করেছে , তাদেরকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়েছে । পশুপালকদের গৃহহারা জীবনযাপন করতে হয় না । পর্যটনের ব্যবসা শুরু করার পর তারা বেশি আয় করতে পারছেন ।
পর্যটন মৌসুমে কংচুছিতা দিনে ২ শো ইউয়ান আয় করেন । সব মিলিয়ে তার মাসিক আয় ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার ইউয়ানে দাঁড়ায় ।
তিনি সংবাদদাতাকে বলেন , আগে পশুপালকদের আয় প্রধানতঃ পশুপালনের ওপর নির্ভরশীর ছিল । বাড়িতে কত তিব্বতী ষাঁড় ও ছাগল ছিল , এটা তাদের একমাত্র আয়ের উত্স । এখন পর্যটনের ব্যবসা স্থানীয় অধিবাসীদের আয়ের প্রধান উত্স হয়ে দাঁড়িয়েছে । শীতকালে পর্যটক কম । তখন পশুপালকরা পশু পালনের জন্য আবার তৃণভূমিতে ফিরে যায় ।
প্রতি দিন ভোর হতে না হতেই কংচুছিতা ঘোড়ায় চড়ে রওয়ানা হয়ে যান । বাড়ি থেকে লামুছু হ্রদে যেতে প্রায় দু'ঘণ্টা লাগে । হ্রদের ধারে পৌঁছে তিনি প্রথমে তিব্বতী ষাঁড় পোষেন । তিব্বতী ষাঁড় কংচুছিতার সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গী । তিব্বতী ষাঁড় সাদা বর্ণের । সাদা তিব্বতী ষাঁড় বিরল । ১০ হাজারের মধ্যে মাত্র একটি পাওয়া যায় । সুতরাং কংচুছিতা তাকে দারুণ আদর করেন । তিব্বতী ষাঁড়কে খাওয়ানোর পর কংচুছিতাই তার ছবি তোলার ব্যবসা শুরু করেন । দুপুরে তিনি বাসা থেকে নিয়ে আসা 'চামবা' নামে তিব্বতীদের প্রিয় প্রধান খাদ্য, পিঠা ও মাংস খান । মাঝে মাঝে তিনি পাশের একটি চায়ের দোকানে বসে মাখন চা খান । সন্ধ্যা পাঁচ ছ'টায় ছিতাই-এর কাজ শেষ । তিনি ঘোড়া চড়ে বাড়ি ফিরে যান । পর্যটকদের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য ব্যবহার্য তিব্বতী ষাঁড় সুশিক্ষিত । দিনের বেলায় পর্যটকরা তাদের চড়ে ঘুরে বেড়ান । রাতে তারা হ্রদের ধারে শুয়ে থাকে । পরের দিন মালিক আসার পর তারা আবার কাজ করবে।
ছিতাই নামুছু হ্রদের ধারে তিন বছরেরও বেশি সময় পর্যটনের ব্যবসা করেছেন । পর্যটকদের সঙ্গে আরো ভালভাবে মত বিনিময় করার জন্য তিনি হান ভাষাও শিখেছেন । তারা এখন পর্যটকদের সঙ্গে ভাল হান ভাষায় কথাবার্তা বলতে পারেন । তিনি শহরবাসীদের জীবনযাপনের প্রশংসা করেন । কিন্তু তিনি মনে করেন , তার এখনকার জীবনযাপন খুবই ভাল ।
লামুছু হ্রদ তিব্বতীদের সুখ ও সৌভাগ্যের প্রতীক । তিব্বত মালভূমিতে প্রতি দিন তুষার পাহাড় , তৃণভূমি ও তিব্বতী ছাগল দেখা যায় । তারা খুব খুশি । তারা মনে করেন , এটাই তাদের স্বর্গ ।
ছিতাই বলেন , লামুছু হ্রদ তিব্বতের তিনটি বড় হ্রদের মধ্যে প্রথম । তিব্বতীদের মনে তার মর্যাদা অসীম ।
পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন স্থানীয় অর্থনীতির জন্য লক্ষণীয় অর্থনৈতিক সফলতা বয়ে এনেছে । এখন হ্রদের ধারে বৈচিত্র্যময় তাবু , রেস্তোরাঁ , হোটেল ও চায়ের দোকান গড়ে উঠেছে । ২০০৬ সালে ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ চালু হওয়ার পর আরো বেশি পর্যটক তিব্বত ভ্রমণে এসেছেন । ছিতাই বলেন ,
রেলপথ চালু হওয়া এবং প্রচুর পর্যটক তিব্বত ভ্রমণে আসায় তিব্বতীরা আনোক সচ্ছল হয়ে উঠেছেন । তৃণভূমিতে বসবাসকারীরা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের জন্য আরো ভালভাবে সেবা প্রদান করবেন ।
(থান ইয়াও খাং)
|