রোং সিয়াং-এর পুরোনো সড়ক দিয়ে বের হয়ে পশ্চিম দিকের একটি সরু গলি ধরে রোং সিয়াং সি বাং-এ পৌঁছানো যায়। আসলে রো সিয়াং সি বাং ছিল রোং সিয়াংয়ের মানুষের নৌকা করে শহর বা অন্য জায়গায় যাওয়ার জাহাজঘাট। সাবেক চিয়ান নান বিশ্ববিদ্যালয়ের রোং বংশ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ছেং ওয়েন ইউয়ান বলেছেন—
সে বছর জাতীয় শিল্পপতি রোং চোং চিংও, রোং দে শেং ভাতৃদ্বয় এখান থেকে নৌকা করে বের হয়েছিলেন। সাংহাই-এ যেতে তাদের দু'দিন দু'রাত সময় লেগেছিল।
রোং সিয়াং সি বাং-এর রোং সিয়াং কেন্দ্রীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯১৫ সালে নির্মিত 'ছিং ইয়ু' খেলার মাঠ আছে। এর আয়তন প্রায় ৪শ' বর্গমিটার। এটা হচ্ছে রিইনফোর্সড কনক্রিট দিয়ে তৈরি দোতলা স্থাপত্য। এর নিচের তলা মিলনায়তন অথবা খেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। উপর তলা শুধুই খেলাঘর হিসেবে ব্যবহারের জন্য। 'ছিং ইয়ু' খেলা ঘরের অর্থ হচ্ছে রোদ বা বৃষ্টির মধ্যে খেলা চালানোর স্থান। এটা দেখতে একটি বিরাট প্যাভিলিনের মতো এবং চার দিকের স্তম্ভের ওপর ছাদ, কিন্তু কোনো দেয়াল নেই। রোং ইয়াও সিয়াং বলেছেন, এই 'ছিং ইয়ু' খেলা ঘর হচ্ছে জাপানী রীতির স্থাপত্য। এর স্থাপত্য নকশা চীনের আধুনিক সময়ের বিখ্যাত জলসেচ বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদ হু ইয়ু রেনের হাতে তৈরি। এটা হচ্ছে চীনের একমাত্র পুরনো ইনডোর স্টেডিয়াম যেটি এখনও ব্যবহার হচ্ছে।
হু ইয়ু রেন জাপানে লেখাপড়া করেছিলেন। সেখান থেকে তিনি এই নমুনা নিয়ে এসেছিলেন। সমীক্ষা থেকে জানা যায়, চীনদেশে মাত্র দুটি ছিং ইয়ু খেলা ঘর নির্মিত হয়েছিল। একটি ছিল পেইচিং নর্মাল ইউনিভার্সিটিতে। কিন্তু সেটা ভেঙে গেছে। আমাদের এটা এখনও ভালোভাবে সংরক্ষিত এবং ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা হচ্ছে একমাত্র ছিং ইয়ু খেলার ঘর যেটা ভালোভাবে টিকে আছে।
রোং সিয়াং-এ আরেকটি জায়গা রয়েছে যেটি খুব মূল্যবান। এটি দেশপ্রেশিক ও শিল্পপতি রোং দে শেং-এর তৈরি করা তা কোং গ্রন্থাগারের পুরনো ঠিকানা। ১৯১৫ সালে তা কোং গ্রন্থাগারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯১৬ সালে সেটি চালু হয়। এটি একটি দো'তলা বর্গাকার স্থাপত্য। দেখতে চীন ও পাশ্চাত্য রীতির মিশ্রন। দেয়ালের রঙ সাদা এবং স্তম্ভের রঙ ধূসর। ঐতিহাসিক অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, রোং দে শেং ও তার ভাই দু'জনই গ্রন্থাগার নির্মাণে অঢেল টাকা ঢেলেছিলেন। গণ কল্যান স্কুল এবং তা কোং গ্রন্থাগার এই দুটি প্রকল্পে তারা তত্কালীন ১০ লাখ রৌপ্যমুদ্রা ব্যয় করেছিলেন। সুতরাং তা কোং গ্রন্থাগার উ সি শহরের সবচেয়ে বৃহত্, প্রভাবশালী এবং পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ছিল। ১৯২১ সালে এই গ্রন্থাগারে ১ লাখ ১৭ হাজারেরও বেশি বই ছিল। ১৯৫২ সালে যখন রোং দে শেং মারা যান, তার আগেই করে রাখা উইলে তিনি তা কোং গ্রন্থাগারের সকল বই উ সি শহরের গ্রন্থাগারকে দান করে যান। অধ্যাপক ছেন ওয়েন ইউয়ান বলেছেন, রোং দে শেং-এর নির্মিত তা কোং গ্রন্থাগারে সামাজিক শিক্ষার ধারণা প্রতিফলিত হয়েছে। সে সময়ের জন্য এটা খুবই মূল্যবান। তিনি বলেছেন—
গ্রন্থাগার হচ্ছে সামাজিক পরিপূরক। তিনি বলেছিলেন, অনেক দরিদ্র ছেলেমেয়ে স্কুলে যেতে পারে না। তারা গ্রন্থাগারে এসে বই পড়তে পারে। সুতরাং তাদের পড়ার জন্য আমি বই কিনেছি। যে কেউ এখানে আসতে পারে। গ্রন্থাগারে অনেক বই আছে এবং বইগুলো খুব মূল্যবান।
শ্রোতা বন্ধুরা, শহরের আধুনিক নির্মাণ কাজের সময় পুরোনো আকার অনেকটাই বদলে গেছে, তবে অতীতের কিছু স্মৃতি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। রোং সিয়াং এর মধ্যে একটি। আমরা গভীরভাবে অনুভব করেছি প্রাচীন রোং সিয়াং নগর ইতিহাস ও সংস্কৃতি, স্মৃতি ও রক্তের সঙ্গে সম্পর্কিত। জ্ঞান ও সুন্দর সবকিছু এ সব প্রাচীন স্থাপত্যে মেশানো হয়েছিল।
এখন আমি প্রাচীন রোং সিয়াং নগরে বেড়াতে যাওয়ার জন্য আপনাদেরকে কয়েকটি টিপস দিচ্ছি। প্রাচীন রোং সিয়াং নগর আজকের উ সি শহরের পশ্চিম দিকে ও বিন হু এলাকায় অবস্থিত। এর উত্তর দিকে হচ্ছে লিয়াং সি পথ পূর্ব দিক হোং ছিয়াও পথ এবং পশ্চিম লিয়াং হু পথ। এর আয়তন এক বর্গকিলোমিটারের কম। উ সি শহরের পরিবহন ব্যবস্থা খুব উন্নত। ট্রেন, গাড়ি ও বিমান সব যানবাহনেই এখানে যাওয়া যায়। আপনাদের নিজের সুবিধা মতো যানবাহন বাছাই করতে পারেন।
যদি আপনাদের ইচ্ছা থাকে, আপনারাও প্রাচীন রোং সিয়াং নগর নিজ চোখে দেখে অনুভব করতে পারবেন। আজকের 'চলুন বেড়িয়ে আসি' অনুষ্ঠান এখানই শেষ করছি। শোনার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আগামীতে আবার দেখা হবে অন্য কোন দর্শনীয় স্থান থেকে।
|