v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-01-24 19:30:39    
মালভূমির হ্রদ – তিয়ানছি হ্রদের সংরক্ষক চাং চেং সিয়াং

cri

    দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইয়ুন নান প্রদেশের কৃষক চাং চেং সিয়াং বিশ বছর ধরে সচেতনভাবে মালভূমির হ্রদ –তিয়ানছি হ্রদ সংরক্ষণের চেষ্টা করে আসছেন । তিনি ইতোমধ্যেই একজন প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞে পরিণত হয়েছেন । তার প্রভাবে আশেপাশের গ্রামবাসীরাও পরিবেশ সংরক্ষণ অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ।

    চাং চেং সিয়াং দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইয়ুন নান প্রদেশের রাজধানী খুন মিং শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত ফু শান গ্রামে থাকেন । এ ছোট গ্রামটি ঠিক তিয়ান ছি হ্রদের কাছেই অবস্থিত। এ হ্রদ চীনের ষষ্ঠ বড় মিঠাপানির হ্রদ । এর আয়তন ৩ শ' বর্গকিলোমিটারেরও বেশি । তিয়ান ছি হ্রদ চীনের ইয়ুন নান-কুই চৌ মালভূমির মুক্তা বলে পরিচিত ।

    তিয়ান ছি হ্রদ একটি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান । পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকদের কৃষি ও মত্স উন্নয়নও এ হ্রদের ওপরও নির্ভর করে । তবে গত শতাব্দির সত্তরের দশকের শেষ দিক থেকে তিয়ান ছি হ্রদের পানি দূষিত হতে থাকে । নব্বইয়ের দশকে দূষণ গুরুতর হওয়ায় তিয়ান ছি হ্রদের প্রাতৃকিক পরিবেশ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় । বহু প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে যাচ্ছিল । অতীতে তিয়ান ছি হ্রদের পানি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছিল । কিন্তু এখন পানি ময়লা হয়ে গেছে । এ দৃশ্য দেখে চাং চেং সিয়াং অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছিলেন । ১৯৮০ থেকে ৩১ বছর বয়সের চাং চেং সিয়াং স্বতস্ফুর্তভাবে তিয়ান ছি হ্রদ সংরক্ষণের তত্পরতা শুরু করেন । তিনি বলেন ,

    আমি নিছক তিয়ান ছি হ্রদের পানি সংরক্ষণের চেস্টা করি নি । বরং আমি এ হ্রদের উত্পত্তি থেকেই সংরক্ষণের কাজ করে আসছি । তিয়ান ছি হ্রদ ভূগর্ভস্থ বিশাল নদনদী নিয়ে গঠিত বলে আমি উত্পত্তি , পশ্চিম পাহাড় ও এ হ্রদের ভূগর্ভস্থ নদনদীর ওপর বিশেষ নজর রেখেছি ।

    তিয়ান ছি হ্রদ সংরক্ষণের লক্ষ্যে চাং চেং সিয়াং বহু সময় নিয়ে গবেষণামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন । তার কাঁচা ঘর নানা ধরণের বইপুস্তক , ডিজাইন করা কাগজ ও খবরের কাগজে ভরা রয়েছে । এগুলোর অধিকাংশই তিয়ান ছি হ্রদ সংরক্ষণের সংগে জড়িত । এসব জিনিস চাং চেং সিয়াংয়ের তিয়ান ছি হ্রদ সংরক্ষণের একটি ভিত্তি । তিনি বেশি সময় ব্যয় করেন পাহাড়ে পাহাড়ে ও হ্রদের আশেপাশে । তার প্রধান কাজ হচ্ছে তিয়ান ছি হ্রদ দূষণ করার তত্পরতা এবং পশ্চিম পাহাড়ে পাথর উত্তোলনে বাধা দেয়া ।

    গত শতাব্দির আশি ও নব্বইয়ের দশকে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ শব্দটি জনসম্মুখে আসে নি । পরিবেশ সংরক্ষণের সচেতনতা তো আরো দূরের কথা । যখন চাং চেং সিয়াং নিজের বাড়ির কাজ না করে পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন , তখন তার আপনজন ও প্রতিবেশীরা কেউই বুঝতেন না । তার স্ত্রী তাকে মানা করার চেষ্টা করলেন । এতে কোনো ফল না পাওয়ায় তিনি তাকে ছেড়ে চলে গেলেন । তার প্রতিবেশীরাও সবসময় তার সংগে মেলামেশা করতে চাইতেন না । চাং চেং সিয়াংয়ের বারংবার বাধা দেয়ায় পশ্চিম পাহাড়ের পাথর উত্তোলন কারখানার অর্থনৈতিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয় । এর জন্যে এ কারখানার শ্রমিকরা তাকে অনেক গালিগালজ দিয়েছিলেন । একদিন এ পাথর উত্তোলন কারখানায় ফটো তোলার সময় এক গাড়ির দুর্ঘটনায় তার ডান হাত অকেজো হয়ে যায় । তাসত্ত্বেও চাং চেং সিয়াংয়ের তিয়ান চি হ্রদ সংরক্ষণের সংকল্প দমে নি । তিনি বলেন ,

    যদি কেউ এ পরিবেশ দূষণের তত্পররতায় বাধা না দেয় , তাহলে আমাদের সমাজে আর সামঞ্জস্য থাকবে না । তাই অন্যরা এ কাজ না করলেও আমাকে করতে হবে । কেন না , প্রকৃতি না থাকলে জীবনও থাকবে না । প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ না থাকলে , সবকিছু থাকবে না । এটি আমার ধারণা ।

    গত কয়েক বছরে চীন সরকার টেকসই উন্নয়নের নীতি অনুসরণ করে ব্যাপক পর্যায়ে পরিবেশ সংরক্ষণের প্রচার করে আসছে । ফলে পরিবেশ সংরক্ষণের সচেতনতা জনমনে বদ্ধমূল হচ্ছে । এতে চাং চেং সিয়াং বিশেষভাবে আনন্দিত । ২০০৩ সালের ৮ আগস্ট পশ্চিম পাহাড়ে অবস্থিত ৫৬টি বড় ও মাঝারি ধরণের পাথর উত্তোলন কারখানা , রাসায়নিক কারখানা , রাসায়নিক সার কারখানা ও চুন তৈরির কারখানাকে বন্ধ করে দেয়া হয় । অতীতে যারা চাং চেং সিয়াংয়ের তিয়ান ছি হ্রদ সংরক্ষণের তত্পরতা সম্পর্কে বুঝতেন না , এমন কি তার বিরোধিতা করেছিলেন , তারা এখন তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন । চাং চেং সিয়াং বলেন ,

    এখন আরো বেশি সংখ্যক লোক আমাকে বুঝতে পেরেছেন । তাদের মধ্যে পাথর উত্তোলন খনির মালিকও রয়েছেন । তারাও আমার তত্পরতাকে সমর্থন করতে শুরু করেছেন ।

    প্রাকৃতিক পরিবেশ সংক্ষণের জন্যে চাং চেং সিয়াং নিজের আবাদী জমিতেও গাছ লাগিয়েছেন । তার মেয়েও তাকে অনুকরণ করে নিজের আবাদী জমিতে গাছ লাগিয়েছেন । তার বড় মেয়ে চাং সিউ ইং বলেন , তিনি এখন বাবার তত্পরতা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন । তাই তিনি বাবাকে সমর্থন করেন । তিনি বলেন ,

    আমরা সবাই তাকে সমর্থন করি । তিনি সবসময় পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে ব্যস্ত । তার কিছু ঋণও আমরা তার পক্ষ থেকে শোধ করি । এখন আমরা তার আচরণ উপলব্ধি করতে পেরেছি । সরকারও তাকে সমর্থন করছে ।

    পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে চাং চেং সিয়াং এখন একজন বিখ্যাত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন । গ্রামবাসী কোথাও পরিবেশ দূষণের ঘটনা দেখলে সবসময় তার কাছে আসেন ।

    চাং চেং সিয়াং রোজ সকাল সাড়ে ৭টায় বাড়ি থেকে বের হন এবং তিয়ান ছি হ্রদ ও পশ্চিম পাহাড় ঘুরে ঘুরে দেখেন । রাত ৮ বা ৯টায় তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন । তিনি সারাদিন অবিরামভাবে হাটতে থাকেন । সাধারণত তিন মাসের মধ্যে তার একটি জুতো নষ্ট হয়ে যায় । এখন চাং চেং সিয়াংয়ের বয়স ষাটের কাছাকিছি । তার এখনকার একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে তিয়ান ছি হ্রদে আগেকার রূপ দেয়া । তিনি বলেন ,

    আমার ছোটবেলায় তিয়ান ছি হ্রদে সবখানেই সবুজের ছড়াছড়ি ছিল । তখন এ হ্রদে মাছ ও নানা ফুলের প্রাচুর্য্য ছিল । সেসময় সহজে হাত ও পা দিয়ে মাছ ও চিংড়ি ধরা যেতো । আমার প্রত্যাশা হচ্ছে পশ্চিম পাহাড়কে আরো সবুজ করে তোলা এবং তিয়ান ছি হ্রদের পানি আরো পরিচ্ছন্ন করে তোলা ।

    একজন বেসরকারী পরিবেশ সংরক্ষণকারী হিসেবে চাং চেং সিয়াং খুন মিং তিয়ান চি হ্রদ পরিচালনা ব্যুরোর সংগে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা করে আসছে । ১৯৮৫ সালের পর চীনের কেন্দ্রীয় সরকার ও ইয়ুন নান প্রাদেশিক সরকার তিয়ান ছি হ্রদ দূষণ রোধের লক্ষ্যে ৪ বিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ করেছে । এতে তিয়ান ছি হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনতি কার্যকরভাবে প্রশমিত হয়েছে । সম্প্রতি খুন মিং পৌর সরকার " তিয়ান ছি হ্রদ পরিচ্ছন্ন হলে , খুন মিংয়ের উন্নয়ন সম্ভব" – এ শ্লোগান উত্থাপন করেছে এবং এ হ্রদের দূষণ রোধের জন্যে নানা ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছে । ২০০৫ সালে চাং চেং সিয়াং চীনের দশজন সেরা বেসরকারী পরিবেশ সংরক্ষণকারী ব্যক্তিদের একজন নির্বাচিত হয়েছেন ।