চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রধান সিয়ে ফু চান বলেন , ২০০৭ সালে চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে । তবে তিনি এটাও স্বীকার করেছেন যে চীনের অর্থনীতি উন্নয়নের ধারায় অতিরিক্ত উত্তাপের ঝুঁকি এখনও রয়েছে । এ ঝুঁকি দূর করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে ।
২৪ জানুয়ারী রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য কার্যালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত একটি সংবাদ ব্রিফিংয়ে সিয়ে ফু চান এ কথা বলেছেন । তিনি আরো বলেন , সার্বিকভাবে বলতে গেলে ২০০৭ সালে অর্থনীতি উন্নয়ন ভাল । অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল , অর্থনৈতিক অবকাঠামো আরো যুক্তিযুক্ত হয়েছে , শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা বেড়েছে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে ।
প্রাথমিক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , গত বছর চীনের জি ডি পির মোট মূল্য ২৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে। এটা ২০০৬ সালের চেয়ে ১১.৪ শতাংশ বেশি এবং ১৯৯৫ সালের পর সবচেয়ে বেশি । গত বছর চীনে স্থাবর সম্পদ খাতে বিনিয়োগ ২৪.৮ শতাংশ বেড়েছে । কৃষি , শিল্প ও সেবা শিল্পের উন্নয়ন দ্রুততর হয়েছে । ১৯৮৫ সালের পর চীনের খাদ্যশস্য উত্পাদন প্রথম বারের মতো টানা চার বছর বৃদ্ধি পেয়েছে ।
অর্থ-বিনিয়োগ গত দু বছরে চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ । সিয়ে ফু চান বলেন , গত বছর বিদেশে বিনিয়োগ বেশি ছিল । এ বছর চীনে অভ্যন্তরীন চাহিদা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে । বর্তমানে চীনের অর্থনীতিতে অভ্যন্তরীন চাহিদার ভূমিকা যথেষ্ট নয় । তিনি বলেন , বিনিয়োগ ও অভ্যন্তরীন চাহিদার মধ্যে অভ্যন্তরীন চাহিদার অনুপাত আরো বাড়াতে হবে । প্রধানতঃ বিদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতি বৃদ্ধির পরিবর্তে দেশের অভ্যন্তরীন চাহিদা বাড়ানো বেশি জরুরী ।
অভ্যন্তরীণচাহিদা বাড়ানোর জন্য স্থিতিশীল দ্রব্যমূল্য বজায় রাখা একান্ত প্রয়োজন । দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণেই অভ্যন্তরীন চাহিদা কমেছে । গত বছর চীনের খাবারের মূল্য ১২.৩ শতাংশ বেড়েছে । পেইচিংয়ের নাগরিক ছাই হোং সাংবাদিককে বলেন খাবারের দাম অনেক বেড়েছে । দুধ , ফল , শব্জি ও মাংসের দাম একাধিক বার বেড়েছে । সুপার মার্কেটে আমি দেখেছি খাবারের দাম প্রতি দিনই বাড়ছে । গত দু মাসে বসতবাড়ীর দাম কিছুটা কমেছে , তবুও এ দাম আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় ।
চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নের আরেকটি কারণ হলো অতিরিক্ত অনুকূল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত । গত বছর চীনের অনুকূল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল ২৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার , এটা ২০০৬ সালের চেয়ে ৮৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি । এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য চীন সরকার কিছু পণ্যের রপ্তানি কর ফেরত সুবিধা বাতিল করেছে এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে বিদেশে বিনিয়োগ করতে উত্সাহ দিচ্ছে ।
চীনের অর্থনীতির অতিরিক্ত উত্তাপের ঝুঁকি দূর করা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকার ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিয়েছে । যেমন কিছু রপ্তানি পণ্যের ওপর কর আদায় , গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম আমদানির সময় আমদানি কর কমিয়ে দেয়া ইত্যাদি । গত বছর চীন দশ বার ব্যাংকগুলোর রিজার্ভ ফান্ডের অনুপাত বাড়িয়ে দিয়েছে এবং ছয়বার ব্যাংকের সুদ বাড়িয়েছে।
২০০৮ সালের অর্থনীতি উন্নয়ন সম্পর্কে সিয়ে ফু চান বলেন , বিশ্ব অর্থনীতির নিম্নমুখী প্রবণতার প্রভাবে এবছর চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম হবে , তবে বৃদ্ধিহার ১০ শতাংশের কম হবে না । বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাবে চীনের শেয়ার বাজারও কিছু অবনতি ঘটবে । এ বছর পন্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ একটি বড় সমস্যা হয়ে দাড়াবে । চীন সরকার এ সমস্যাকে সরকারের সামষ্টিক নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে গ্রহণ করেছে।
|