চীনের জাতীয় পরিবেশ সংরক্ষণ অধিবেশন ২২ ও ২৩ জানুয়ারী পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে । এ অধিবেশনে পরবর্তী কয়েক বছরের পরিবেশ সংরক্ষণের পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে । অধিবেশন সূত্রে জানা গেছে , দূষন প্রতিরোধ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য চীনের পরিবেশ বিভাগ সতর্কতার সঙ্গে আরো কড়া ব্যবস্থা নেবে ।
চীন সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে ২০১০ সালে চীনের প্রধান প্রধান দূষিত পদার্থের নির্গমন ২০০৫ সালের চেয়ে ১০ শতাংশ কম হবে । চীনের জাতীয় পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক চৌ শেন সিয়েন অধিবেশনে বলেছেন , গত দু বছরে চীনের পরিবেশ সংরক্ষণ কাজের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে । এটা সরকারের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে মজবুত ভিত্তি স্থাপন করেছে । তিনি বলেন , গত দু বছরে দেশের ৪৫শতাংশ তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রে সালফার ডাই অক্সাইডদূরীকরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । সারা দেশের শহরাঞ্চলে ৬০ শতাংশ দূষিত পানি প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে । চীনে প্রধান দুটি দূষিত পদার্থ হলো সালফার ডাই-অকসাইড ও ক্যামিকাল অক্সিজেন ডিমান্ড । ২০০৭ সালে এ দুই প্রধান দূষিত পদার্থের নির্গমন প্রথমবারের মতো কমানো হয়েছে ।
জানা গেছে , গত বছরের তৃতীয় চতুর্থাংশে সালফার ডাই -অক্সাইডের নির্গমণ ২০০৬ সালের একই সময়ের চেয়ে ১.৮১ শতাংশ কমেছে , ক্যামিকাল অক্সিজেন ডিমান্ডের নির্গমন ০.২৮ শতাংশ কমেছে। গত বছরের প্রথম দিকে চীনের এ দুটি প্রধান দূষিত পদার্থের নির্গমন এক সময় বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছিল । এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চীনের পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগ পানি , বায়ু ও মাটির দূষণ কমানোকে প্রাধান্য দিয়ে অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে । চীন সরকার পরিবেশ রক্ষার জন্য বিদ্যুত , ইস্পাত , তেল ও রসায়ন শিল্পসহ ১৩টি জ্বালানী ক্ষয়কারীও উচ্চ নির্গমন মাত্রার শিল্পের জন্য দূষন কমানোর মানদন্ড নির্ধারণ করেছে এবং এ মানদন্ড লংঘনকারী কিছু নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন বন্ধ করে দিয়েছে । এর পাশাপাশি সরকার পানীয় জনের উত্স অঞ্চল , শিল্প উন্নয়ন অঞ্চল এবং সীসা ও কাগজ তৈরী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ সমস্যা নিরসনের ব্যবস্থা নিয়েছে। এ সব ব্যবস্থা দূষিত পদার্থের নির্গমণ বৃদ্ধির প্রবণতা কার্যকরভাবে রোধ করেছে । চৌ সেন সিয়েন আরো বলেন , উত্তর -পূর্ব চীনের সোনহুয়া নদীর অববাহিকা অঞ্চল ও তিন গিরিখাতের জলাধার অঞ্চলের দূষণ প্রতিরোধের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শিগগির শুরু হবে । হলুদ নদীর মধ্য ও নিম্ন অববাহিকার দূষণ প্রতিরোধ পরিকল্পনা প্রণয়ণও সম্পন্ন হয়েছে ।
একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , ২০০৬ ও ২০০৭ সালে সরকার পরিবেশ সংরক্ষণে মোট ৫৫৬ বিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ করেছে ।
চৌ সে সিয়েন মনে করেন , বর্তমানে চীনের দূষণ সমস্যা এখনও গুরুতর । দেশের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ শহরের বায়ুর মান ভালো নয়। বিশেষ করে কিছু বড় ও মাঝারী শহরে বায়ুর দূষন বাড়ছে । দূষন শহর থেকে পল্লী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতাও রোধ করা হয় নি ।
এ বছরের কর্তব্য সম্বন্ধে চৌ সেন সিয়েন বলেন , এ বছর পানীয় জলের উত্স অঞ্চলের পরিবেশ সংরক্ষণ জোরদার করা হবে । এ বছরের শেষ নাগাদ ১১৩টি শহরের পানীয় জলের মান নির্দিষ্ট স্তরে উন্নীত হবে। এর পাশাপাশি চীনের সালফার ডাই-অক্সাইডের নির্গমন ৬ শতাংশ এবং ক্যামিকেল অক্সিজেন ডিমান্ডের নির্গমণ ৫ শতাংশ কমানো হবে । এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য এ বছর কিছু ছোট তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র ও ইস্পাত কারখানা বন্ধ করা হবে ।
অলিম্পিক গেমস চলাকালের বায়ুর মান নিশ্চিত করার জন্য কিছু দূষণ সৃষ্টিকারী নির্মান স্থান ও শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরিত হবে , শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর পুরনো সরঞ্জাম বাতিল করা হবে এবং গাড়ী থেকে নির্গমণের মানদন্ড কড়াকড়িভাবে কার্যকর করা হবে ।
|