২২ জানুয়ারী ইরানের পরমাণু সমস্যা সম্পর্কে ছ'দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন বার্লিনে শেষ হয়েছে । সম্মেলনের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জার্মানীর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রান্ক ওয়াল্টার স্টেইনমেয়ার বলেন, ছ'দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইরানের পরমাণু সমস্যা সম্পর্কে নিরাপত্তা পরিষদের নতুন খসড়া প্রস্তাবের বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছেন । ইরানের পরমাণু বিষয়টি স্থিতাবস্থায় থাকার পর এবারের সম্মেলন আয়োজনে এ সমস্যা আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ।
জার্মানীর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রান্ক ওয়াল্টার স্টেইনমেয়ারের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, বৃটেন ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি হ্যাভিয়ার সোলানা বার্লিনে ইরানের পরমাণু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন । বৈঠকের পর ফ্রান্ক ওয়াল্টার স্টেইনমেয়ার মার্কিন, রুশ ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং হ্যাভিয়ার সোলানার সঙ্গে এক প্রেস ব্রিফিং-এর আয়োজন করেন । স্টেইনমেয়ার বলেন, ই.ইউ'র পক্ষ থেকে জার্মানী, ফ্রান্স ও বৃটেন নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের পরমাণু সমস্যা সম্পর্কিত একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করবে ,কিন্তু খসড়া প্রস্তাবের বিষয় সম্পর্কে তিনি কিছুই বলেন নি । তবে মার্কিন প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য বলেন, খসড়া প্রস্তাবে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জোরদার করা এবং বিদেশে ইরানের অর্থ আটকে রাখার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । যার সঙ্গে আরও বেশি আর্থিক শাস্তি আরোপের সম্পর্ক নেই । জানা গেছে, নিরাপত্তা পরিষদ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এ খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবে ।
এ প্রসঙ্গে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াং চিয়ে ছি বলেন, আন্তর্জাতিক পরমাণু অবিস্তার ব্যবস্থা সুরক্ষা করা, কূটনৈতিক পদ্ধতিতে শান্তিপূর্ণভাবে ইরানের পরমাণু সমস্যার সমাধান করা এবং মধ্য-প্রাচ্য অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা সুরক্ষা করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিন্ন স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ । তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিভিন্ন পক্ষের উচিত কূটনৈতিক চেষ্টা জোরদার করা এবং সম্পূর্ণভাবে ইতিবাচক ভুমিকা পালন করে সৃজনশীল পদ্ধতিতে দীর্ঘকালীন,সার্বিক ও সুষ্ঠুভাবে ইরানের সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা । তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের এসব তত্পরতা লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য সহায়ক । তিনি আরও বলেন, ইরানের পরমাণু সমস্যা সম্পর্কে চীন শান্তিপূর্ণ বৈঠক আয়োজন ত্বরান্বিত করাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে গঠনমূলক ভুমিকা পালনে আগ্রহী । যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ প্রকাশ্যভাবে নেতিবাচক অবস্থান না নেয়ায় জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রান্ক ওয়াল্টার স্টেইনমেয়ার মনে করেন, এবারের বৈঠক ইতিবাচক ও সফল হয়েছে । তিনি বলেন, অংশগ্রহণকারীরা ইরানের পরমাণু সমস্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ইরানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রতি তার সংশ্লিষ্ট সমস্যা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতি মেনে চলার আহ্বান জানান । যাতে পরস্পরের মধ্যেকার আস্থা পুনরুদ্ধার করা যায় । তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইরানের পরমাণু অস্ত্র উন্নয়নের চেষ্টার জন্য এখনও উদ্বিগ্ন ,আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নেতিবাচক ফলাফল এড়ানোর জন্য চেষ্টা চালাতে হবে ।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ছ'দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নিউইয়র্কে বৈঠক করে ইরানের বিরুদ্ধে তৃতীয়বারের মত শাস্তিমূলক প্রস্তাবের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন । কিন্তু মতৈক্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয় নি । সম্প্রতি ইরানের পরমাণু সমস্যার ক্ষেত্রে নতুন পরিবর্তন ঘটে এবং পাশ্চাত্য দেশগুলোর ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত নীতির কিছু পরিবর্তনও হয়েছে । প্রথমত: গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৩ সালে ইরান তার পরমাণু অস্ত্র পরিকল্পনা বন্ধ করেছে এবং এ রিপোর্টের কারণে ইরানের বিরুদ্ধে আরও বেশি শাস্তি আরোপ করা উচিত নয় । দ্বিতীয়ত : রাশিয়ার ইরানের কাছে পরমাণু জ্বালানী সম্পদ সরবরাহ এবং আরব দেশগুলোর ইরানের ওপর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করাসহ ধারাবাহিক ঘটনা থেকে বোঝা যায়, ইরানের বিদেশী চাপ অনেক কমে গেছে । এছাড়া, ইরান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছে । আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহা-পরিচালক মোহামেদ আল বারাদেই গত বছর ডিসেম্বর মাসে ইরান সফর করার পর এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইরানের নেতা আগামী এক মাসের মধ্যে তার পরমাণু পরিকল্পনার দিকগুলো ব্যাখ্যা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । এ জন্য ইরান মনে করে,নিরাপত্তা পরিষদের শাস্তি ভিত্তিহীন এবং ইরানের পরমাণু সমস্যা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার দায়িত্ব হবে । যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদকে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন শাস্তি আরোপ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে । এছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদিও শাস্তি আরোপ সমর্থন করে, তবে শাস্তির আওতা এবং সামরিক শক্তির ব্যবহার সম্পর্কে মতৈক্যে পৌঁছে নি ।
(ছাও ইয়ান হুয়া)
|