বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন ২১ জানুয়ারী ভারত সফর শেষ করেছেন। এ দিন দু'দেশ সরকারের প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দু'দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতার ক্ষেত্রকে ত্বরান্বিতকরণ রাখবে এবং বিদ্যমান কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক সুসংবদ্ধ ও গভীর করার জন্য চেষ্টা চালাবে।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দু'দেশের অর্থনৈতিক যোগাযোগ জোরদার এবং বৃটেনে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় অভিবাসীর অবস্থানের কারণে দু'দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীলভাবে উন্নত হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে দু'দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক মূল্য দ্বিগুণ বেড়েছে। বৃটেন ভারতের তৃতীয় বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগকারীতে পরিণত হয়েছে। ভারতও বৃটেনের অন্যতম সর্বাধিক পুঁজি বিনিয়োগকারী হতে যাচ্ছে। দু'দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক দিন দিন পরিপক্ক হয়েছে।
এ দিন অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে দু'দেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় বলেন, দু'দেশের সম্পর্কোন্নয়নকে বাস্তবভার আলোকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দু'পক্ষ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগ ক্ষেত্রের সহযোগিতা উন্নয়নের ওপর অগ্রাধিকার দেবে। ব্রাউন বলেন, আসলে তথ্য প্রযুক্তি, জীবন বিজ্ঞান, কারিগরি, উন্নত উত্পাদন শিল্প, বুনিয়াদী ব্যবস্থা নির্মাণ, জ্বালানি, চিকিত্সা এবং কৃষি ও উচ্চ শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে দু'দেশের ব্যাপক সহযোগিতার সুপ্ত শক্তি ও সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে দু'দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মুল্যের সহযোগিতামূলক প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করছে এবং শিগগিরি চুক্তি স্বাক্ষরেরও সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে একটি আত্মবিশ্বাসী ভারত ও একটি আত্মবিশ্বাসী বৃটেন পরস্পরের সমতা সহযোগিতা থেকে উপকার পাবে। ২০ জানুয়ারী ব্রাউন ঘোষণা করেন, পরবর্তী তিন বছর বৃটেন ভারতের উন্নয়নের জন্য ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার প্রদান করবে। এ অর্থ ভারতের অর্থনীতির উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন এবং চিকিত্সা ও শিক্ষা উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হবে।
অর্থনৈতিক আদান-প্রদান গভীরতর করার জন্য ভারত ও বৃটেন উচ্চ শিক্ষার উন্নয়ন সম্পর্কিত একটি স্মারক লিপি স্বাক্ষর করেছে। যাতে শিক্ষা ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ইংরেজী ভাষা শিক্ষা ক্ষেত্রের সহযোগিতা জোরদার করা যায় এবং লোকজনের যাতায়াত ত্বরান্বিত করা যায়। জানা গেছে, বৃটেন সরকার বৃটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর ভারতের প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা সক্রিয়ভাবে ত্বরান্বিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বৃটেনের সাহায্যে ভারতে কমপক্ষে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, একটি বিজ্ঞান গবেষণা ও শিক্ষা ইনস্টিটিউট এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে।
২১ জানুয়ারী ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মহল ব্রাউনের জন্য আয়োজিত সকালের চা চক্রে বক্তৃতা দেয়ার সময় তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, বিশ্ব ব্যাংক ও আট রাষ্ট্র গোষ্ঠীসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এশিয়ার উত্থানে সৃষ্ট নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আরো প্রতিনিধিত্বশীল হওয়ার জন্য আমাদের আরো বেশি প্রয়াস চালাতে এবং তা বাস্তবায়ন করতেই হবে।" দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর প্রণীত নীতিমালা এবং প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কেবল স্নায়ু যুদ্ধের মিল রয়েছে। বর্তমান বিশ্বায়ন পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়ার জন্য তার "আমূল সংস্কার" করতেই হবে।
ভারত সফরকালে ব্রাউন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং জলবায়ু পরিবর্তন, যৌথভাবে সন্ত্রাস দমন, পাকিস্তানের পরিস্থিতি ও মিয়ানমার সমস্যা নিয়ে মত বিনিময় করেছেন। বিশেষ করে সন্ত্রাস দমন ক্ষেত্রে দু'দেশ তথ্য বিনিময় ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি জোরদার করবে। দু'পক্ষ বহু পক্ষীয় কাঠামোতে যৌথভাবে সন্ত্রাস দমনের লক্ষ্যে সংগ্রাম করবে। ব্রাউন পুনরায় ঘোষণা করেন, বৃটেন আন্তর্জাতিক বিষয়ে ভারতের আরো বিরাট ভুমিকা পালন করাকে সমর্থন করে। বৃটেন আর্থিক অভিযান সংক্রান্ত বিশেষ কার্য গ্রুপে ভারতের অন্তর্ভুক্তিকে সমর্থন করে। এই সংস্থার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মানি লণ্ডারিং প্রতিরোধ এবং সন্ত্রাসবাদী সদস্যদের অর্থ লেনদেন বন্ধ করা। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|