v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-01-22 15:33:17    
চীনের চারু ও কারু গুরু জাং থুং লু

cri

    চিং থাই লাইন, ইংরেজী ভাষায় ক্লোইজানেই তা হলো চীনের এক রকম চীনামাটি দিয়ে তৈরী কারু শিল্প। তার দীর্ঘ দিনের ইতিহাস রয়েছে এবং তৈরী করার প্রক্রিয়া খুব জটিল। মিস্টার জাং থুং লু হলেন বর্তমান চীনে এই বৈশিষ্টময় কারু শিল্প তৈরী করা ক্ষেত্রের সবচেয়ে খ্যাতিমান শিক্ষক। তাঁকে বলা হয় "ক্লোইজানেই'র প্রথম ব্যক্তি"। আজকের আলোকিত ব্যক্তিত্ব আসরে জাং থুং লু সম্পর্কে কিছু তথ্য আপনাদের জানাবো।

    চিং থাই লাইন হলো চীনের একরকম বৈশিষ্টময় কারুশিল্প। তাতে ব্রোঞ্জ ও চীনামাটি'র তৈরীর প্রযুক্তি মিশিয়ে চীনের ঐতিহ্যিক চারু ও ভাষ্কর্যের বৈশিষ্ট প্রকাশ করা হয়। তার ইতিহাস প্রায় ৫০০ বছরের। পঞ্চদশ শতাব্দী ছিল চীনের মিং রাজবাংশের চিং থাই-এর সময়। চিং থাই লাইনের প্রযুক্তি দিয়ে তৈরী কাচ ও বাটিগুলোর রং সাধারণত নীল, তাই তাকে চিং থাই লাইন বলা হয়।

    ১৯৫৮ সালে ১৬ বছর বয়স্ক জাং থুং লু পেইচিংয়ের চিং থাই লাইন কারখানায় ভর্তি হয়ে সেখানের একজন শ্রমিক হন। ছোটবেলায় তিনি ছবি আঁকতে খুব আগ্রহী ছিলেন। এক দিন তিনি একটি চলচ্চিত্র দেখেছেন, সেই ছবি চিং থাই লাইন সম্পর্কিত। ছবিতে একজন শিল্পী একটি কাচের উপরে ছবি আঁকছেন। এই ছবি দেখে জাং থুং লু খুব খুশি, তিনি মনে করেন যে চিং থাই লাইনের তৈরী প্রধানত আঁকা। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে চিং থাই লাইন তৈরী করতে শিখবেন। কিন্তু পরে তিনি খুব হতাশ হয়েছেন। তিনি স্মরণ করে বলেন:

    "তখন কারখানায় ভর্তি হওয়ার পর ছেলেরা শুধু মাটি'র প্রাথমিক আকার তৈরী করে এবং ব্রোঞ্জ দিয়ে মাটি'র বাইরের দিকে ছবি'র জন্য সীমান্ত ঢেকে রাখা। আমার গুরু আমাকে বলেন, ভালভাবে শিখো, সাফল্য পাবে। আমি জিজ্ঞেস করেছি, কখোন আমি ছবি আঁকা শিখতে পারবো? তিনি বলেন, এ কাজটি ভালভাবে শেখার জন্য অনেক সময় লাগবে, তুমি আর কত বেশি শিখতে পারবে? তখন আমি ভাবতাম, শুধু এইটুকু জানি এটা যথেষ্ট নয়। অনেক কিছু জানতে চাই।"

    একটি চিং থাই লাইন কারু শিল্প তৈরী করার জন্য দশটিরও বেশি প্রক্রিয়া লাগে। প্রথম ডিজাইন, তারপর ব্রোঞ্জ দিয়ে ছবি'র সীমান্ত ঢেকে রাখা ও আগুনে জ্বালানো ইত্যাদি। চিং থাই লাইন কারখানায় উত্পাদন লাইনে প্রতি প্রক্রিয়ার জন্য একজন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সারা জীবনে হয়তো শুধু এই প্রক্রিয়াটি জাননেন। জাং থুং লু ব্রোঞ্জের কাজ করতে চান না, তিনি ছবি আঁকতে চান।

    এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি পেইচিং চারু ও কারু স্কুলে ভর্তি হন। তিনি ভিশণ মনোযোগ দিয়ে শিখেছেন অনেক জ্ঞান। যেমন ডিজাইন, রং বানানো ইত্যাদি। পড়াশোনা শেষে তিনি আবার চিং থাই লাইন কারখানায় ফিরে এসেছেন। তখন এই কারখানার নাম পরিবর্তন পেইচিং চারু ও কারু শিল্প কারখানা হয়েছে। সেখানে চিং থাই লাইন ছাড়া পাথর ও হাতি'র দাঁতের দ্বারা ভাষ্কর্যসহ ১৩ ধরনের ঐতিহ্যিক কারু শিল্প তৈরী করার ৱএকটি কেন্দ্রীয় কারখানা হয়েছে।

    কারখানায় কাজ করা শ্রমিক বেশি, তাই জাং থুং লু কারখানায় ফিরে আসার পর মধ্য পর্যায়ের পরিচালক হয়েছেন। পরিচালক হয়ে তিনি বিভিন্ন বিভাগের কাজ জানার সুযোগ পান। তিনি কাজে মনোযোগ দিয়ে তিন বছরের মধ্যেই চিং থাই লাইন তৈরী করার সব প্রক্রিয়া আয়ত্ত করে নেন। তিনি বলেন:

    "চিং থাই লাইন বানানোর প্রক্রিয়া খুব জটিল। এই প্রযুক্তি শুরু হওয়া থেকে এ পর্যন্ত ৬০০ বছরের মধ্যে সব প্রক্রিয়া আয়ত্ত করা লোকের সংখ্যা খুব কম। আমি এই কারখানার উপ-প্রধান হওয়ার পর ১৩টি চারু ও কারু শিল্পের বৈশিষ্ট চিনে ফেলেছি। যার ফলে এই সব সংযুক্ত করে চিং থাই লাইনের মান আরো উন্নত করার জন্য ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে।"

    তিনি মনযোগ দিয়ে শেখার সঙ্গে সঙ্গে নিজের উদ্ভাবিত পুরোনো প্রযুক্তি'র সঙ্গে যোগ করে দেন। তার ডিজাইন চিং থাই লাইন অনেক বার চীনের চারু ও কারু শিল্প ক্ষেত্রের পুরষ্কার পেয়েছে। তার ডিজাইন করা পণ্যদ্রব্য অনেক ভোক্তাদেরই পছন্দ। বাজারেও খুব জনপ্রিয়। ১৯৮৮ সালে তিনি চীনের "চারু ও কারু গুরু"র খেতাব পেয়েছেন।

    কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি ও পণ্যদ্রব্য জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যিক কারু শিল্প মানুষের দৃষ্টি থেকে সরে গেছে। পেইচিং চারু ও কারু শিল্প কারখানা ২০০২ সালে বন্ধ হয়ে গেছে। শ্রমিকরা সবাই অন্য কাজে চলে গেছে, শুধু দশ বারো জন এই কাজে স্থায়ীভাবে রয়ে গেছেন। এই বড় ঝুঁকি'র সম্মুখীন হলেও , জাং থুং লু কিন্তু পুরানো কাজ পরিত্যাগ করতে চান না। তিনি বলেন:

    "আমার খুব দুঃখ লাগে। আমি সারা জীবন এই কাজই করতাম। একটি কথা চিন্তা করতে হবে যে আমার অভিজ্ঞতা, বুদ্ধি ও শ্রমের মাধ্যমে এই ঐতিহ্যিক প্রযুক্তি উন্নয়ন করবো।"

    তিনি নিজের টাকা খরচে একটি নতুন কোম্পানি স্থাপন করেছেন এবং চিং থাই লাইন কারখানার শ্রমিকদের আবার নিয়োগ করেছেন। তিনি মনে করেন এই প্রযুক্তিও সময়ের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে। আগের ধারণা আর আজকের বাজারে চলে না। তিনি বলেন:

    "নতুন ধারণা দিয়ে আমি চিং থাই লাইনের উন্নয়নের দিক নিয়ে চিন্তা করি। যেমন নতুন ছবি, নতুন রং এবং বিদেশের ভোক্তাদের চাহিদা মেটানো ইত্যাদি। বাজারের চাহিদার সঙ্গে প্রযুক্তি'র উন্নয়ন করা হলো আমাদের পথ।"

    জাং থুং লু'র বয়স এখন ৬৫। তিনি প্রায় ৫০ বছর ধরে চিং থাই লাইনের ওপর কাজ করেছেন। এখন চিং থাই লাইনের উন্নয়ন নিয়ে তিনি খুব চিন্তিত। খুব কম ছাত্র এখন এই বিষয়ে আগ্রহী। এই প্রযুক্তির উন্নয়ন এখন থমকে যাচ্ছে। কিন্তু চীন সরকার এখন ঐতিহ্যিক প্রযুক্তি'র জন্য অনেক সাহায্য দিচ্ছে। তা চিং থাই লাইন সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য খুব সহায়ক। জাং থুং লু বলেন, তিনি চিং থাই লাইন তৈরী করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে একটি বই লিখবেন। যারা এই বিষয়ে আগ্রহী বা গবেষণা করতে চায় তাদের জন্য সুবিধা হয়। (ইয়াং ওয়েই মিং)