এমন একটি মেয়ে আছেন । তিনি তালিয়েন শহরে বড় হয়ে ওঠেছেন । ছোট বেলা থেকেই তিনি বহু ভালবাসা পেয়ে এসেছেন । পাশাপাশি তিনি এমন একটি মেয়ে ছিলেন তিনি ইচ্ছা করে শহরের আরামের জীবনযাপন ছেড়ে গ্রামে এসে এক সাধারণ শিক্ষক হন । কেউ কেউ বলেন, তিনি বোকা লোক । কিন্তু অধিকাংশ লোকের চোখে তিনি একজন মহত মানুষ । তার আচরণ সকলের কাছে শিক্ষণীয় । তিনি হলেন গ্রামীণ শিক্ষিকা সুই হোংমেই ।
সুই হোংমেই ২০০৭ সালের " আশা প্রকল্পের শিক্ষক পুরস্কার" পেয়েছেন । এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন , আমি বেশি কাজ করিনি । আমাকে এত বেশি সম্মান দেয়ায় আমি লজ্জিত । বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় আমি " শিক্ষিকা চাং মেইলি" শিরোনামে একটি ছবি দেখে খুব মুগ্ধ হলাম । আমি চাং মেইলির মতো একজন গ্রামীণ শিক্ষিকা হতে চাই । আমি গ্রামাঞ্চলের ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু করতে চাই। আমার পারিবারিক অবস্থা মোটামুটি ভাল ছিল । ছোট বেলা থেকে বহু বছর ধরে লেখাপড়া করলাম । আমি কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হইনি । আমি মনে করতাম, আমার আর এমনি দিন কাটাতে হবে না । কিন্তু চাঁদা দিয়ে গ্রামীণ ছেলেমেয়েদের সাহায্য করা একজন ছাত্রের পক্ষে সহজ ব্যাপার নয় । কিন্তু আমি শিক্ষিত, আমার জ্ঞান আছে ,তাদের পড়াতে আমার সামর্থ্য আছে । সুতরাং আমি উত্তর-পশ্চিম চীন সহায়তা কার্যক্রমে নাম দিয়েছি । সৌভাগ্য আমি , আমি সত্যিই একজন গ্রামীণ শিক্ষক হতে পেরেছি ।
২০০৩ সালের ২৫ আগষ্ট সুই হোংমেই এবং অন্য ৮জন বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্রছাত্রী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পশ্চিম লিয়াওনিং প্রদেশের ছাওইয়াং জেলার ইয়াংশানচেন থানার সিচিয়াচি গ্রামের প্রথামিক স্কুলে শিক্ষকের কাজ শুরু করেন । ছাওইয়াং জেলায় বিশটিরও বেশি গ্রামীণ স্কুল আছে । কিন্তু শিক্ষকের অভাবে এখানকার প্রাথমিক স্কুলে ইংরেজী পড়ানো শুরু হয়নি । সুই হোংমেইদের আগমনের পর এখানকার ছেলেমেয়েরা সত্যিকারভাবে ইংরেজী শিখতে শুরু করে ।
গ্রামে সুই হোংমেইরা ভাড়া বাড়িতে থাকেন । তাদের নিজেদের রান্না করতে হয়, নিজেদের জ্বালানী জোগাড় করে ঘর গরম করতে হয় । গ্রামে কলের পানি নাই বলে তাদের নিজেদের কুপ থেকে পানি আনতে হয় । এই পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে শহর থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবকদের পক্ষে একটা বিরাট সমস্যা । কিন্তু গ্রামীণ ছেলেমেয়েদের জন্য এবং তাদের নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সুই হোংমেইরা স্থানীয় সরকার এবং জনসাধারণের সাহায্যে নানা অসুবিধা কাটানোর চেষ্টা করেন ।
এক সাক্ষাত্কারে সুই হোংমেই বলেন ,আমরা কখনো এধরণের ভারী ও কঠিন কাজ করিনি । শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের জীবনযাপন অনেক কঠিন হলেও আমি কখনো পরিতাপ করিনি । আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের খুব ভালবাসি । তাদের কাছ থেকে আমি অনেক আনন্দ পাই এবং এধরণের আনন্দ দিনদিন বেড়েই চলেছে । আমি তাদের ছেড়ে যেতে পারি না ।
গ্রামাঞ্চলের জীবনযাপনের অবস্থা খুব কঠিন । আগে কখনো করেনি এমন কাজ করা ছাড়া সাপ , পোকা, ইঁদুরেরও শহরে বড় হওয়া সুই হোংমেইর পক্ষে আরেকটা বড় সমস্যা । একবার বৃশ্চিক যা শুধু টেলিভিশন অনুষ্ঠানে দেখেছেন তা সুই হোংমেইকে এক কামড় দিয়েছিল । হোংমেইর খুব ভয় হল । তিনি সাইকেল চালিয়ে গ্রামের ক্লিনিকে যান । ডাক্তারকে দেখে তার প্রথম কথা হল, ডাক্তার, আমাকে শুধু একটি কথা বলুন , আমার মৃত্যু হবে কি ? ডাক্তার তাকে সান্ত্বনা জানিয়ে বলেন , কিছুই হবে না । কয়েক দিন বিশ্রাম নিলেই যথেষ্ট । সেইবার সুই হোংমেই প্রথমবার অনুভব করলেন যে , এক দিন এক বছরের চেয়েও লম্বা। এর পর সুই হোংমেই আরও কয়েকবার বৃশ্চিকের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন । ধীরেধীরে সুই হোংমেই ভয় কেটে যায় এবং তিনি অভিজ্ঞ হলেন । তার অভিজ্ঞতা অনুসারে বৃশ্চিক উপর থেকে গায়ে পড়লে নড়াচড়া না করলে সে কামড় দেবে না ।
স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে গ্রামীণ স্কুলে সুই হোংমেইর কার্যমেয়াদ দুবছর । সাধারণত দুবছরে মাত্র চারটি পাঠ্যপুস্তক শেষ করা যায় । যাতে ছেলেমেয়েরা কিছু বেশি শিখতে পারে তার জন্য সুই হোংমেই স্কুলে আসামাত্র সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ,দু বছরের মধ্যে তিনি ৮টি পাঠ্যপুস্তকের সব বিষয় ছেলেমেয়েদের পড়াবেন । তিনি শীত ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি এবং অবসর সময়ে ছেলেমেয়েদের পড়াতেন । গ্রামাঞ্চলের এ দুবছরের কথা বলতে গেলে সুই হোংমেই বলেন , আমি যেটা সবচেয়ে বেশি পেয়েছি তা হল মুগ্ধতা । গ্রামাঞ্চলে গেলেই কেবল আমি সত্যিই বেশি মুগ্ধ হয়ে যাই এবং এত বেশি লোকের ভালবাসা পাই যা আমাকে আনন্দ দেয় ছাত্রদের , অভিভাবকদের ,পরিবারপরিজনদের এবং প্রিয়তমের ভালবাসা আমার চিরকালের সম্পদ ।
গ্রামীণ প্রথামিক স্কুলে দু বছরের কার্যমেয়াদ শেষ হওয়ার পর সুই হোংমেই স্কুলটি ত্যাগ করেন । কেউ কেউ মনে করেন, তিনি গ্রামে টিকে থাকতে পারেন না বলে সুই হোংমেই গ্রাম ত্যাগ করেন । আসল ব্যাপার হল এই যে , একজন গ্রামীণ শিক্ষিকা হওয়া সুই হোংমেইর বরাবরের আকাঙক্ষা। তিনি চিরকালই গ্রামাঞ্চলের ছেলেমেয়েদের পড়াতে চেয়েছেন ।কিন্তু দু বছরের স্বেচ্ছাসেবক জীবনযাপন শেষে তাকে এক মাধ্যমিক স্কুলে পাঠানো হয়েছে । অন্যান্যদের চোখে সেখানকার মাধ্যমিক স্কুলের অবস্থাও তেমন ভাল না । কিন্তু সুই হোংমেই এতে অত্যন্ত সন্তুষ্ট ।
সুই হোংমেই ও স্বামী দুজন এখনো আলাদা আলাদা জায়গায় থাকেন । কঠিন অবস্থায় থাকার কারণে এখন সুই হোংমেই বাতে আক্রান্ত হয়েছেন । তিনি মাসে একবার বাড়িতে ফিরে যান এবং হাসপাতালে গিয়ে শরীর পরীক্ষা করান।
ভবিষ্যত সম্পর্কে নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে সুই হোংমেই বলেন , সুযোগ পেলে তিনি স্কুলে পড়তে চান । স্কুলে নতুন কিছু শিখবেন । যাতে পরে ছাত্রছাত্রীদের নতুন কিছু দিতে পারবেন ।
|