v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-01-18 09:45:12    
সবজির ডাক্তার চাং ইয়ানসিয়াং

cri
  আজ আমি একজন বিশেষ চিকিত্সককে আপনাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো। তাঁর পেশা হলো সবজির চিকিত্সা করা। তিনি নিজে কঠোর পরিশ্রম করে অনেক কৃষককে ধনী হওয়ার পথ করে দিয়েছেন। তাই তিনি "সবজির ডাক্তার" বলে পরিচিত। তার নাম চাং ইয়ানসিয়াং।

    একজন কৃষক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন, শিক্ষক চাং, আপনি দেখুন তো, এ মরিচটার কি হয়েছে?

    চাং ইয়ানসিয়াং বললেন, এর শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি।

    কৃষকের প্রশ্ন, তাহলে কি ধরণের ঔষুধ দেবো?

    চাং ইয়ানসিয়াং প্রেসক্রিপশন দেন, আমার তৈরী ক্যালসিয়াম চূর্ণ দেন।

    কৃষক শিক্ষক চাংকে ধন্যবাদ জানান।

    আপনারা এতোক্ষণ যে কথোপকথন শুনলেন, তা সচরাচর হাসপাতালে ঘটার কথা। তবে আসলে একজন সবজির ডাক্তার ভিডিও'মাধ্যমে কৃষকদের অসুস্থ সবজির জন্য চিকিত্সা করেন। তাঁর ক্লিনিক পূর্ব চীনের শানতুং প্রদেশের শৌকুয়াং শহরে অবস্থিত। প্রশ্ন করলেন যে কৃষক তিনি সেখান থেকে অনেক দূরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লিয়াওনিং প্রদেশে থাকেন। ডাক্তারটি হচ্ছেন চাং ইয়ানসিয়াং।

 

    ৩৫ বছর বয়সী চাং ইয়ানসিয়াং শানতুং প্রদেশের শৌকুয়াং শহরের একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায়ই তাঁর বাবা মারা যান। ফলে তিনি মায়ের হাতেই বড় হন। তাঁর পরিবারে কাজ করার মানুষের অভাব বলে প্রতি বছর তারা সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন ভাতা গ্রহণ করতে বাধ্য হতেন।

    গত শতাব্দীর আশির দশকের আগে সেখানে সবজি চাষ একেবারেই হতো না। আশির দশকের শেষ দিক থেকে শানতুং প্রদেশের শৌকুয়াং শহর শীতকালে প্লাস্টিকের অবরন ব্যবহার করে সবজি চাষ করতে শুরু করে। এতে কৃষকরা এতে উপকৃত হন। চাং ইয়ানসিয়াংও নিজেই এই আবরন ব্যবহার করে সবজি চাষ করতে শুরু করেন। প্রথম বছর, তাঁর চাষ করা টম্যাটো ফলনের আগেই আগাছা ও কীট পতাংগে আক্রান্ত হয়। অভিজ্ঞতা না থাকায় তিনি এর প্রতিকার করতে পারেন নি। ফলে সব টম্যাটো নষ্ট হয়ে যায় এবং তার প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়। এরপর চাং ইয়ানসিয়াং সবজি চাষের পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করেন। তিনি বলেন,

    সবজি চাষে সফল হওয়া খুব সহজ নয়। এর জন্য বিশেষ জ্ঞানও প্রযুক্তি থাকা দরকার। ভালোভাবে সবজি চাষ করার জন্য আমি মাধ্যমিক স্কুলের কৃষি বিজ্ঞানের বইগুলো আবার পড়েছি। এর পর আমার সবজি চাষের আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কৃষি বিজ্ঞান পড়ছি।

 

    দ্বিতীয় বছর চাং ইয়াংসিয়াং দু'টি আবরণের নীচে টম্যাটো এবং শসা চাষ করেন। সংশ্লিষ্ট পদ্ধতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সে বছর তিনি প্রচুর ফলন পান। এর পর তিনি ব্যবহারিকভাবে চাষ করার পাশাপাশি লেখাপড়াও করতে থাকেন। একটানা অনেক বছর ধরে তিনি আবরণের নীচে চাষ করা সবজির প্রচুর ফলন পেয়েছেন। তিনি ধাপে ধাপে ধনীও হচ্ছেন। বাস্তব অনুশীলন ও পড়াশোনার মাধ্যমে সবজির ভেতরে জমানো আগাছা ও কীট পতংগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তাই স্থানীয় সরকার তাকে "মিনিয়র কৃষিবিদ"খেতাবে ভূষিত করেন।

    গত শতাব্দীর ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে আবরণের নীচে সবজি চাষের এই পদ্ধতি শৌকুয়াং শহর থেকে ধাপে ধাপে সারা দেশে জনপ্রিয় করে তোলা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু আবরণের নীচে চাষ করা সবজির মধ্যে আগাছা ও কীট পতংগ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি এখনো দুর্বল। সরকার কৃষি প্রযুক্তিবিদদেরকে কৃষি কাজে সেবা দেওয়ার জন্য উত্সাহ দিয়ে আসছে। চাং ইয়ানসিয়াং এর মধ্যে বিপুল বাণিজ্যিক সুযোগ দেখতে পেয়েছেন। তিনি একদিকে কৃষকদের সবজি চিকিত্সা করেই ব্যাপক আয় করতে পারেন। অন্য দিকে কৃষকরা আগাছা ও কীট পতংগ কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। এ দুই কারণে চাং ইয়ানসিয়াং সবজি চাষীদের জন্য "সবজির ডাক্তার"হিসেবে কাজ করছেন।

 

    ২০০২ সালে স্থানীয় সরকারের সাহায্যে চাং ইয়ানসিয়াং শৌকুয়াং শহরে প্রথম "সবজির হাসপাতাল"স্থাপন করেন। হাসপাতালে এসে চিকিত্সা নেওয়া কৃষকদের সংখ্যা ব্যাপক। তাদের মধ্যে কিছু কৃষক অনেক দূর দূরান্ত থেকে এখানে চিকিত্সা নিতে আসেন। ফু সুয়েলিয়াং নামের একজন কৃষক আমাদের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে থেকে তিনি তাঁর সবজির জন্য এখানে চিকিত্সা নিতে আসেন। তিনি ডাক্তার চাংয়ের কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন,

    ডাক্তার চাং'এর হাসপাতালটি আমাদের জন্য খুব সুবিধা করে দিয়েছে। সবজির যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে এখান থেকে চিকিত্সা নিলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আগে সবজি অসুস্থ হলে আমাদের কোন উপায় থাকতো না। এর ফলে সবজির উত্পাদন এবং আয় দুইই কমে গিয়েছিল। এখন সবজির গুণগত মান এবং উত্পাদনে অনেক উন্নতি হয়েছে। ফলে বিক্রিও অনেক সহজে করা যায়।

    ২০০৪ সালে শৌকুয়াং শহরের সবজির আগাছা ও কীট পতাংগ প্রতিরোধ সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। চাং ইয়াসিয়াং এ সমিতির চেয়ারম্যান। সরকারের উদ্যোগে সমিতির বিশেষজ্ঞরা এবং প্রযুক্তিবিদরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে সবজির চিকিত্সা করেন, আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষি প্রযুক্তি ও জ্ঞান প্রচার করেন। তা ছাড়া, এ সমিতি নিয়মিত সবজির কীট পতংগ প্রতিরোধ বিষয়ক প্রশিক্ষণ ক্লাস চালু করেন এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি জনপ্রিয় করে তোলা এবং ব্যবহার দ্রুততর করেন। ২০০৫ সালে চাং ইয়ানসিয়াং শানতুং প্রদেশের কৃষি বিভাগের বিনিয়োগ করা এক লাখ রেনমিনপি ব্যবহার করে কম্পিউটার, অণুবীক্ষণযন্ত্র, ভিডিক্যামেরাসহ কিনেছেন এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে "সবজির দূরপাল্লার চিকিত্সা ব্যবস্থা" চালু করেছেন। এরপর তিনি সারা দেশের বিভিন্ন জায়গার সবজি চাষীদের জন্য সবজির ডাক্তার হিসেবে কাজ করছেন।

    সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শানতুং প্রদেশ গ্রামাঞ্চলের গঠনকাজ ও কৃষি উন্নয়নের উপরও গুরুত্ব দিয়ে আসছে। স্থানীয় সরকার কৃষি প্রযুক্তিবিদদের প্রশিক্ষণের উপর সজাগ দৃষ্টি রাখছে। চাং ইয়ানসিয়াং-এর মতো মানুষদেরকে কৃষকদের আদর্শ ব্যক্তি বলে মনে করা হয়। চাং ইয়ানসিয়াং বলেন, তিনি সেতু হিসেবে নিজের কৃষি প্রযুক্তি আরো বেশি কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে ইচ্ছুক। তিনি আরো বলেন,

    প্রযুক্তি আপনার ধনী হওয়ার পথে দিক নির্দেশনা দিতে পারে। প্রযুক্তি ও জ্ঞানের কারণে আপনার ভাগ্যও পাল্টে যেতে পারে। আমার কাজটি সেতুর মত। এর একপাশে আছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অন্য পাশে কৃষক। কৃষকের সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো আমার সবচেয়ে আগ্রহের কাজ। (লিলি)