v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-01-17 18:27:42    
আকার্যকর যুদ্ধ বিরতিঃ শ্রীলংকায় আবার সংঘর্ষের সূত্রপাত

cri

১৬ জানুয়ারি শ্রীলংকা সরকার একতরফাভাবে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়ার দিন সকালে একটি বাস রাজধানী কলম্বোর প্রায় ২শ' ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মোনারাগালা এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের শিকার হয়। এতে কমপক্ষে ২৪জন নিহত এবং ৬৬জন আহত হয়েছে। এর পাশাপাশি, একই এলাকায় একটি সামরিক যানও বোমা বিস্ফোরণের শিকার হয়েছে এবং ৩জন সৈন্য আহত হয়েছে। এতে অনুমিত হচ্ছে যে, দুটো বোমা বিস্ফোরণের অর্থ হলো শ্রীলংকার সংঘর্ষে জড়িত উভয় পক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রায় ৬ বছরের যুদ্ধ বিরতির অবসানের মধ্য দিয়ে নতুন করে শ্রীলংকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূচনার ঘোষণা।

২০০২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে নরওয়ের মধ্যস্থতায় শ্রীলংকা সরকার ও এল টি টি ই যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি শ্রীলংকায় শান্তির বার্তা বয়ে নিয়ে এসেছিল। তবে ৮ দফা সরাসরি আলোচনার পরও শ্রীলংকার সরকার এবং এলটিটিই রাজনৈতিক উপায়ে সংঘর্ষ সমাধানের কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সক্ষম হয় নি। ২০০৩ সালের এপ্রিলে এলটিটিই আলোচনা পরিত্যাগের কথা ঘোষণা করে। মূলতঃ সে সময় থেকেই শান্তি প্রক্রিয়া অচলাবস্থায় পড়ে যায়। ২০০৫ সালের শেষ নাগাদ মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হবার পর, দু'পক্ষের সংঘর্ষ তীব্রতর হয়ে উঠে। যুদ্ধ বিরতি চুক্তি তখন হয়ে উঠে মাত্র একটি নাম সর্বস্ব চুক্তিতে। শ্রীলংকা সরকার এ মাসের ২ তারিখে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি থেকে সরে আসার কথা ঘোষণা করে। তারা বলেছে, যুদ্ধ বিরতিকালীন সময় এলটিটিই শ্রীলংকার বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে এবং অব্যাহতভাবে বেসামরিক লোকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং, যুদ্ধ বিরতি চুক্তি বাতিল করা হচ্ছে একটি অনিবার্য ব্যাপার।

যুদ্ধ বিরতি চুক্তি কার্যকর এবং শ্রীলংকার শান্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য শ্রীলংকা সরকার যুদ্ধ বিরতি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেয়ার পর চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষ বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা চালিয়েছে। ১০ জানুয়ারি এলটিটিই এক বিবৃতিতে 'যুদ্ধ বিরতি চুক্তির সকল ধারা অব্যাহতভাবে মেনে চলে সম্পূর্ণরূপে এই চুক্তিকে সম্মান প্রদর্শনের কথা বলেছে। তাছাড়া, এলটিটিই নরওয়েকে শ্রীলংকার শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য মধ্যস্থতা রাখার অনুরোধ জানিয়েছে। নরওয়ের বিশেষ শান্তি দূত এরিক সোলহেইম বলেছেন, নরওয়ে অব্যাহতভাবে শ্রীলংকার শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য মধ্যস্থতা করতে ইচ্ছুক। ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নরওয়ে, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউকে নিয়ে গঠিত শ্রীলংকার শান্তি প্রক্রিয়ার যুক্ত চেয়ারম্যান এক বিবৃতিতে বলেছে, সামরিক অভিযানের মাধ্যমে শ্রীলংকার বর্তমান জাতীয় সংঘর্ষের সমাধান করা সম্ভব নয়। তারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের বিষয়টিকে সমর্থন করে। জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার লুইস আরবোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেন, কোনো প্রকার বৈরিতা ও উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থার তীব্রতর রূপ শ্রীলংকার মানবাধিকারকে দারুণভাবে বিঘ্নিত করবে।

কিন্তু এলটিটিই'র প্রতিশ্রুতি এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষের চেষ্টা সত্বেও শ্রীলংকা সরকার সামরিক উপায়ে সম্পূর্ণভাবে এলটিটিই'কে পরাজিত করার সংকল্পের কোন পরিবর্তন করে নি।

যুদ্ধ বিরতি চুক্তি ১৬ জানুয়ারি অকার্যকর হবার আগে, নরওয়েসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত যুদ্ধ বিরতি তত্ত্বাবধান কমিটি ধাপে ধাপে সাংঘর্ষিক বিভিন্ন এলাকার তত্ত্বাবধান কাজ শেষ করে সরে এসেছেন।

এর পাশাপাশি, শ্রীলংকার সরকারি বাহিনী এবং এলটিটিই'র সামরিক সংঘর্ষ অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। দশ-বারো দিনের মধ্যে এলটিটিই'র ৪শ'রও বেশি সদস্য এবং ২০জনেরও বেশি সরকারি সৈন্য সংঘর্ষে নিহত হয়েছে। এলটিটিই'র একজন সামরিক মুখপাত্র বলেছেন, তারা জানতে পেরেছেন উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় তাদের একটি ঘাঁটি সরকারী বাহিনী ঘিরে ফেলতে শুরু করেছে। সব কিছু দেখে শুনে মনে হয় ভবিষ্যতে সংঘর্ষের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে।

বর্তমানে শ্রীলংকার সরকারি বাহিনী এলটিটিই'র বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোন সামরিক অভিযান চালাবে কিনা তা জানা যায় নি। তবে এলটিটিই বলেছে, সরকারি বাহিনী বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালালে, তারাও তাদের দুর্বলতা প্রকাশ করবে না। অনুমান করা যায়, যুদ্ধ শুরু হলে, দু'পক্ষকেই এর জন্য যথেষ্ট ত্যাগ স্বীকার করতে হবে এবং এর ফলে শ্রীলংকার জনগণের জীবন-যাত্রা আরো কষ্টকর হয়ে উঠবে।