v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-01-17 09:31:39    
সিমোন জি.ম্যাকিননের সাংহাই চিহ্ন

cri
    ব্রিটেনের সায়মন জে.ম্যাককিনন সাংহাই শহরে প্রায় ২০ বছর ধরে আছেন। তিনি সাংহাই'র একজন চীনা মহিলাকে বিয়ে করেন। তিনি এখন সাংহাই'র জামাই। তাঁর আরেকটি চীনা নাম মা সিমেন রয়েছে। তিনি সাংহাই'র জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। সেজন্য সাংহাই শহরের সরকার তাঁকে মর্যাদান 'সাংহাই শহরের নাগরিক' এ খেতাব প্রদান করেছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে সায়মন জে.ম্যাককিনন সম্পর্কে কিছু কথা বলবো।

    ১৯৭৯ সালে মা সিমেন প্রথম চীনের শেনচেন শহরে আসেন। তাঁর হৃদয়ে শেনচেনের র্দশাবলী খুবই গভীরভাবে রেখাপাত করে। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, 'শক্তি। আসলে মানুষের শক্তি। আমার হৃদরে চীনা মানুষের বিরাট শক্তির কথা খুবই গভীরভাবে গ্রহিত ছিল।'

    ১৯৭৯ হল চীন সরকারের শেনচেন শহরকে বিশেষ অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে নির্মাণের সাল। এ বছর থেকে শেনচেন শহর পুরোপুরি পরিবর্তন হতে শুরু করে। শেনচেন শহর একটি ছোট গ্রাম থেকে আধুনিক শহরে পরিনত হয়েছে।

    তখন মা সিমেনের বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। তিনি চীন সম্পর্কে বেশি জানতেন না। কিন্তু শেনচেনকে দেখে তার চীনের ওপর দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো আরো বেশি। তিনি বলেছেন, 'গত শতাব্দীর ৮০ দশকে আমি মনে করতাম, চীন পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে যাবে। তখন চীন সরকার অর্থনীতির উন্নয়নে প্রধান্য দিতে শুরু করেছে এবং নতুন নীতি প্রণয়ন করেছে। এর মাধ্যেম চীনা জনগণের সামর্থ্য ও শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।'

    ১৯৮৫ সালে মা সিমেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভের পর চীনে আসেন। ১৯৮৫ সালে মা সিমেন চীনা ভাষা শেখার জন্য চীনের সাংহাইতে আসেন। 'সাংহাই বরাবরই চীনের বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এটিই আমার সাংহাইতে আসার কারণ। অন্য এক দিকে আমি গত শতাব্দীর ২০ দশকের সাংহাই'র ওপর ঘনিষ্ঠভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি।'

    গত শতাব্দীর ২০ ও ৩০ দশকের সাংহাই শুধু যে চীনের শিল্প ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র তা নয়, বরং এশিয়ার অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও ছিল। সাংহাই পূর্বের প্যারিস বলে পরিচিত ছিল। মা সিমেনের পুর্বপুরুষ সাংহাইতে ব্যবসা করেন এবং সাংহাইতে একটি নৌ-পরিবহন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। সেজন্য মা সিমেন তাঁর জীবনের শুরু থেকে বাবা মার কাছে সাংহাই'র গল্প শুনতে পয়েছেন। তিনি বরাবরই আশা করেন, কোনো এক দিন তিনি সাংহাইতে আসবেন। কিন্তু সাংহাইতে এসে মা সিমেন দেখলেন যে, সাংহাইও নিজের কল্পনার মধ্যে অনেক ব্যবধান রয়েছে।

    তখন সাংহাই এত সমৃদ্ধ নয়। চীনের পণ্যদ্রব্যের সরবরাহ তেমন বেশি ছিলনা। পণ্যদ্রব্যের সরবরাহ চীনা নাগরিকদের চাহিদা মেটাতে না। কিন্তু ২০ বছরের মধ্যে চীনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। 'মাত্র ২০ বছর পর চীনের বিদেশী মুদ্রার মজুদ বিশ্বের প্রথম স্থানে উঠে গেছে। এটি সারা বিশ্বকে বিস্মিত করেছে।'

    এ ২০ বছরের মধ্যে মা সিমেনের জীবনে অনেক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে। তিনি তাঁর পুর্বপুরুষের মত সাংহাইতে নিজের ব্রত প্রতিষ্ঠা করেন। সি সিমেন ১৯৮৫ সালে সাংহাইতে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিন বছরের মধ্যে চীনা ভাষা শিখেন। এরপর তিনি সাংহাই বিশ্বমূখী বাণিজ্য একাডেমিতে ইংরেজি ভাষা শেখাতে শুরু করেন। এ সময়ে তিনি সাংহাই'র একজন মেয়ের সঙ্গে প্রেম আবদ্ধ হন এবং তাকে বিয়ে করেন। কয়েক বছর পর তিনি ব্রিটেনের নৌ-পরিবহন কোম্পানিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পান। কাজের জন্য তিনি সবসময় বিভিন্ন দেশে যান। কিন্তু ১৯৯৫ সালে পুনরায় তিনি সাংহাইতে ফিরে আসেন। তিনি ব্রিটেনের পি এন্ড ও কর্পোরেশনের চীন অঞ্চলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। তখন থেকে আর কখনো তিনি চীন ত্যাগ করেন নি। ইতিবাচকভাবে সাংহাই'র আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ত্বরান্বিত করার জন্য সাংহাই সরকার তাঁকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করে। ২০০০ সালে মা সিমেন মার্কিন কোর্নিং কোর্পোরেশনের চীন অঞ্চলের সিইও'র দায়িত্ব পালন করেন।

    কোর্নিং কোর্পোরেশনের টেলিযোগাযোগ, পরিবেশ ও জীব বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যবসা রয়েছে। মা সিমেন মনে করেন, চীনের দ্রুত উন্নত টেলিযোগাযোগ, ইলেকট্রোনিক ও গাড়ী শিল্প কোর্নিং কর্পোরেশনের জন্য প্রচুর সুযোগ সৃষ্টি করবে। তার কোর্নিং কর্পোরেশনে যোগ দেয়ার আগে কোর্নিং কর্পোরেশনের চীনে মাত্র একটি কারখানা ছিল এবং এ কারখানাটি ছিল অনেক ছোট, কর্মচারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪০ ও চীনে কোম্পনির মাত্র ১ কোটি মার্কিন ডলার পুঁজিবিনিয়োগ রয়েছে। কিন্তু তিনি কোর্নিং কর্পোরেশনে যোগ দেয়ার পর তাঁর নেতৃত্বে কোর্নিং কর্পোরেশন অব্যাহতভাবে উন্নত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোর্নিং কর্পোরেশন চীনে ৮টি শিল্প-প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে। তার কর্মচারীর সংখ্যা ৩ হাজার ও পুঁজিবিনিয়োগ ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। গত বছর গ্রেট চায়না অঞ্চলে কোর্নিং কর্পোরেশনের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২০কোটি মার্কিন ডলার।

    বর্তমানে মা সিমেনের দৃষ্টিতে কোর্নিং কর্পোরেশন ও সাংহাইতে নিজের ভবিষ্যতে উন্নয়ন প্রত্যয়ে ভরপুর। তিনি বলেছেন, 'সাংহাই সবসময়ই চীনের সেবা ক্ষেত্রের কেন্দ্রীয় অবস্থানে থাকবে। সাংহাই ব্যাংকিং ও বাণিজ্য উন্নয়নের জন্য মৌলিক সমর্থন করে যাবে।'

    চীন সাংহাইকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, ব্যাংকিং, বাণিজ্য ও নৌ-পরিবহন কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। মা সিমেন বলেছেন, তিনি ও বহু বিদেশী ব্যবসায়ী বিশ্বাস করেন সাংহাই'র ভবিষ্যত আরো সুষ্ঠু হবে। এখন মা সিমেন সত্যিই সাংহাই'র একজন নাগরিকের মত সাংহাইকে ভালবাসেন। 'সাংহাই বিদেশী মানুষদের জন্য খুবই আকর্ষনীয়। যদি আপনি মনে করেন, আপনার জীবন প্রাণশক্তিতে ভরপুর, আপনি মজা খাবার খেতে চান ও চীনা ভাষা শিখতে চান, তাহলে আপনার উচিত সাংহাইতে আসা। যদি আপনি শিল্প পছন্দ করেন ও যাদুঘর দেখতে চান, তাহলে আপনার উচিত সাংহাইতে আসা। সাংহাই একটি মহা শহরে পরিনত হচ্ছে।'

    মা সিমেন 'সাংহাই দিনে দিনে শহরের রূপান্তর ও সংরক্ষণ তহবিল কমিটি' প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনায় অংশ নেন। তিনি এ কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাংহাই'র পুরনো স্থাপত্য রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। 'আমার শিশু আমার চেয়ে আরো ভালভাবে চীনা ভাষা বলতেও পড়তে পারবে। এমনকি তারা সাংহাই'র আঞ্চলিক ভাষাও পড়তে পারবে। ব্রিটেনের শিশুরা একটু চীনা ভাষা শিখলে ভবিষ্যতে তারা চীনা মানুষের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারবে।'