v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-01-16 21:31:51    
বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিবের সাক্ষাত্কার

cri
 বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব ফিরোজ আহমেদ সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পণ্য মেলায় অংশ নিতে চীনের রাজধানী পেইচিং এসেছিলেন। সিআরআই বাংলা বিভাগের ছাও ইয়ান হুয়া তার সাক্ষাত্কার নিয়েছেন। নিচে তার বিস্তারিত দেওয়া হলো-

 প্রশ্ন: আপনার মতে চীনের বাণিজ্যিক পরিবেশ এখন কেমন এবং বাংলাদেশের জন্য চীন সরকারের কোনো সুবিধাজনক নীতি আছে কিনা?

 উত্তর: চীনের বাণিজ্যিক পরিবেশ যতদূর আমি দেখলাম খুবই ভালো। বাংলাদেশের সাথে এবং অন্যান্য দেশের সাথে চীনের যে ব্যবসা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা থেকেই বোঝা যায় যে এখানকার বাণিজ্যক পরিবেশ অনুকূল। বাংলাদেশের সাথে যদি ব্যবসার কথা যদি বলি তাহলে বলতে হয় , ২০০৬ সালে চীন থেকে বাংলাদেশে রপ্তানী হয়েছে ২৫৭ কোটি ডলারের পণ্য আর বাংলাদেশ থেকে আমদানির পরিমাণ ৯ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। ২০০৫ সালের চেয়ে এটা প্রায় ৪০ কোটি ডলার বেশি। তার আগের বছর অর্থাত্ ২০০৪ সালের তুলনায় চীন থেকে বাংলাদেশে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৯০ কোটি ডলারের মতো বেশি। সাধারণভাবে আমরা এসব পরিসংখ্যান থেকে বুঝতে পারি যে, চীনের অনুকূল বাণিজ্যিক পরিবেশের কারণেই চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনার দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য চীন সরকারের কোনো সুবিধাজনক নীতি আছে কিনা? আমি বলবো,২০০৬ -এর সালের জানুয়ারিতে আপটা চুক্তির আওতায় চীন বাংলাদেশকে ৮৪ টা আইটেমে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে এবং সেই সুবিধার আওতায় কিছু ব্যবসা বাণিজ্য হচ্ছে, যদিও বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির পরিমাণ খুব বেশি না তারপরও এটা বাড়ছে এবং গত ৫/৬ বছরে বিপুল পরিমাণে বেড়েছে।

 প্রশ্ন: আমরা জানি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্নবাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল চীনে এসেছে এবং বিভিন্ন মেলায় অংশ নিয়েছে। চলতি বছর দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইয়ুন নান প্রদেশের খুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত খুনমিং মেলায় বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী অংশ নিয়েছেন। এ ধরণের মেলা বা বাণিজ্যিক বিনিময় অনুষ্ঠান বেশি হওয়ার প্রবণতা সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?

 উত্তর: প্রথমেই আমি চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাবো। চীনে যেসব পণ্যমেলা হয় সেখানে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা যাতে বেশি সংখ্যায় অংশগ্রহণ করে সেজন্য উত্সাহ দেওয়া হয়। এগুলোতে বিনা ভাড়ায় স্টল দেওয়া হয়,ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদেরকে আহ্বান করা হয়, সরকারী প্রতিনিধিদেরকে আতিথেয়তা প্রদান করা হয়। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বেশি সংখ্যায় চীনে আসা শুরু করেছে যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন এ ধরণের মেলা ছাড়া অন্য কোনো বাণিজ্যিক প্রকল্প সহায়ক ভুমিকা পালন করতে পারে?

 উত্তর: মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই জন্য যে এর মাধ্যমে দুই দেশই তাদের উত্পাদিত পণ্য সম্পর্কে উত্সাহী জনসাধারণ, বিনিয়োগকারী এবং সরকারী -বেসরকারী প্রতিনিধিদল সবার সাথে মতামত আদান প্রদান , পণ্য দেখা এবং বিনিয়োগ সম্পর্ককে চূড়ান্ত করতে পারে। এটা অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম এবং চীন সরকার যেহেতু সুযোগ সুবিধা ক্রমাগত সম্প্রসারণ করছে এ কারণে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে , এর ফলে আমাদের দুদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ যোগাযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর বাইরে এই যে সরকারী প্রতিনিধিদল কিংবা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বিভিন্ন সময় আসছে এটার মাধ্যমে কোনো সমস্যা থাকলে সেটা তারা জানতে পারে ,সুযোগ সম্পর্কে তারা জানতে পারেএবং যে যে জায়গায় বিনিয়োগ ,ব্যবসা বা সাংস্কৃতিক যোগাযোগের সুযোগ আছে সেগুলো নিয়ে তারা আলাপ আলোচনা করতে পারে। এর ফলে আমাদের দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। ১৯৭৫ সাল থেকে বাংলাদেশ -চীন কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর থেকে এ সম্পর্ক ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। মেলার বাইরেও দুদেশের মধ্যে যে যোগাযোগ বাড়ছে , যেমন খুনমিং -ঢাকা সপ্তাহ প্রতিদিন একটা ফ্লাইট চলছে এর মাধ্যমে দুদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং জনগণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বাড়ছে। এতে দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্ব আরো প্রগাঢ় ও দৃঢ় হচ্ছে।

 প্রশ্ন: বাংলাদেশের পণ্যদ্রব্য চীনে জনপ্রিয় করার জন্য আপনারা কি কি ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছেন? চীনা শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য আপনারা কি কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন?

 উত্তর: বাংলাদেশের পণ্য চীনা জনসাধারণকে দেখানো এবং জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে এই মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই যে গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পণ্যমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে তার মাধ্যমে ৭/৮টি দেশ কি ধরণের পণ্য উত্পাদন করছে সেটা কিন্তু জানা হয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা চীনের জনসাধারণের কাছে বাংলাদেশ কি ধরণের পণ্য উত্পাদন করছে সেটা দেখানো যাচ্ছে। এর বাইরে বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের মধ্যে যে সহযোগিতা রয়েছে কিভাবে আমরা তা আরো বাড়াতে পারি সেটা ভাবতে পারি।বিশেষ করে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কারণ আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনেক পুরনো, চীনের সভ্যতাও অনেক পুরনো, তাছাড়া চীনের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ অনেক পুরনো, সুতরাং পুরনো সম্পর্ক দিন দিন বাড়িয়ে দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো নিবিড় হতে পারে সে ব্যাপারে নানাবিধ ব্যবস্থা নেওয়া যায়। আমরা অনেক ধরণের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছি বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরকে। আমাদের রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত এলাকায় চীনের বিনিয়োগকারীরা শিল্প স্থাপন করতে পারেন, এর বাইরে অন্যান্য এলাকায়ও আমাদের সরকার এবং বিনিয়োগ বোর্ড নানা সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে , এগুলো গ্রহণ করে চীনের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে ব্যবসা করে ভালো লাভ করতে পারেন।

 প্রশ্ন: বাংলাদেশ-চীন ভবিষ্যত্ বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে আপনি কি বলেন?

 উত্তর: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিপুলভাবে বাড়ছে। চীনের রপ্তানি যেমন বাড়ছে তেমনি বাংলাদেশের রপ্তানিও বাড়ছে, যদিও চীনের তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি খুবই নগণ্য তবুও এই প্রবণতা আশাব্যাঞ্জক। উভয়ের জন্যে এই ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন টেক্সটাইল, ওষুধ, পাট, চামড়া,সিরামিক এবং আইসিটি খাতে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের যে উন্নত প্রযুক্তি সেটা ওখানে বিনিয়োগ করে কাজে লাগালে চীনা উদ্যোক্তারা যেমন সুবিধা পাবে তেমনি বাংলাদেশও লাভবান হবে। আমি মনে করি , নানাবিধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের উভয় দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের সম্পর্ক, শিল্প বিনিয়োগের সম্পর্ক এবং অন্যান্য যেমন সাংস্কৃতিক যে বন্ধন সেটা যেন আরো বৃদ্ধি পায় সেই লক্ষ্যে আমাদের উভয় সরকার এবং ব্যবসায়ী সম্পদায়ের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।