আজকের ভিন দেশির চোখে অনুষ্ঠানের মুখ্যচরিত্র হলেন জার্মান যুবক স্টিফেন মুলার , তার বয়স ৩৭ বছর , তিনি জর্মানীর নেজ গ্রুপের একজন কর্মী । ২০০৬ সালে তিনি চীনের কান সু প্রদেশের রাজধানী লান চৌ শহরে আসেন। ইতোমধ্যেই তিনি লান চৌ শহরকে ভালোবেসে ফেলেছেন । তিনি বলেন , সম্ভব হলে তিনি সারা জীবন এ শহরে থেকে যেতে চান ।
নেজ গ্রুপের সদর দপ্তর জার্মানের বাভারিয়া অংগরাজ্যে অবস্থিত । এ বিশ্ব বিখ্যাত মেশিন উত্পাদন কোম্পানীর ইতিহাস এক শো বছরেরও বেশি । ১৯৯৩ সালে নেজ গ্রুপ লান চৌ শহরকে নিজের পাম্প উত্পাদন কেন্দ্র হিসেবে বাছাই করে । ২০০৬ সালে কোম্পানী স্টিফেনকে লান চৌ শহরে নেজ গ্রুপের পাম্প শাখা কোম্পানীর বিক্রয় কেন্দ্রের ম্যানেজারের পদে নিযুক্ত করে । এর আগেও স্টিফেন অনেকবার চীনে এসেছেন এবং কয়েকটি সমুদ্রতীরবর্তী শহরে গিয়েছেন । তিনি বলেন , চীন তাঁর মনে খুব ভালো ছাপ ফেলেছে ।
আমার মনে হয় , চীনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর বৈশিষ্ট হল তার বিভিন্ন এলাকা বৈচিত্রময়তা । সমুদ্রতীরবর্তী শহর আছে , আবার দেশমধ্যবর্তী শহরও আছে , হিমমন্ডল আছে , এবং গ্রীষ্মমন্ডলও আছে । আমি চীনকে খুব পছন্দ করি ।
স্টিফেন বলেন , সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের "টাইম" ম্যাগাজিন থেকে একটি অভিমত জেনেছি, তা হল বিদেশি কর্মীদের জন্য চীন , ভারত ও রাশিয়ার সংস্কৃতি উপলব্ধির জন্য সময় বেশি লাগে । তবে তাঁর কাছে লান চৌর জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো তেমন কঠিন নয় । তিনি বলেন :
কান সুর ইতিহাস ও রীতিনীতির নিজের বৈশিষ্ট আছে । প্রত্যেকের আচরণ থেকে সে জাতির সংস্কৃতি ও রীতিনীতি অনুভব করা যায় । আমার মনে হয় বিদেশিদের স্থানীয় লোককে নিজের চিন্তাধারার অভ্যাসের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর আশা করা ঠিক নয় ।
চেং ইয়েং চিয়ে হলেন নেজের লান চৌ শাখা কোম্পানীর বাজার বিক্রয় বিভাগের ম্যানিজার , তিনি স্টিফেনের দোভাষীও । কোম্পানীতেএ তরুণীকে স্টিফেনের সবচেয়ে কাছের লোক বলা যায়। প্রথমে চেং ইয়েং চিয়েও বিক্রয় কেন্দ্রে কাজ করেন । তখন স্টিফেন সবসময় তাঁকে তাঁর উপস্থাপিত অনেক রিপোর্ট শুদ্ধ করতে বলতেন । বিরাম চিহ্নের ভুলও শুদ্ধ করতে হতো । চেং ইয়েং চিয়ে তখন মনে করেন স্টিফেন বেশি কঠোর । এমন ধরনের ছোট্ট ভুলের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়ার দরকার নেই । তবে চেং ইয়েং চিয়েও দেখেছেন যে , অনেক আগের রিপোর্ট হোক , নতুন রিপের্ট হোক , কম্পিউটার থেকে স্টিফেন খুব তাড়াতাড়ি অসংখ্য রিপোর্ট থেকে প্রয়োজনীয়টি খুঁজে নিতে পারেন । স্টিফেন চেং ইয়েং চিয়েকে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতাও শেখান । এভাবে এক বছর পর চেং ইয়েং চিয়ে'র কাজের দক্ষতাও অনেক বেড়েছে । অবশ্য তার পদেরও উন্নতি হয়েছে । চেং ইয়েং চিয়ে বলেন , স্টিফেনের কাছ থেকে তিনি অনেক শিখেছেন ।
আমার মনে হয় তিনি আমাদের সংস্কৃতি ও অভ্যাসকে খুব সম্মান করেন । আস্তে আস্তে আমরাও তার কাছ থেকে অনেক শিখেছি । তিনি আমাদের কাজের ওপর অনেক ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছেন । আমার মনে হয় এখন আমাদের সহযোগিতা খুব ঘনিষ্ঠ ।
নেজ লান চৌ শাখা কোম্পানীর বিক্রয় কেন্দ্রের আন্তর্জাতিক বিক্রয় বিভাগের সহকারী ম্যানেজার ছাই শাও চিয়ে স্টিফেনের মত একই বিভাগে কাজ করেন । তিনিও স্টিফেনের খুব ভালো বন্ধু । তিনি বলেন , প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে তাদের মৈত্রী হয়েছে । সকালে স্টিফেন সবসময় সবার আগে এ কার্যালয়ে আসেন । কোম্পানীর নিয়ম অনুযায়ী সারে আটটায় সকালের কাজ শুরু । তবে স্টিফেন বরাবরই আটটায় অফিসে আসেন । তাই ছাই শাও চিয়ে স্টিফেনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান । তবে এক বছরের মধ্যে ছাই শাও চিয়ে শুধু তিন বার স্টিফেনের আগে আসতে পেরেছেন । তিনি বলেন :
কাজের ক্ষেত্রে আমাকে স্টিফেনের কাছ থেকে শিখতে হয় । দেরী হলেও কোম্পানী শাস্তি দেয় না । তবে স্টিফেন কখনই দেরী করেন না । যদিও তাঁর বাসা আমার চেয়ে অনেক দূরে , তবে তিনি সবসময় আমার আগেই অফিসে আসেন ।
কাজ শেষে স্টিফেনও সবসময় সহকর্মীদের সঙ্গে থাকেন । তিনি বলেন :
আমরা সবসময় একসঙ্গে রেস্তরাঁয় খাবার খাই , ব্যাডমিন্টন খেলি , বৌলিং খেলি অথবা একসঙ্গে সাঁতার কাটি । মাঝে মাঝে আমরা একসঙ্গে গানও গাই । আমি গাইতে পারি না , তবে আমি তাদের গাওয়া গান শুনি । তাদের গাওয়া খুব সুন্দর । কেউ কেউ চীনের ঐতিহ্যিক গান গায় , কেউ কেউ আধুনিক গান গায় ।
লান চৌর জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়ালেও মাঝে মাঝে স্টিফেন নিজের দেশের বাড়ির কথা মনে করেন । তিনি বলেন , তাঁর জন্মস্থান জার্মানীর একটি ছোট নগরে । সে ছোট নগরের নামের অর্থ হল বনের দুর্গ । সেখানকার দৃশ্য অতি সুন্দর । আবহাওয়া ভালো হলে লোকেরা কাছাকাছির হ্রদে সাঁতার কাটতে যায় । নিজের বাড়ির কথা বলার সময় স্টিফেনের মুখে হাসি দেখা যায় ।
এখন স্টিফেন লান চৌতে নিজের প্রিয়জনকেও খুঁজে পেয়েছেন । তার বান্ধবীলান চৌর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্মান ভাষা শিক্ষিকা। তিনি বলেন , তিনি সারা জীবন লান চৌতে থাকতে চান ।
|