v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-01-16 20:23:40    
হোয়াং শান পাহাড় সংরক্ষণের উদ্যোগ

cri

    চীনের হোয়াং শান পাহাড় আপনাদের কাছে অচেনা নয় । চীনের আন হুই প্রদেশের দক্ষিণাংশে হোয়াং শান শহর অবস্থিত । ১৯৯০ সালে ইউনেস্কো এ শহরকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক পুরাকীর্তির তালিকাভূক্ত করেছে । হোয়াং শান শহরের আয়তন ১ হাজার ২ শ' বর্গকিলোমিটার । হোয়াং শান পাহাড়ের অদ্ভূত আকৃতির পাইন গাছ ও মেঘের সাগরে ভেসে থাকা অদ্ভূত পাথর পর্যটকদের আকৃষ্ট করে । প্রবাদ আছে যে , হোয়াং শান পাহাড় দেখলে আর অন্য কোনো পাহাড় দেখার দরকার নেই ।

    গত কয়েক বছর হোয়াং শান শহরের পর্যটন শিল্পের প্রসার ও পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ার সংগে সংগে এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের কাজও জরুরী হয়ে পড়েছে । একটি বিখ্যাত পর্যটন শহর হিসেবে হোয়াং শান শহর একেবারে প্রথম থেকে পর্যটন শিল্পকে নগর উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে গ্রহণ করে । একই সময় হোয়াং শান শহর চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পর্যটন শহরও বটে । এর বেশ কিছু উন্নত মানের পর্যটন সম্পদ থাকায় দেশ বিদেশের পর্যটকরা হোয়াং শান ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন । চীনের সিন আন , ছিয়ান থাং ও ফু ছুন তিনটি নদীর উত্পত্তিস্থল এখানেই । তাই এখানকার সুষ্ঠু প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করা হোয়াং শান শহরের টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি তিনটি নদীর নিম্ন অববাহিকার শিল্পোন্নত অঞ্চলগুলোর প্রাকৃতিক ভিত্তির সংগেও জড়িত । এর প্রেক্ষাপটে হোয়াং শান দর্শনীয় স্থান সংরক্ষণের কাজ অত্যন্ত জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

    হোয়াং শান দর্শনীয় স্থানে আমাদের সংবাদদাতা দেখতে পেয়েছেন , হাজার হাজার পর্যটকদের ভীড়ের মধ্যেও আলাদা ইউনিফর্ম পরা সাফ করার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সহজেই চেনা যায় । তারা মনোযোগ দিয়ে ছোটখাটো আবর্জনা সাফ করছেন । শ্রমিক সু ই রুং প্রতিদিন ভোর ৫টায় এ দর্শনীয় স্থানের আবর্জনা সাফ করার কাজ শুরু করেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন ,

    এখন খরার মৌসুম । এ সময় সহজেই অগ্নিকান্ড ঘটতে পারে । আমার ভয় হচ্ছে , কেউ কেউ হয়তো এখানে সিগারেট খান, তা থেকে আগুণ গড়াতে পারে । আবার ভোরবেলায় অনেক পর্যটক সূর্যোদয় দেখার জন্যে এখানে আসবেন , পাছে কোনো কোনো মানুষ যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলে দেন । তাদের ফেলা আবর্জনা দেখলে আমরা সংগে সংগে তা সাফ করি ।

    হোয়াং শান দর্শনীয় স্থানে সু ই রুংয়ের মত শ্রমিককে প্রতি ৫০০ মিটার পর পর দেখতে পাওয়া যায় । তারা সারা বছর ভোরবেলায় এখানে আসেন এবং সন্ধ্যার পর এখান থেকে চলে যান । তারা সবসময় এ দর্শনীয় স্থানের পরিষ্কার পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে ব্যস্ত । এটি হচ্ছে হোয়াং শান দর্শনীয় স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের একটি বুনিয়াদি কাজ ।

    গত কয়ের বছরে চীন সরকার প্রাকৃতিক সভ্যতা ও পরিবেশ সংরক্ষণের কাজের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে । এ প্রসংগে সু ই রুং মনে করেন , সমগ্র সমাজে বিপুল প্রয়াসের সংগে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালানো একান্ত প্রয়োজন । প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে প্রত্যেক পর্যটককে সচেতন থাকতে হবে । তিনি বলেন ,

    অবশ্যই প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে প্রচার করতে হবে । নইলে প্রত্যেক পর্যটক যদি পাহাড়ে উঠে গাছের ডালপালা ভেংগে লাঠি তৈরি করতে থাকে , তাহলে পাহাড়ের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে ।

    হোয়াং শান দর্শনীয় স্থানে সু ই রুংয়ের মত শ্রমিকরা প্রতিদিন নিজ নিজ এলাকায় ঘুরে ঘুরে পর্যটকদের ফেলে দেয়া আবর্জনা সাফ করেন । তাদের কাজের লক্ষ্য হচ্ছে এ দর্শনীয় স্থানে কোনো আবর্জনার অস্তিত্ব না রাখা , যাতে তাদের নিরলস প্রচেষ্টার পর পর্যটকরা একটি সুন্দর পরিবেশের মধ্যে মনোরম নিসর্গ উপভোগ করতে পারেন ।

    আবর্জনা সাফ করা হোয়াং শান দর্শনীয় স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ কাজের মধ্যে একটি বুনিয়াদি কাজ মাত্র । পাশাপাশি হোয়াং শান দর্শনীয় স্থান কতৃপক্ষ কিছু সময়ের জন্যে পালাক্রমে প্রধান প্রধান পর্যটন স্থান বন্ধ করে দেয়া এবং বিখ্যাত ও প্রাচীন গাছগুলোর জন্যে কার্ড টাংগানোর ব্যবস্থা নিয়েছে , যাতে এসব পর্যটন স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশ কার্যকরভাবে সংরক্ষণ করা যায় ।

    ২০ বছর আগে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াং শানকে একটি বিভাগীয় শহর হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে । তখন থেকে হোয়াং শান শহরের পর্যটন শিল্পের দ্রুত প্রসার হয়েছে । এখানে হোয়াং শান পাহাড়ী দর্শনীয় স্থান ছাড়া আরো বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান ও প্রাচীন সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি সংরক্ষিত রয়েছে । এসব পর্যটন স্থান দেশ বিদেশের বহু পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । ২০০৬ সালে হোয়াং শান শহরের পর্যটকদের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৪.১ লাখ পার্সন টাইমস। তার মধ্যে অন্যান্য দেশ ও অঞ্চল থেকে আসা পর্যটকদের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ পার্সন টাইমস । ২০০৬ সালে এ শহরে পর্যটন শিল্প থেকে পাওয়া আয় ৮৪৪ কোটি ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার আয় দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি মার্কিন ডলারে । পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ার সংগে সংগে হোয়াং শান দর্শনীয় স্থানের ধারণ ক্ষমতার চাপও বেড়েই চলেছে এবং পর্যটন , সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পর্যটন শিল্প উন্নয়নের মধ্যে সংগতি রাখা কঠিনতর হয়ে উঠছে । এ সংগতি রাখতে না পারলে পর্যটন শিল্পের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে না । এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে হোয়াং শান পৌর সরকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিয়েছে , যাতে পর্যটন শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখা যায় । এ শহরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা আমাদের সংবদদাতাকে বলেছেন ,

    হোয়াং শান শহর একটি সুপ্রাচীন ও কাল্পনিক শহর । এ শহরে রয়েছে দুটো বিশ্ব সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক পুরাকীর্তি । হোয়াং শানের সি তি ও হুং ছুনের প্রাচীন গ্রামও বিশ্ব সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তির তালিকাভূক্ত হয়েছে । গত কয়েব বছরে হোয়াং শান পৌর সরকার এ শহরের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিচালনার কাজ আরো জোরদার করেছে ।

    হোয়াং শান পৌর সরকার ও বিভিন্ন মহলের নিরলস প্রচেষ্টায় এখনকার হোয়াং শান শহর আগের চেয়ে আরো সুন্দর হয়েছে এবং পর্যটনের পরিবেশও আরামদায়ক হয়েছে । হোয়াং শান দর্শনীয় স্থানে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা পর্যটক ইয়াও কিম সোংয়ের সংগে আমাদের সংবাদদাতার দেখা হলো । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন ,

    হোয়াং শান দর্শনীয় স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশ বেশ ভালো । এখানে কোথাও কোনো আবর্জনা দেখতে পাওয়া যায় না । পরিবেশটা বেশ মনোরম ।