v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-01-15 16:31:19    
চীনের হুয়াং মেই সি অপেরার গীতিকার ও সুরকার শি বাই লিন

cri

    হুয়াং মেই সি হলো মধ্য চীনের আন হুই প্রদেশের এক ধরনের স্থানীয় অপেরা। আন হুই প্রদেশের আঞ্চলিক ভাষায় অপেরাটি গাওয়া হয়। নিটোল প্রেমের গল্প "থিয়েন সিয়ান ফেই" হলো এর মধ্যে খুব বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় একটি অপেরা। এই অপেরাটির প্রধান গীতিকার ও সুরকার হলেন শি বাই লিন। অনেক আগে থেকেই শি বাই লিনের সঙ্গে হুয়াং মেই সি'র সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর । তিনি এবং অন্যান্য হুয়াং মেই অপেরা শিল্পীর সম্মিলিত চেষ্টায় হুয়াং মেই অপেরার খ্যাতি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

    সম্প্রতি শি বাই লিনের হুয়াং মেই অপেরায় আত্ম নিবেদনের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আন হুই প্রদেশে একটি অনুষ্ঠান হয়েছে। অনুষ্ঠান দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। একটি হলো শি বাই লিনের তৈরী হুয়াং মেই অপেরা নিয়ে আলোচনা ফোরাম, আরেকটি অংশ হলো তার লেখা অপেরার প্রদর্শনী অনুষ্ঠান। ফোরামে চীনের স্থানীয় অপেরা সমিতি শি বাই লিনকে "আজীবন অবদানের পুরষ্কার" দিয়েছে। তিনি হলেন এই পুরষ্কার পাওয়া প্রথম চীনা শিল্পী। শি বাই লিন      মনে করেন এটা চীনের সকল অপেরা শিল্পীদের অবদানের প্রতি স্বীকৃতির প্রতীক। তিনি বলেন:

    "চীনের অপেরা হলো বিশ্বের তিন ধরণের বিখ্যাত অপেরার মধ্যে একটি। বাকি দু'টি হচ্ছে ভারতের সংস্কৃত অপেরা এবং প্রাচীণ গ্রীসের হাস্য-করুণরসাত্মক অপেরা। কিন্তু এ দুটি অপেরা এখন আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। চীনের অপেরা এখনো জীবন্ত । এর পেছনে সকল অপেরা শিল্পীদের অবদান রয়েছে।"

    সম্প্রতি আমাদের সংবাদাতা শি বাই লিনের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তার ঘরজুড়ে ছড়ানো ছিটানো গান আর অপেরার রেকর্ড। খুব ছোট বেলায় শি বাই লিনের সঙ্গীতের উপরে আগ্রহ জন্ম নেয়। ১৯২৭ সালে তিনি আন হুই প্রদেশের একটি কৃষক পরিবারে জন্ম নেন। ছোটবেলায় তিনি ধানের খেতে খেলে বেড়াতেন। শি ভাই লিন অনেক স্থানীয় লোকসঙ্গীত গাইতে পারেন। তার সঙ্গীত প্রতিভা যেন জন্মগত, ছোটবেলায় যার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি বলেন:

    "আমার বাড়ি ছিল শেং ছেং শহরে । সেখানে অপেরার ইতিহাস খুব সমৃদ্ধ। মিডল স্কুলে আমি হো নাই ও শান সিতে পড়তাম। সেখানকার স্থানীয় অপেরার বৈশিষ্ট হলো ধ্বনিময় এবং সুললিত। তখন বিচিত্র আঙ্গিকের অপেরা শুনেছি। পরে আমার রচনায় যেগুলো খুব কাজে লেগেছে।"

    প্রথম জীবনে শি বাই লিন ভাবেন নি যে অপেরা নিয়েই তিনি সারা জীবন কাজ করবেন। তিনি বলেন:

    "আমিও জানতাম না যে পরে অপেরা নিয়েই আমি কাজ করে যাবো। তখন অপেরা শিল্পীদের জীবন ছিল খুব কষ্টে, এমনকি সমাজেও তাদের কোনো মর্যাদা ছিল না। তখন আমি ইংরেজী শিখতে খুব আগ্রহ হয়ে উঠি। প্রতি দিন চার্চে যেতাম শুধু ইংরেজী শেখার জন্য।"

    শি বাই লিন ভালভাবে ইংরেজী শিখলেও পরে আর ইংরেজী নিয়ে কাজ করেন নি। ১৯৫১ সালে তিনি শাংহাই কনজারভেটরি অব মিউজিকের বিখ্যাত গীতিকারের কাছ থেকে সঙ্গীতে তালিম নেন। তিনি বলেন:

    "তখন আমি অনেক বিদেশী সঙ্গীত সম্পর্কে জানতে পারি। আমার শিক্ষকদের অনেকেই বিদেশ ফেরত। তাদের মাথায় সব সময় বাখ, মোজাট ও বীথভেন। তখন আমি বেহালা শিখতাম, আমিও এ সব পশ্চিমা বিখ্যাত সুরস্রষ্টাদের সঙ্গীত শুনতাম। ঐ সময়টাতেই আমি আমার আজীবন সংগীত গুরুর দেখা পাই। তিনি হলেন হা লুই থিং। তিনি হলেন সঙ্গীতের সত্যিকার গুরু। লোকসঙ্গীত সম্পর্কে তার জানার পরিধি অনেক বড়। তিনি তার ছাত্রদেরকেও বলতেন গান শিখতে হলে লোকসঙ্গীতের মৌলিক জ্ঞান সবার জানতে হবে।"

    সেখানে পড়াশোনার সময় শি বাই লিন এক বার হুয়াং মেই শি অপেরা "থিয়ান সিয়ান ফেই" দেখলেন। তখন থেকে শি বাই লিন এই অপেরার ভীষণ ভক্ত হয়ে গেলেন। পরে তিনি নিজের জীবনের লক্ষ্য হিসেবে নিলেন আন হুই স্থানীয় অপেরার ওপর গবেষণা কাজকে।

    বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে শি বাই লিন অনেক বিখ্যাত অপেরা রচনা করেছেন। "থিয়েন সিয়ান ফেই"র পর তিনি আবার "থাও হুয়া শান", "সিয়ে ইয়াও হুয়ান"সহ অনেক অপেরার জন্য সুর সৃষ্টি করেছেন।

    ১৯৫৫ সালে তিনি অন্য শিল্পীর সাথে সম্মিলত চেষ্টায় "থিয়েন সিয়েন ফেই" নিয়ে একটি চলচ্চিত্রও তৈরী করেছেন। তখন থেকে এই অপেরাটি খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

    বিংশ শতাব্দীর আশি'র দশকে চীনের উন্মুক্তকরণ ও সংস্কারের পর শি বাই লিন আরো অনেক বিখ্যাত অপেরা রচনা করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার জানা তথ্যগুলো নিয়ে কয়েকটি বই লিখেছেন। যেগুলো অপেরায় আগ্রহীদের জন্য খুব সহায়ক।

    ৮০ বছর বয়স্ক বাই শি লিনের শরীরের অবস্থা খুব ভাল। কয়েক বছর আগে তিনি তার লেখা বই "আমার সঙ্গীত পথ"-এ লিখেছেন, হুয়াং মেই সি ও অন্যান্য অপেরা থেকে তিনি অনেক কিছু শিখেছেন। হুয়াং মেই সি হলো তার স্বপ্ন। (ইয়াং ওয়েই মিং)