v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-01-11 16:46:44    
স্যুং চিয়ে ও ইয়ু লিফাংয়ের কাহিনী

cri
    ২০০৭ সালের আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি সময় নানিচং শহরের ইয়ুহুয়াথাই জেলার মেইশান মাধ্যমিক স্কুল নতুন টার্মের আগমনীকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্যুং চিয়ে এই উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর একজন ছাত্রী। লেখাপড়ায় সে খুব ভাল । তবে কয়েক দিন ধরে সে খুব অস্থির ছিল ।

    স্যুং চিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে একজনকে চিঠি লিখে যাচ্ছিল। কিন্তু তার কাছ থেকে কোনো উত্তর পাচ্ছিল না । এটাই তার অস্থিরতার কারণ ।

    ২০০০সালে যখন স্যুং চিয়ে প্রাথমিক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ছিল তখন সে স্কুলের উদ্যোগে আয়োজিত "হাতে হাত"কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিল । এই কার্যক্রম চলাকালে স্যুং চিয়ে কাপড়চোপড় , ব্যাগ, কলম, বই ,খাতা সহ লেখাপড়ার প্রয়োজনীয় জিনিস দান করেছিল । পাশাপাশি সে নিজের যোগাযোগের ঠিকানাও দিয়েছিল । কিছু দিন পর স্যুং চিয়ে অনেক দূর থেকে একটা চিঠি পেলো । চিঠিটা লিখেছে ইয়ু লিফাং নামের একটি মেয়ে । ইয়ু লিফাং ইয়ুন্নান প্রদেশের নুচিয়াং জেলার মাচি থানার বুলা গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রী । সে লি সু সংখ্যালঘুজাতির মেয়ে । চিঠি বিনিময়ের মাধ্যমে সম বয়সী দুই মেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে গেছে ।

    স্যুং চিয়ের কাছে আশ্চর্য ব্যাপার হল এই যে, তাদের চিঠি প্রায়ই সময়মতো প্রাপকেরকাছে পৌঁছুতো না ।কখনো কখনো দু এক মাস দেরি হতোএমনকি খালি খামও তার পেতো । ইয়ু লিফাংয়ের চিঠি থেকে স্যুং চিয়ে জানতে পেরেছে , নুচিয়াং জেলা দক্ষিণ পশ্চিম চীনের সীমান্ত এলাকার একটি সুন্দর অথচ দরিদ্র জনপদ । ভৌগলিক অবস্থার কারণে সেখানকার যাতায়াত ব্যবস্থাও অত্যন্ত পশ্চাতপদ । সেখান থেকে কোথায় যাওয়া অত্যন্ত অসুবিধাজনক । লোহার শেকড় দিয়ে তৈরী একটি শেকল সেতু তাদের এক মাত্র যাতায়াতের ব্যবস্থা । অর্থাত নুচিয়াং নদীর দুপার এই শেকল সেতু দিয়ে সংযোজিত । স্যুং চিয়ে ভাবতেও পারেনি যে , তার পাঠানো প্রতিটি চিঠি সেকল সেতু পার হয়ে লিফাংয়ের হাতে পৌঁছায়। স্যুং চিয়ে আরও জেনেছে , একটা ছবি তুলে তাকে পাঠানোর জন্য লিফাংকে ৪০-৫০ কিলোমিটারের দুগর্ম পাহাড়ী পথ পাড়ি করতে হয় । স্কুলে যাওয়ার জন্য লিফাংকে প্রতিদিন শেকড় সেতু বেয়ে নুচিয়াং নদী পার হতে হয় । কিন্তু চিঠিতে লিফাং শুধু নিজের সুন্দর জন্মভূমির প্রশংসার কথা লিখত , নিজের কষ্ট ও দারিদ্র সম্পর্কে খুব কম লিখত ।

    বিগত ৭ বছর ধরে দুটি মেয়ে পরস্পরকে সাহায্য এবং পরস্পরকে উত্সাহ দিয়ে এসেছে । লিফাংয়ের প্রতিটি চিঠি স্যুং চিয়ে যত্ন নিয়ে সংরক্ষণ করেছে । কিন্তু দুজন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হওয়ার কিছু দিন পর স্যুং চিয়ের সঙ্গে হঠাত লিফাংয়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । প্রায় দেড় বছর লিফাংয়ের কোনো খবর নেই । লিফাংয়ের কি হল ? তার কোনো কিছু ঘটল ? দুশ্চিন্তা নিয়ে স্যুং চিয়ে চিয়াং সু প্রাদেশিক টেলিভিশন কেন্দ্রের হটলাইনে ফোন করল ।

    স্যুং চিয়ের এই বিশেষ পদ্ধতি টেলিভিশন কেন্দ্রের কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে । স্যুং চিয়ে ও লিফাংয়ের কাহিনী শুনে সবাই দুই সরল মেয়ের অকৃত্রিম বন্ধুত্বে মুগ্ধ হন এবং নুচিয়াং এলাকার ছেলেমেয়েদের শেকড় সেতু পার হয়ে স্কুলে যাওয়ার দৃশ্যে বিষ্মিত হন । লিফাংয়ের চিঠির উত্তর না দেয়ার কারণ জানতে এবং তাকে খুঁজে বের করার জন্য টেলিভিশন কেন্দ্রটির কর্মীরা ইয়ুন্নান প্রদেশ ও মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন । পাশাপাশি তারা লোহার শেকড় দিয়ে তৈরী শেকড় সেতু পার হয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করা সেই সব ছেলেমেয়েদেরকে দেখতে যাবেন বলে ঠিক করেন ।

    লিফাংয়ের বাড়ি নুচিয়াং নদীর ওপারে । তাড়াতাড়ি নদী পার হওয়ার সবচেয়ে ভাল উপায় হল শেকড় সেতু । গ্রামবাসীরা জানালেন, এটা একটা বিপদজনক পথ ।এমন একটি পথই লিফাংকে প্রত্যেক দিন অতিক্রম করতে হত । তাইতো নানচিংয়ে বসবাসকারী স্যুং চিয়ে লিফাংয়ের নিরাপত্তার জন্য চিন্তিত।

    মাচি থানায় পৌঁছার দ্বিতীয় দিন টেলিভিশন কেন্দ্রের কর্মীরা অবশেষে লিসু জাতির মেয়ে ইয়ু লিফাংকে খুঁজে বের করলেন । নতুন স্কুল টার্ম হতে আরও তিনদিন বাকি । সে নুচিয়াং নদী পার হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল । ৬ বছর বয়স থেকে শুরু করে প্রতিদিন লিফাং এই সেতু দিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করত ।

    ঘনিষ্ট বন্ধু স্যুং চিয়ের অনুরোধে নানচিং থেকে তাকে দেখতে সবাই এসেছেন কথাটা শুনে লিফাং মুগ্ধ হল । সে স্যুং চিয়ের পাঠানো ছবি ও চিঠিগুলো অতিথিদেরকে দেখালো । লিফাংয়ের সংরক্ষিত চিঠিগুলো দেখে চিয়াংসু টেলিভিশন কেন্দ্রের কর্মীরা অত্যন্ত মুগ্ধ হলেন । তারা এখানকার কঠিন যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য চিন্তিতএবং স্থানীয় লোকদের সাহায্য করার কথা ভাবতে শুরু করলেন । ঠিক এই সময় শেকড় সেতুর ওপরে লাল কাপড় পরা একটি ছোট মেয়ে নদীর ওপার থেকে এপারে আসছিল । মেয়েটি লিসু জাতির মেয়ে , তার নাম ইয়ু ইয়েনছা । মাত্র ৬ বছর বয়সী ইয়ু ইয়েনছিয়া বুলা গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী । প্রতিদিন ইয়ু ইয়েনছিয়া ব্যাগ সহ তিন-চার কিলোগ্রামের ভারী বোঝা কাঁধে নিয়ে শেকড় সেতু দিয়ে আসাযাওয়া করে ।

    শেকড় সেতু ও পাহাড়ী পথ অতিক্রম করে লিফাং ও নুচিয়াং নদীর দুপারের ছেলেমেয়েরা তাদের লেখাপড়ার স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করছে । অনেকেরই এই স্বপ্ন পূরণ না হলেও তাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই । এখানকার ছেলেমেয়েদের দুচোখভরা স্বপ্ন দেখে চিয়াংসু টেলিভিশন কেন্দ্রের কর্মীরা একটি সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলেন । নুচিয়াং নদীর ওপরে একটি ইসপাতের সেতু বসাতে তিন-চার লাখ ইউয়ান লাগবে । এতো বেশী অর্থ কোথা থেকে আসবে ?

    নানচিং ফিরে আসার পর কর্মীরা টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের নুচিয়াং অভিজ্ঞতা সম্প্রচার করলেন । অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হওয়ার পর নুচিয়াং এলাকার ছেলেমেয়েদের জন্য সেতু নির্মাণের জন্য চাঁদা দেওয়ার হিড়িক পড়ে গেল নানচিং শহরে । মাত্র এক মাসের মধ্যে ১৪ লাখ ইউয়ান চাঁদা উঠে গেল । যা দিয়ে চারটি সেতু নির্মান করা সম্ভব।

    ২০০৭ সালের ১২ অক্টোবর নানচিং শহরবাসীদের আর্থিক সাহায্যে প্রথমভালবাসার সেতুটির নির্মাণ কাজ নুচিয়াং জেলার বুলা গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের পাশে শুরু হল ।