v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-01-11 15:15:29    
পামীর মালভূমিতে তাজিকরা

cri

    এশিয়ার পামীর মালভূমিতে ১৪টি পর্বতশৃঙ্গ সমুদ্র সমতলের তুলনায় ৮ হাজার মিটারেরও বেশি উঁচুতে । এখানকার অধিবাসীরা এ সব পর্বতশৃঙ্গের প্রতি খুব শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

    পামীর মালভূমিতে তাজিক , উইগুর , কিরগিজ ও হুইসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতি বসবাস করে । এদের মধ্যে ৯০ শতাংশ তাজিক । তাদের অধিকাংশই সিনচিয়াংয়ের তাজিক স্বায়ত্তশাসিত জেলায় অধ্যুষিত । মালভূমিতে বসবাসকারী তাজিকের অর্থ রাজমুকুট । আগে তাজিকরা পশু পালন করতো । তারা কৃষি কাজও করতো । পশু পালনের কারণে তাদের স্থায়ী আবাস ছিল না । ১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৯৫৪ সালে তাজিক স্বায়ত্তশাসিত জেলা গড়ে তোলা হয় । চীন সরকারের ব্যাপক সমর্থনে তাজিক জাতির অর্থনীতি দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে । জনগণের জীবনযাত্রার মানও লক্ষণীয়ভাবে উন্নত হয়েছে ।

    তাজিক স্বায়ত্তশাসিত জেলা হচ্ছে তাজিক জাতির সাংস্কৃতিক কেন্দ্র । স্থানীয় গাইড এবুলি বলেন , খ্রীষ্টপূর্ব দশম শতাব্দিতে তাজিকদের পূর্বপুরুষরা পামীর মালভূমিতে থাকতো । তাজিক জাতি শ্বেতাঙ্গ । তারা বংশপরম্পরায় চীনে বসবাস করে ।

    শ্বেতাঙ্গদের নাক উঁচু , চেহারা লম্বা এবং চোখ বড় এবং গভীরে । কেউ কেউ বলে , তাজিক দেখতে গ্রীকের মতো । কিন্তু তাদের ত্বক কৃষ্ণ বর্ণের । কারণ মালভূমিতে সূর্যের অতিবেগনী রশ্মি খুব শক্তিশালী ।

    তাজিকরা নিজেদের স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জাতীয় সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছে । ঐতিহ্যবাহী জাতীয় উত্সব তাদের চালচলনের পরিচায়ক । তাজিকরা ইসলাম ধর্মাবলম্বী। কোরবানিও তাদের অন্যতম প্রধান উত্সব । তাজিকরা কী ভাবে কোরবানি পালন করে ? এ সম্পর্কে স্থানীয় গাইড এবুলি বলেন ,

    কোরবানি পালনের জন্য ছাগল জবাই করা দরকার । সে জন্য আগে থেকে ছাগল ছানাকে বাছাই করা দরকার । সাধারণতঃ সাদা ছাগলের প্রয়োজন । কোরবানিতে যে সব ছাগল জবাই করা হবে , সে সব ছাগলের গায়ে চিহ্ন দেয়া হয় । নীতি অনুযায়ী , ঘরের ছাদের ওপরে ছাগল জবাই করতে হয় । কারণ কোরবানিতে ছাগল জবাই একটি পবিত্র বিষয় । জবাই করার পাশাপাশি ছাগলের রক্ত নোংরা জায়গায় ফেলা যাবে না । জবাই শেষে ছাগলের সব রক্তে ছেলেমেয়েদের চেহারা রং করা দরকার ।

    তাজিকদের ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্য যেমনি তাদের জাতীয় উত্সব , তেমনি তাদের নিত্য দিনের আচার ব্যবহারেও প্রকাশ পায় । যেমন যখন যুবক যুবতীদের সাক্ষাত্ হয় , তখন যুবতী যুবকের হাতের তালু চুম্বন করে । যখন প্রবীণ ও নবীণদের সাক্ষাত্ হয় , তখন প্রবীণরা নবীণদের কান চুম্বন করেন এবং প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নবীণরা প্রবীণদের হাতের তালু চুম্বন করে ।

    তাজিক জাতির সংস্কৃতি সম্পর্কে আরো বেশি জানার জন্য সংবাদদাতা তাজিক জাতির পন্ডিত মাদালহানের সাক্ষাত্কার নেন ।

    মাদালহানের বাড়িটি তাজিক জাতির নিছক স্থাপত্যশৈলীর প্রতীক । বাড়িটি পাথর নিয়ে নির্মিত । স্থাপত্যশৈলীর ক্ষেত্রে হান ও তাজিক জাতির মধ্যে অনেক তফাত্ আছে । হান জাতির বাড়িঘর দক্ষিণ মুখী । কিন্তু তাজিকদের বাড়িঘর পূর্ব মুখী । এর অর্থ বাসা চিরকাল উজ্জ্বল ।

    মাদালহান বলেন , তাজিকরা ঈগলকে বীর বলে চোখে দেখে । তাজিক জাতির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিতে ঈগল সম্পর্কিত বহু গল্প ও লোক সঙ্গীত প্রচলিত । তাজিক জাতির বাদ্য যন্ত্র- ঈগল বাঁশির পেছনেও একটি মর্মস্পর্শী গল্প খুব জনপ্রিয় ।

    অনেক আগের কথা । তাজিক জাতির একটি মেয়ে ও একটি ছেলে গভীর প্রেমে পড়ে । তাদের মালিকের তাদের প্রেম ভাল লাগল না এবং দু'জনকে আলাদা করে দিলেন । পৃথক হওয়ার পর দু'জন পরস্পরের কথা চিন্তা করতো । প্রতি দিন পানি আনার সময় মেয়েটি ছেলের গান শুনতো । ছেলের একটি ঈগল ছিল । মরে যাওয়ার সময় ঈগল ছেলেকে বলল , তার পাখার হাড় দিয়ে বাঁশি তৈরী করা যাবে । তা দিয়ে সংগীত বাজানো যাবে । ছেলেটি এই হাড়ের বাঁশি দিয়ে সংগীতের মিষ্টি সুর বাজাতো । মেয়েটি ঈগলের মতো নাচতে থাকতো । ফলে ঈগলের বাঁশি ও নৃত্যের সৃষ্টি হয় ।

    মাদালহান সংবাদদাতাকে বলেন , ঈগলের দু'টো বাঁশি সাধারনতঃ একসাথে ব্যবহার করা প্রয়োজন । কিনলেও দু'টো একসাথে কিনতে হয় । এটা প্রেমের প্রতি আনুগত্যের পরিচায়ক । তাজিক জাতি নৃত্য ও সংগীত খুব পছন্দ করে । উত্সব ও বিয়ের অনুষ্ঠানে নৃত্য ও সংগীতের অনুষ্ঠান না থাকলে চলে না। গ্রামের সবাই নৃত্য ও সংগীত পরিবেশনে দারুণ পারদর্শী । মালভূমিতে বসবাসকারী তাজিকরা যেমনি নিপুণভাবে নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করতে পারে , তেমনি তাদের দেশ রক্ষার ঐতিহ্য ও বীরত্বও আছে । পামীর মালভূমিতে সুদীর্ঘ সীমান্ত রেখা বিদ্যমান । শত শত বছর ধরে তাজিক জাতির কৃষক ও পশু পালকরা দেশ রক্ষার জন্য সীমান্ত বাহিনীকে সহায়তা করে থাকে । বরফে ঢাকা পর্বতে যখন সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বাধা-বিঘ্নের সম্মুখীন হয় , তখন তাজিক জাতির পশুপালকরা সাহসের সঙ্গে তাদেরকে সাহায্য করে থাকে । তাজিক স্বায়ত্তশাসিত জেলার রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের চেয়ারম্যান মোনি তাবলিট বলেন ,

    গত দু'হাজার বছর ধরে তাজিক জাতি দেশের সীমান্ত রক্ষার জন্য বিরাট অবদান রেখেছে । তাজিকদের প্রগাঢ় দেশপ্রেমিক মনোবল আছে । তারা নিজেদের মাতৃভূমি ও জন্মভূমিকে ভালবাসে । তারা দেশকে ভালবাসে এবং সীমান্ত রেখা রক্ষার জন্য সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে সহায়তা করে ।

    সাক্ষাত্কার নেয়ার কাজ শেষে সংবাদদাতা গ্রামবাসীদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছিলেন । অদূরে তাজিকদের সংগীতের সুর আবার শোনা যাচ্ছিল । উঁচু তুষার পাহাড় থেকে বেজে উঠা মিষ্টি সংগীতের সুর ও উদার নৃত্যে পামীর মালভূমির ঈগল-তাজিক জাতির বীরত্ব যেন সব সময়ই জীবন্ত হয়ে উঠে । (লিলি)