ঘুরতে ঘুরতে যদি আপনাদের ক্লান্তি লাগে, তার জন্য এই উদ্যানপথে রয়েছে বিভিন্ন স্টাইলের কফি বার ও রেস্টুরেন্ট। কফি পান করা ছাড়াও আপনি অত্যন্ত সুস্বাদু কোনো খাবার ও এখানে খেতে পারেন। এখানে ইউরোপীয় স্টাইলের কফি বার যেমন আছে তেমনি শতভাস পেইচিং স্টাইলের চায়ে দোকানও আছে। এ সব দোকান আয়তনে খুব বড় নয়। তবে সাজসজ্জা খুব চোখ চেয়ে দেখার মতো এবং প্রতিটি দোকান নিজস্ব স্টাইলে অনন্য। 'ছোট ঘর' কফি বারের মালিক লি ওয়েই তার নিজের দোকান সম্পর্কে আমাদেরকে জানিয়েছেন, তিনি নিজে হাতে দোকানের ডিজাইন ও সাজসজ্জা করেছেন। কারণ এ ধরনের ইউরোপীয় ধাঁচের বাগিচানগর স্টাইল দেখতে খুব আরামদায়ক ও সুন্দর। ক্রেতারা একে প্রশংসা করে বলেন, 'নিজের ঘরের বৈঠকখানা'।
মানুষ এ ধরনের ইউরোপীয় বাগিচানগর স্টাইল দেখলে আপনাআপনি দোকানে তুকে পড়ে। আমাদের দোকানের সবচেয়ে কম বয়সী ক্রেতার বয়স ১শ' দিনেরও কম। তার মা তাকে কোলে করে নিয়ে আসেন। তার পরিবারের সবাই খাওয়ার জন্য এখানে আসেন। কদিন আগে একদিন আমার এখানে তেমন একটা ভীড় ছিল না, শুধু ছিল তার পরিবারের সবাই। তারা খুব আনন্দ করছিল। দেখে মনে হচ্ছিল ঠিক যেন একটা পারিবারিক পরিবারের পার্টি।
পেইচিং শহরের অন্য এলাকার বার পথের চেয়ে নান লুও কু উদ্যানপথ আরো নিরিবিলি অবসর বিনোদনের জায়গা। একই সঙ্গে ফ্যাশনাবল। তাছাড়া এখানকার গভীর সাংস্কৃতিক আমেজ তো রয়েছেই। এর কারণ হচ্ছে অনেক দোকানের মালিক হচ্ছে শিল্পী অথবা লেখক। ক্যাফে ডি মারগারিটার মালিক ছুয়ান লিং চীনের একজন লেখিকা। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে একবার বেড়াতে এসে তিনি এখানকার নিরিবিলি জীবন গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি সিদ্ধান্ত এখানে দোকান খেলোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। ঠিক যেন গল্প লেখার মতো করে তিনি পরম যত্নে নিজের কফি ঘরটি তৈরি করেন।
আসলে আমার এই উদ্যানপথ পছন্দ করার কারণ হচ্ছে জায়গাটি খুব শান্তি পূর্ণ। আমি এই ধরনের নাগরিক জীবন পছন্দ করি। লেখিকা হিসেবে আমি জীবনকে অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে দেখি। আমার মনে হয়, এই উদ্যানপথ আমাকে পৃথিবীর অন্যতম এক সুন্দরের অনুভূতি দেয়। আমার মনে হয়, মানুষ ইস্পাত ও সিমেন্টের পরিবেশে অনেক দিন জীবন-যাপন করতে করতে এক সময় হাঁপিয়ে ওঠে। তখন আমাদের এ ধরনের শান্ত জীবনে ফিরে আসা উচিত। এই উদ্যানপথ আমাকে একটি গভীর উপলব্ধি এনে দিয়েছে, আর সেটা হচ্ছে একাকী ধীর স্থির জীবনের মধ্যেই সাধারণ জীবনের আনন্দ উপভোগ করা।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, পেইচিংয়ে মানুষের অত্যন্ত দ্রুতগতির জীবনের তুলনায় নান লুও কু উদ্যানপথ হচ্ছে একটি শান্তসৌম্য জায়গা। পর্যটকরা এখানে আসলে পুরনো রাজবংশের স্থাপত্য নিদর্শন ও ভাঙা দেয়াল দেখে যেমন রাজাদের সম্পর্কে কল্পনার জগতে ঢুকে যেতে পারবেন তেমনি সাধারণ নাগরিকদের কথাবার্তা শুনে তা থেকে বেরিয়ে ও আসতে পারবেন। এমনকি উদ্যানপথের দোকানে বেশ পুরোনো আমলের কোনো কাপড় বা সিরামিক ও পেয়ে যেতে পারেন। ঐতিহ্য ও আধুনিকতা, শিল্প ও সাধারণ জীবন, দ্রুত ও ধীরগতি সবই নান লুও কু উদ্যানপথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।
বন্ধুরা, এখন আমি নান লুও কা উদ্যানপথে বেড়াতে যাওয়ার জন্য আপনাদেরকে কয়েকটি টিপস দিচ্ছি। নান লুও কা উদ্যানপথ তোং ছেং জেলার পশ্চিম দিকে অবস্থিত। তার পূর্ব দিকে হচ্ছে দক্ষিণ চিয়াও তাও খৌ সড়ক এবং পশ্চিম দিকে রয়েছে তি আন মেন ওয়াই সড়ক। উত্তর হচ্ছে পূর্ব কু লৌ সড়ক এবং দক্ষিণ দিকে পূর্ব তি আন মেন সড়ক। এর যে কোনো একটা দিয়েই আপনি সেখানে যেতে পারেন। তাছাড়া, নান লুও কু উদ্যানপথের কাছাকাছি চীনের অনেক বিখ্যাত মানুষের পুরোনো বাড়ি রয়েছে। সময় পেলে, আপনারা সে সব জায়গা ও এক নজর দেখে আসতে পারেন।
|