v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-01-09 17:06:47    
অলিম্পিক সাধারণ চীনাদের কাছে আসছে

cri

    ২০০৭ সালে চীনাদের জীবন ও কাজকর্মে সবচেয়ে উচ্চারিত শব্দটির নাম অলিম্পিক । ২০০৮ সালের পেইচিং অলিম্পিক গেমস ঘনিয়ে আসার সংগে সংগে বহু চীনার জীবনের সংগে জড়িয়ে যাচ্ছে অলিম্পিকের বিভিন্ন উপাদান ।

    চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে একজন বৃদ্ধা রয়েছেন । তার নাম ছাও চোও চেং । বয়স তার ১০৩ বছর । তার শরীর বেশ ভালো । কেন না তিনি শরীরচর্চা করতে পছন্দ করেন । ২০০৮ সালে অলিম্পিক গেমস তার দেশের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হবে জেনে তিনি মহা খুশী। তিনি বলেছেন , তিনি যেমন অলিম্পিকের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা দেখবেন , তেমনি নিজের একটি স্বপ্নও বাস্তবায়ন করতে চান । তিনি বলেন ,

    আমি এবারের অলিম্পিকের মশালধারী হতে চাই । এভাবে আমি দেশের সুনাম অর্জন করতে পারবো ।

    বস্তুত অলিম্পিক গেমসের প্রতি বৃদ্ধা ছাও চোও চেংয়ের আগ্রহ বহুদিনের । ২০০৪ সালে এথেন্স অলিম্পিকের মশাল রীলে যখন পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয় , তখন ১০০ বছর বয়সী ছাও প্রখর রৌদ গরম উপেক্ষা করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে এ মশাল রীলে দেখেন এবং মশালধারীদের সংগে একসাথে ফটো তোলেন । আগামী বছর অলিম্পিক গেমস পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হবে । কিভাবে এবারের অলিম্পিকে শামীল হতে পারবেন এবং এবারের অলিম্পিকের একজন মশালধারী হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে , এটাই তার একমাত্র চিন্তা । তার এ আকাংক্ষার জন্য তিনি আপনজনদের উত্সাহ ও অনুপ্রেরণাও পেয়েছেন । তার ছেলে সিয়াও শেং ছিয়াং বলেন ,

    আমার মা এবারের অলিম্পিকের মশালধারী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন । এ ব্যাপারে আমরা সবাই তাকে সমর্থন করি । খবরের কাগজে ও টিভি কেন্দ্রে আসন্ন অলিম্পিক গেমস সম্পর্ক কোনো খবর থাকলে , আমরা সবসময় তাকে জানাই ।

    ছাও চোও চেংয়ের আপনজনরা আমাদের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , নিজের অলিম্পিক স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যে ছাও প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটেন এবং হাঁটার সংগে সংগে নিজের দুটো বাহুর শক্তি বাড়ানোর জন্যে নিয়মিত হাতের ব্যায়াম করেন । যখন পেইচিং অলিম্পক সাংগঠনিক কমিটি অলিম্পিক মশালধারী হওয়ার জন্যে দরখাস্ত আহবান করে , তখনই ছাও আগেভাগেই পাড়া কমিটির কাছে নিজের আবেদন পেশ করেন । তিনি বলেন , যদি তিনি অলিম্পিক মশাল মাথার ওপর ধরার সুযোগ পান , তাহলে সারা বিশ্বের বন্ধুরা পেইচিংয়ের শতাব্দি সমান বূয়সী বৃদ্ধা এবং চীনাদের জীবনের বিরাট পরিবর্তন নিজ চোখে দেখতে পারবেন ।

    বৃদ্ধা ছাওয়ের মত আলো অনেক চীনার নিজস্ব অলিম্পিক স্বপ্ন রয়েছে । পেইচিং মহাকাশ ও বিমান বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র লিয়াং ছেং নিজের প্রচেষ্টার মাধ্যমে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের একজন স্বেচ্ছাসেবক হয়েছে । সে কিছুদিন আগে পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত বেশ কয়েকটি অলিম্পিক পরীক্ষামূলক প্রতিযোগিতায় সেবার কাজে নিয়োজিত ছিল । অলিম্পিকের স্বেচ্ছাসেবক হওয়ায় তার জীবনে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে । তিনি বলেন ,

    আমার শখ ও আগ্রহ আগের তুলনায় একটু আলাদা হয়ে গেছে । এখন অলিম্পিক গেমস সম্পর্কিত খবরাখবরের প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে । "অগ্রণী স্বেচ্ছাসেবক" নামে একটি ছোটখাটো খবরের কাগজ এখন আমার প্রিয় কাগজ । কেন না , এ খবরের কাগজে সবসময় অলিম্পিকের স্বেচ্ছাসেবকদের নানা খবর থাকে । তাছাড়া অলিম্পিক প্লাজা ঠিক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই । আমি ও আমার সহপাঠীরা মাঝেমধ্যে এ প্লাজার সামনে গিয়ে ফটো তুলি এবং ফটোগুলো আমাদের দেশের বাড়িতে পাঠাই । সবাই এ নিয়ে গর্বিত । এখন আমাদের পোষাকেরও কিছু পরিবর্তন হয়েছে । অনেকে আজ হলুদ রংয়ের পোষাক পরতে পছন্দ করেন । কেন না , এ পোষাকে লেখা আছে : সৌভাগ্য পেইচিং । এ পোষাক পরলে সবাই গর্ববোধ করেন ।

    আসন্ন অলিম্পিক গেমসের একজন স্বেচ্ছাসেবক হওয়া এ বছর বহু চীনার সবচেয়ে বড় আকাংক্ষা । পেইচিং চীনা চিকিত্সা ও ওষুধ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ণরত তাইওয়ান প্রদেশের ছাত্রী চেং সু ইয়া বলেছেন , আসন্ন অলিম্পিক গেমসের স্বেচ্ছাসেবক হতে না পারায় তিনি অত্যন্ত মর্মাহত । তিনি বলেন ,

    স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার জন্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের হংকং , ম্যাকাও ও তাইওয়ান কার্যালয়ের কাছে দরখাস্ত করতে বলা হয়েছে । তবে আমি দেরীতে এ খবর পেয়েছি । তাই আমি স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার সুযোগ হারিয়েছি ।

    যদিও শুধু কিছু সংখ্যক মানুষ আসন্ন অলিম্পিক গেমসের স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার সুযোগ পান , তবুও বিশ্বের কাছে একটি সেরা অলিম্পিক গেমস উপস্থাপনের জন্যে বহু সংখ্যক চীনা নিজ নিজ পদ্ধতিতে আসন্ন অলিম্পিককে সমর্থন দিচ্ছেন এবং নিজেদের সাধ্যমত অবদান রাখছেন ।

    পেইচিং তুং সি পাড়া এলাকার সংস্কৃতি ও ক্রীড়া কেন্দ্রে একজন তরুণ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শিখাচ্ছেন , কেমন করে ইংরেজী ভাষায় বিদেশী পর্যটকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেয়া হবে । এ ক্লাশে ৪০ থেকে ৫০জন শিক্ষার্থী রয়েছেন । তাদের গড় বয়স ৫৯ বছর ।

    পেইচিং পৌর সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হলে ৪০ থেকে ৬০ লাখ পেইচিংবাসী ইংরেজী বলতে সক্ষম হবেন । এ সংখ্যা পেইচিংয়ের জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ । এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে পেইচিং পৌর সরকার ও বেসরকারী ভাষা বিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে কিছু সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ।

    তেলজাত পণ্য বিক্রি কাজে নিয়োজিত ছাও ফাং হচ্ছেন পেইচিংয়ের ইংরেজী ক্লাশের একজন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক । তিনি আমাদের সংবদাদাতাকে বলেন , পেইচিংয়ে তার মত কয়েক শ'স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক রয়েছেন । তারা সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছেন । ইংরেজীতে তাদের বেশ দখল রয়েছে । তারা সবাই বিখ্যাত ভাষা বিদ্যালয় থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন । সাধারণ সময় তাদের নিজ নিজ কাজ আছে । প্রতি সপ্তাহান্তে তারা আলাদা আলাদাভাবে বিভিন্ন পাড়া ইংরেজী ক্লাশে ইংরেজী শিখান । ছাও ফাং বলেন , তার ক্লামের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বয়স্ক । তবে লেখাপড়ার প্রতি তাদের গভীর আগ্রহ রয়েছে । তিনি বলেন ,

    এমন বয়সের লোকদের ইংরেজীর মান ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে খারাপ । তবে তাদের উত্সাহ কম নয় । সবাই পরিশ্রম করে লেখাপড়া করেন । ৫৮ বছর বয়সের হু ইয়ুয়ে শেং শিক্ষক ছাও ফাংয়ের ক্লাশের একজন শিক্ষার্থী । কয়েক মাস ধরে লেখাপড়ার পর তিনি যেমন কিছু সহজ ইংরেজী শব্দ শিখে নিয়েছেন , তেমনি ২০০৮ সালের অলিম্পিক গেমস সম্পর্কিত কিছু ইংরেজী বাক্যও আয়ত্ত করেছেন । তিনি ইংরেজীতে কিছু কথা বলেছেন ।

    পেইচিং আপনার জন্যেই । পেইচিং আমার জন্যেই । পেইচিং প্রত্যেকের জন্যেই । পেইচিংয়ে আপনাকে স্বাগতম । আমরা একসংগে বলি , এক বিশ্ব , এক স্বপ্ন ।