ত্রিশ বছর বয়সী স্টিফেন উত্তর-পশ্চিম চীনের নিং সিয়া হুই জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী ইন ছুয়ান শহরে একটি পিত্সা রেস্তরাঁ খুলে বসেছেন । তার দোকানে টেবিলের সংখ্যা মাত্র ৪টি , তবে এ দোকানে ঢুকলে মার্কিন বৈশিষ্ট অনুভব করা যায় ।

    স্টিফেন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অংগরাজ্য থেকে চীনে এসেছেন । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি একটি নির্মাণ কোম্পানী পরিচালনা করছিলেন এবং একটি ব্যালে কোম্পানীর কর্মকর্তা ছিলেন । ২০০৬ সালে লেখাপড়ার জন্য তিনি স্ত্রী ও দু'শিশু সঙ্গে নিয়ে ইন ছুয়ান শহরে চলে আসেন । স্টিলেন সংবাদদাতাকে বলেন , সাংহাই ও থিয়েন চিনসহ বিভিন্ন বড় শহরের খুব দ্রুত উন্নয়ন হলেও ইন ছুয়ান শহরের উন্নয়ন যেন মাত্রই শুরু হয়েছে । তাঁর মতে তিনি খুব ভাগ্যবান যে এমন একটা সময়পর্ব ইন ছুয়ানে এসেছেন ।

    ইন ছুয়ানে পুঁজি বিনিয়োগের অনেক সুবিধা আছে । প্রথমত , ইন ছুয়ান বড় শহর নয় , তাই এখানে নিজের ব্রান্ড পরিচিত করা অনেক সহজ । ইন ছুয়ানে আসার পর আমি জানতে পারি যে ইন ছুয়ান এবং নিং সিয়ার নেতারা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নের জন্য একটি মহা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন । আমিও এই উন্নয়নের অংশদার হতে চাই । আসলে চীনের পশ্চিমাঞ্চল তেমন অনুন্নত এলাকা নয় , এখানে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিরাট সুযোগ আছে , এ অঞ্চল নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জায়গা ।

    বাজার যাচাই করে স্টিফেন বুঝতে পারেন যে ইন ছুয়ানের মানুষ সহজেই নতুন জিনিস ও বিভিন্ন সংস্কৃতির খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন । তাই ইন ছুয়ানে একটি মার্কিন রেস্তরাঁ খোলার পরিকল্পনা আসে তাঁর মাথায়। ২০০৭ সালের জুলাই মাসে তিনি তার পাটনারের সঙ্গে ইন ছুয়ানে প্রথম মার্কিন পিত্সা রেস্তরাঁ খোলেন । স্টিফেন বলেন , পিত্সা যুক্তরাষ্ট্রে ভাতের মতো , পার্টিতে অবশ্যই থাকবে । স্টিফেনের পাটনার লি ছেং নান বলেন :

    কিছু কিছু লোক আমাদের দোকানে এসে বুঝতে পারেন না কি ধরনের পিত্সা খাবেন। তারা আমাদেরকে পছন্দ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায় । তবে বিদেশিরা নিজে থেকেই পছন্দমতো বিভিন্ন উপাদান যোগ করে পিত্সা তৈরি করে । প্রত্যেকের পিত্সা ভিন্ন স্বাদের , ভিন্ন গন্ধের। এখন প্রথম বার আমাদের দোকানে আসা অতিথিরা নিজে থেকে পিত্সা পছন্দের স্বাদযুক্ত বেছে নিতে না পারলেও আমরা আশা করি তারা তা পারবেন । দ্বিতীয় বার আসলে তারা নিজের পছন্দের স্বাদের পিত্সাটি বাছাই করতে উত্সাহিত হবে ।

    পিত্সার বিচিত্র স্বাদগন্ধ নিশ্চিত করার জন্য স্টিফেন সুপারমার্কেট থেকে অনেক উপাদান কিনে আনেন । তিনি বেছে বেছে সেগুলোকেই কাজে লাগান যেগুলো দিয়ে মার্কিন স্বাদ ও গন্ধের পিত্সা তৈরি করা যায় । তা ছাড়া , তিনি সংবাদদাতাকে বলেন , মার্কিন স্বাদ ও গন্ধের পিত্সা বানানের জন্য তাঁর বিশেষ রেসিপি আছে । তিনি বলেন :

    পিত্সা তৈরির টম্যাটো সসের মধ্যে তারতম্য আছে। প্রতিটি পিত্সা রেস্তরাঁরটম্যাটো সস খুব গোপনীয় । আমি আপনাকে আমাদের গোপন সসের কথা ফাঁস করতে পারবো না , তবে এটা বলতে পারি যে আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে সস নিয়ে আসি । কারণ দু'দেশের সসের স্বাদ ও গন্ধ আলাদা , তাই মার্কিন স্বাদের পিত্সা তৈরি করতে চাইলে সস আমদানি করতে হবে , এবং তৈরির পদ্ধতিতেও পার্থক্য আছে ।

    তা ছাড়া , স্টিফেন মনে করেন খাবারের মান , রেস্তরাঁর সেবার মান এবং পরিবেশও খুব গুরুত্বপূর্ণ । স্টিফেনের পিত্সার দোকান খোলার চার মাসের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া , জাপান , নিউজিল্যান্ড , ফিলিপাইনস , যুক্তরাষ্ট্র , কানাডা ও জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের লোকজনকে আকৃষ্ট করেছে । তা ছাড়া , অনেক স্থানীয় মানুষও সবসময় তার দোকানে আসেন ।

    নিং সিয়ায় লেখাপড়া করা চিং ছুন ইউ তৃতীয় বার স্টিফেনের দোকানে খেতে এসেছিলেন । তিনি বলেন , নিজেই পিত্সার উপাদান বাছাই করলে খাওয়াটা আরো মজার হয় । তিনি বলেন :

    আমি এখনকার পিত্সা খুব পছন্দ করি । এই দোকানে আমার পছন্দ করার অনেক আছে । এখানে নিজের ইচ্ছা মত উপাদান বাছাই করতে পারি । আমার মনে হয় , এখানকার পিত্সা সুস্বাদু এবং দামও বেশি নয় । পরে আমি সহপাঠী , শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে এখানে আসবো ।

    যদিও এখনো স্টিফেনের দোকান ছোট , তবে তার একটি বড় পরিকল্পনা আছে । তিনি সারা চীনে যুক্তরাষ্ট্রের পিত্সা জনপ্রিয় করতে চান । এ বড় লক্ষ্যের জন্য তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবেন ।