আগের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী নানা ধরনের ভিটামিনের কথা জানিয়ে ছিলাম । আপনারা জানেন , যদি সবসময় মন খারাপ থাকে বা সহজেই অন্যদের প্রতি উত্তেজনা প্রকাশ পায়, তাহলে তা খুব সম্ভবত কোনো ধরনের ভিটামিনের অভাবের কারণেই ঘটছে । বিশেষ করে নারীদের জন্য এ ধরনের অবস্থা খুব অসম্মান ও অস্বস্তিকর । আপনারা কি আপনাদের মনকে শান্ত ও মেজাজকে নরম করে সবার প্রিয় নারীতে পরিণত হতে চান ? তাহলে অবশ্যই এ অনুষ্ঠান মন দিয়ে শুনবেন ।
মা'দের যদি মাঝে মাঝে রাগের উদ্রেক হয় । হয়তো সবাই মনে করেন এটা স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য। কিন্তু যদি সবসময় অন্যদের সঙ্গে রাগা -রাগি করতে হয় বা নিজেদের মন সসময়ই খারাপ থাকে ,তাহলে ধরে নিতে হবে খুব সম্ভবত শরীরে কোনো ভিটামিনের অভাব রয়েছে । যেমন ভিটামিন বি-৬, তা শরীরের টিপটোফান, চিনি ও এসট্রিনের রাসায়নিক রূপান্তরের সঙ্গে সম্পর্কিত । নারীদের ঋতুকালীন সময় ভিটামিন বি -৬-এর প্রয়োজনের আগের চেয়ে বেশি হবে । তখন ভিটামিন বি-৬ যুক্ত খাবার বেশি খাওয়া তাদের দেহ ও মনের জন্য সহায়ক । যেমন জৈব- শাক সবজির মধ্যে প্রচুর ভিটামিন বি -৬ রয়েছে । যদি ভিটামিন বি -৬ খান, তাহলে প্রতিদিন সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ মিলিগ্রাম পরিমাণ খাওয়া ভালো । শরীরে এর অভাব হলে সহজেই উত্তেজনা দেখা দেয়, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা,সহজেই ক্লান্তি বোধ করা এবং কারো কারো ক্ষেত্রে বিষন্নতা ঘীরে থাকে ।
মাংসের মধ্যে প্রচুর ভিটামিন বি -১২ রয়েছে । নারীরা দেখা যায় পুরুষদের চেয়ে কম মাংস খায় এবং কোন কোন নারী মোটেই মাংস খায় না । এ কারণে যদি তখন ভিটামিন বি -১২ এর অভাব দেয়, তাহলে ব্যায়ামের সময় সহজেই ক্লান্তি চলে আসবে এবং উদরাময়, এ্যানিমিয়া ও মুখের পীড়া দেখা দেবে । যা শরীর ও মনকে বিমর্ষ করে ফেলে ।
ভিটামিন বি- ১ এর অভাব হলে পা ফুলে যাবে , মন খারাপ লাগবে , ক্লান্তি আসবে ও নিজেকে শক্তিহীন মনে হবে । এছাড়াও স্নায়ুর ওপর চাপে অসুস্থ হয়ে পড়া সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবেন । বিবাহিত নারীদের দীর্ঘকাল ধরে গর্ভনিরোধক ওষুধ খাওয়ার ফলে সহজেই ভিটামিন বি- ১ এর অভাবে ভুগতে হবে । তখন প্রতিদিন ঠিক পরিমাণে ভিটামিন বি -১ খাওয়া খুব দরকার ।যাতে সুখী মন ও শান্ত মেজাজ বজায় রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে।
অস্বাভাবিক ঋতুচক্র বা যেসব নারীদের ঋতুকালীন সময় কম তাদের শরীরে সহজেই ম্যাগনেশিয়াম ও লৌহ উপাদানের অভাব হবে । কিছু নারী মাংস ও সবজি খেতে পছন্দ করে না ,শুধু মিষ্টি ও কেক খেতে পছন্দ করে । দীর্ঘকাল ধরে যদি এ অভ্যাস বজায় থাকে, তাহলে শরীরের লৌহ উপাদান একদম কমে যাবে ।
বন্ধুরা, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো বর্তমানে নানা ধরনের রান্নার পাত্র উত্পাদিত হচ্ছে। এখন ইস্পাতের পাত্র দিয়ে খাবার রান্না করা লোকসংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কম হওয়ার কারণে লৌহের অভাব রয়েছে এমন নারীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেশি হবে। আসলে লৌহের উপাদান মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে । শরীরের রক্ত সেলে ও মাংসপেশিতে প্রোটিনের সৃষ্ট ইস্পাত উপদানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে । ইস্পাত উপাদান কম থাকলে সহজেই রক্তাল্পতা ,মস্কিষ্কের ক্লান্তি, অমনোযোগী,স্মরণ শক্তি কমে যাওয়া, মানসিক অস্থিতিশীলতা এবং সহজেই রাগ হওয়া ও কান্না পাবে । এসব অনুভব বা অবস্থা নারীদের স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি করবে ।
নারীদের মনের স্বাস্থ্যের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হবে জিংকাম । বেশি চিনি বা মদ খায় এমন ব্যক্তিদের শরীরে জিংকাম হজমে সাহায্য করবে । কম মাংস ও বেশি মিষ্টি খাওয়া নারীরা সহজেই জিংকাম অভাবজনিত রোগে আক্রান্ত হবে । দীর্ঘকাল ধরে জিংকামের অভাব হলে, মনে বিষন্নতা ও অস্থিতিশিলতা দেখা দেবে । বিবাহিত নারীদের জিংকামের অভাব থাকলে, স্বামীর সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণ দেখা দেবে এবং পরিবারের অন্য আত্মীয়স্বজনের সঙ্গেও সম্পর্ক ভাল রাখতে পারবে না ।
|