v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-01-08 21:04:39    
শুভ্র তুষার , শুভ নববর্ষ!

cri
    ক,খ,ঙ : প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা, শুভ নববর্ষ!

    কঃ প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা, আমি ইয়াং ওয়েই মিং। খুব দ্রুত ২০০৭ সাল চলে গেলো আর চলে এলো২০০৮ সাল । অনুষ্ঠানের শুরুতেই শ্রোতা বন্ধুরা আপনাদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আশা করি নতুন বছরে আপনারা আরো সুখী হবেন, আর সুস্থ থাকবেন।

    খঃ আমি আবাম সালাউদ্দিন। আমিও আপনাদের জানাচ্ছি আগত নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা । এবং পাশাপাশি গত বছরে আমাদের অনুষ্ঠানের মান উন্নয়নে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করার জন্য আপনাদের প্রতি আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা । আপনাদের উত্সাহে আমাদের অনুষ্ঠানের মান দিন দিন উন্নতি হচ্ছে।

    কঃ আজকের অনুষ্ঠানে একজন নতুন বন্ধু আমাদের সঙ্গে অনুষ্ঠান উপস্থাপন করবেন। তার নাম হাসান। হাসান, আপনি শ্রোতা বন্ধুদেরকে আপনার পরিচয় জানিয়ে দিন।

    ঙঃ আমার নাম হাসান, আর আমি এয়ারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি।

    ওয়েই মিং, ২০০৭ সাল দেখতে দেখতে চলে গেছে, এসে গেল ২০০৮ সাল। আমি জানি ২০০৮ সাল হবে চীনা জনগণের জন্য একটি খুব উল্লেখযোগ্য বছর। কারণ অলিম্পিক গেমস এ বছরই পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হবে।

    কঃ হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। ২০০৮ সালে আমরা সিআরআই-এর বাংলা বিভাগের শ্রোতা বন্ধুদের জন্য আরো সুন্দর এবং আরো বৈচিত্রময় অনুষ্ঠান তৈরী করবো। আশা করি বন্ধুরা আগের মতো ভবিষ্যতেও আমাদের অনুষ্ঠানের উন্নয়নে সহায়তা দিয়ে যাবেন।

    খঃ ওয়েই মিং, আমি মনে করি আজকের বিশেষ অনুষ্ঠানটি কী রকম হবে তা শ্রোতা বন্ধুদের জানিয়ে দেয়া উচিত । তাই না? তারা তো এখন অপেক্ষায় আছেন।

    কঃ হ্যাঁ, আমি বুঝতে পেরেছি। অনুষ্ঠানটি এখনি্ শুরু করবো। কিন্তু প্রথমে একটি ধাঁধা আপনাদের শোনাবো। এই ধাঁধার উত্তর হলো আজকের অনুষ্ঠানের বিষয়।

    এক পিস, তিন পিস, পাঁচ পিস,

    সাত পিস, দশ পিস, শত পিস,

    হাজার পিস, লক্ষ পিস, অসংখ্য পিস

    কাশ ফুলের ওপর পড়ে মিশে যায়।

    খঃ ও, আমি এর উত্তরটি জানি। কিন্তু এখন বলবো না। বরং আরেকটি ধাঁধা বলি। উত্তর কিন্তু একই হবে।

    এই ফুলটি খুব আশ্চর্য, তার কোনো পাতা নেই, এবং কেউ তাকে ফোটাতে পারে না। শীতকালে উত্তরীয় বাতাস বয়ে যাওয়ার পর, দেখা যায়, সেই ফুলগুলো ফুটে উঠেছে আর সারা পৃথিবী হয়েছে সাদা।

    ঙঃ হ্যা, আপনাদের দু'জনের ধাঁধার উত্তর আমি কিন্তু জানি। আর তা হচ্ছে শুভ্র তুষার।

    কঃ হ্যাঁ, হাসান ঠিকই বলেছেন। আপনি তো চীনে থেকেছেন অনেক বছর, তুষার পাত দেখেছেন অনেক বার। কিন্তু এখনো কি মনে আছে, প্রথম বার তুষার কবে দেখেছিলেন?

    ঙঃ

    কঃ তখন কেমন লেগেছিল?

    ঙঃ

    কঃ আচ্ছা, আপনি তো এখন প্রতি বছরে তুষার দেখতে পারেন। কিন্তু গ্রীষ্ম মন্ডলীয় অঞ্চলের শ্রোতা বন্ধুদের কাছে তুষার হয়তো এক রকম নতুন জিনিস। আমি কয়েকজন বাঙালী বন্ধুর সাক্ষাত্কার নিয়েছি। তারা পেইচিং-এ আছেন, আর প্রথম বারের মত তুষার দেখার সময় তাদের অনুভূতি কেমন ছিল? আসুন, আমরা একসাথে শুনি।

    (রি )

    (সঙ্গীত)

    খঃ তুষার পড়া দেখতে আমার দারুণ ভাল লাগে। পড়ার পর তা ধীরে ধীরে বরফ হয়ে যায়। মনে হয় শুচি শুভ্র শিউলীরা সৌরভ ছড়িয়ে দিয়ে সবুজ ভূমিকে ঢেকে দিচ্ছে তার আলতো ছোঁয়ায়।

    কঃ তুষার খুব হালকা। তার এক পিসের ওজন মাত্র ০.২ থেকে ০.৫ গ্রাম। কিন্তু যতই হালকা হোক না, সব তুষারেরই ছয়টি কোণ আছে।

    ঙঃ তাই তো বলি প্রকৃতি নিজেই একটি অত্যাশ্চর্যের বিষয়। তার রূপের তুলনা নেই।

    কঃ ঠিক বলেছেন। চীনের ভূখন্ড খুব বড় বলে এখানে গ্রীষ্ম-মন্ডলীয়, উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয়, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল এবং শীতল অঞ্চল সব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাই উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে পুরোপুরি ভিন্ন দৃশ্য দেখা যায়। যেখানে শীতকালে তুষার পড়ে সেখানে তুষার সংক্রান্ত বৈশিষ্টের সংস্কৃতি গড়ে উঠে। হাসান, সংস্কৃতির কী বিষয় নিয়ে আপনি সবচেয়ে বেশি আগ্রহী।

    ঙঃ খাবার, অবশ্যই। চীনের খাবার খুব বিখ্যাত। খুব মজাদার।

    কঃ আচ্ছা, তাহলে এখন আমরা তুষার পড়ার সময় চীনা মানুষের পছন্দের খাবার নিয়ে কিছু কথা বলবো।

    ঙঃ হ্যাঁ, বলুন।

    কঃ চীনের একরকম বৈশিষ্টময় রান্নার পদ্ধতি আছে। তাহলো হটপট। চীনা ভাষায় আমরা বলি 'হুও কুও'। আসলে হটপটের কয়েক রকম পরিবেশনা আছে। সালাউদ্দিন, আপনি কি কখনো হটপট খেয়েছিলেন?

    খঃ হ্যাঁ, ১৯৯৯ সালে।

    কঃ আচ্ছা, আর হাসান? আপনি?

    ঙঃ আমিও খেয়েছি চীনে আসার প্রথম বছর।

    কঃ আসলে হটপট রান্নার পদ্ধতি খুব সহজ। প্রথমে পানি ফুটাতে হয়। সেই ফুটন্ত পানিতে পাতলা করে স্লাইস করে দিতে হয় খাশির মাংস বা গরুর মাংস । তারপর ইচ্ছে মতো সব্জী কেটে কয়েক বার ধুয়ে নিন। পানি সিদ্ধ হওয়ার পর মাংস ও সব্জী পানির ভেতরে ছেড়ে দেন। সিদ্ধ হলে তা উঠিয়ে নিয়ে হটপটের সসেজের সঙ্গে খাওয়া হয়।

    ঙঃ আমি দেখেছি, হটপটের কয়েক রকম পটও আছে। যেমন ব্রোঞ্জের পট নিচে কাঠের কয়লা দিয়ে জ্বলিয়ে গরম করতে হয়। সেটা খুব ঐতিহ্যিক। এখন প্রধানত ইনডাকশন কুকার দিয়ে রান্না করা হয়। তা আরো সুবিধাজনক এবং পরিষ্কার।

    খঃ হ্যাঁ, এবং পটে যে সুপ মেশানো হয়, তাও অনেক ধরনের । কিছু কিছু সুপে বিভিন্ন মশলা বা স্বাস্থ্য সহায়ক ওষুধ দেয়া হয়, অথবা শুধু পানি, আর কিছুই দেয়া হয় না।

    ঙঃ বাহ, বাইরে ঠান্ডা বরফ পড়ছে, ঘরের ভেতরে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুরা হটপটের পাশে বসে গল্প করে গরম গরম খাবার খাই, কি যে চমত্কার লাগে!

    কঃ সত্যি। অমিত হাবিব চলতি বছর প্রথম বারের মতো বরফ দেখেছেন। এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রথম বার হটপট খেয়েছেন। আমরা এখন শুনি তার অনুভূতি কী।

    কঃ আমিও আশা করি তার এই বাংলাদেশে হটপট দোকান খোলার ইচ্ছা পুরণ হবে। তখন বাংলাদেশের বন্ধুরাও তা খেতে পারবেন। হটপট খাওয়ার সময় চীনা মানুষ ঝাল একটু বেশি খায়। শীতকাল খুব ঠান্ডা তো। অন্যান্য রান্নার খাবার দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায়। কিন্তু হটপট খাওয়ার সময় রান্না আর খাওয়া একই সঙ্গে চলতে পারে। তাই আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুরা গল্প করার পাশাপাশি খাবার খেয়ে থাকে। খুব মজা। মাদাম লিউ খুব ভাল হটপট রান্না করতে পারেন। তিনি তার রান্নার পদ্ধতি এখন শ্রোতা বন্ধুদের জানাচ্ছেন।

    খ,ঙঃ তার কথা শুনে এখনই হটপট খাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে।

    কঃ হা হা, এখন আমি আরেক রকম খাবারের কথা আপনাদের বলবো। তার নাম হলো বিং থাং হু লু, মানে চিনির সঙ্গে হাওথর্ন। হাওথর্ন আকৃতি এবং স্বাদে অনেকটা 'বরই' এর মত। তবে রঙটা খুব সুন্দর, টকটকে লাল। তা হলো পেইচিংয়ের এক রকম বৈশিষ্টময় খাবার।

    ঙঃ হ্যাঁ, আমি দেখেছি, লাল রং-এর গুচ্ছ গুচ্ছ, বাচ্চারা খুব খায়।

    খঃ আমি খাই নি। ওয়েই মি, সেটা কী রকম?

    কঃ বাশ অথবা কাঠের একটি কাঠি লম্বা সূচির মতো করে তারপর সুইর মতো হাওথোর্ন একটি একটি করে তার গায়ে গেঁথে দেয়। চিনি গরম করার পর সিরা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাওথোর্ন তার ভেতরে ভিজিয়ে নেয়া হয়। ঠান্ডা হওয়ার পর চিনি শক্ত হয়ে পড়ে। তখন খাওয়া যায়।

    ঙঃ হাঁ, তা দেখতে খুব সুন্দর এবং খেতেও টক মিষ্টি মিলে খুব মজা লাগে। এবং হাওথোর্নের পরিবর্তে ছোট কমলা ও কলাসহ বিভিন্ন রকমের ফলও দেয়া যায়।

    কঃ ঠিক বলেছেন। হাওথর্ন সত্যিই এক রকম খুব ভাল খাবার। এ খাবার হজম করার জন্য সহায়ক। খাবারে তেল বেশি হলে কিছু হাওথোর্ন খেতে ভাল। জানি না হাওথর্ন বাংলাদেশে আছে কি না। না থাকলেও সমস্যা নেই, সুযোগ পেলে পেইচিংয়ে আসার পর বন্ধুরা হাওথর্ন নিশ্চই খেয়ে দেখতে পারবেন।

    আর চীনা মানুষ থাং হু লু খেতে পছন্দ করে তার আরেকটি কারণ আছে। কারণ হাওথর্ন গোল গোল এবং লাল রঙয়ের । তাদের গুচ্ছ করার অর্থ সুখী পরিবারের সদস্যদের মিলেমিশে থাকার প্রতীক।

    খঃ আচ্ছা।

    কঃ হ্যাঁ, বন্ধুরা, এখন বিং থাং হু লু সম্পর্কে একটি গান আপনাদের শোনাবো।

    কঃ আমরা খাবার সম্পর্কে কিছু বলেছি। এবার কাপড় সম্পর্কে কিছু বলি। সালাউদ্দিন, আপনি পেইচিংয়ে আসার সময় তো শীতকাল ছিল। আসার পরে প্রথম কাজ কী ছিল?

    খঃ তখন তো সবচেয়ে জরুরী কাজ ছিল আমি আর পরিবারের সদস্যদের জন্য গরম কাপড় কেনা।---

    কঃ উত্তর চীনের শীতকালে অবশ্যই একটি পাখির পালোক দিয়ে তৈরী কাপড় পরে থাকেন। আগে মানুষরা তুলার জ্যাকেট ও ট্রাউজার্স পরতেন। এখও মনে আছে যে ছোটবেলায় প্রতি বছরে দাদী আমার জন্য এক সেট নতুন তুলা জ্যাকেট ও ট্রাউজার্স বানাতেন। নববর্ষের সময় আমি পরতাম। নতুন কাপড় পরে খুব খুব খুশী হতাম। সালাউদ্দিন, শুনেছি আপনি সাইবেরিয়ায় গিয়েছিলেন। সেখানে তো চীনের চেয়ে আরো বেশি ঠান্ডা। সেখানকার মানুষ কী পরেন?

    খঃ---

    কঃ আচ্ছা। হাসান, এখন পেইচিংয়ের শীতকালের ব্যাপারে আপনি কি অভ্যস্ত হয়েছেন?

    ঙঃ হ্যাঁ, মোটামুটি।

    কঃ শীতকালের সময় অবশ্যই বেশি কাপড় পরে থাকবেন। নইলে ঠান্ডা লাগবে। বরফ পড়ার সময় মাঝে মাঝে মানুষের জীবনে কিছু অসুবিধা এনে দেয়। যেমন চলাচলের জন্য খুব অসুবিধা হবে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার ভাল দিকও আছে। হাসান, তুষার পড়ার পর ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীরা কী কী করে?

    ঙঃ বরফ ছোড়াছুড়ি, তুষার মানব তৈরি

    কঃ আর আমি একটি মজার ঘটনা দেখেছি, তা হলো গাড়ি'র গ্লাসের উপরের তুষারের উপরে তৈরী ছবি।

    ঙঃ হ্যাঁ, তুষার পড়ার পর গাড়ির গ্লাসে বিভিন্ন রকমের ছবি দেখা যায়। কেউ কেউ মানুষের হাসি মুখ তৈরী করে, কেউ কেউ নিজের হাতের দাগ দেয়। খুব মজা।

    কঃ হ্যাঁ, দেখতে মজা লাগে। কিন্তু গাড়ি'র মালিকের তা দেখে কেমন লাগে তা কে জানে।

    খঃ আমি আমাদের কোটইয়ার্টে দেখেছি অনেক শিশুরা তুষার দিয়ে পুতুল তৈরী করে, পরষ্পরের গায়ে তুষার ছিটিয়ে দেয়, এবং শুধু শিশুদের কেন, বড় মানুষও তুষার নিয়ে খেলে। তারা তখন শিশু'র মতো খুব আনন্দ প্রকাশ করে।

    কঃ ঠিক বলেছেন। তুষার পৃথিবীকে সাদা রং -এ সাজানোর সঙ্গে সঙ্গে যেন মানুষের হৃদয়কেও পরিশুদ্ধ করেছে। এই শুভ্র পৃথিবীকে দেখে শুধু তাকে আলিঙ্গন করার ইচ্ছা হয়। পেইচিংয়ের চেয়ে আরো উত্তর দিকে তুষার সম্পর্কিত খেলাধুলা আরো বেশি।

    খঃ যেমন উত্তর-পূর্ব চীন, যাকে বলা যায় তুষারের মাতৃভূমি, বরফের পৃথিবী।

    কঃ ঠিক বলেছেন। প্রাচীনকাল থেকেই চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জাতির মানুষদের স্কী ও শিকার করার অভ্যস আছে। আজকাল স্কী জনসাধারণের মধ্যে অধিক থেকে অধিকতর জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

    আমাদের সহকর্মী খং জিয়া জিয়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লোক। তাহলে শুনুন তার অভিজ্ঞতা ।

    "শীতকাল শুরু হলে উত্তর-পূর্ব চীনের অনেক পাহাড় তুষারে ঢেকে যায়। ফলে বহু জায়গা তুষার স্কিয়িং-এর জন্য প্রাকৃতিক মাঠে রূপ নেয়। সেখানে সবাই দারুন মজা করে, স্কিয়িং করে এবং কুকুর বা ঘোড়ার স্লেজগাড়িতে করে বরফের উপরে ঘুরে বেড়াতে খুব মজা পায়।

    হারবিন হলো বিশ্বের বরফ ও তুষার সংস্কৃতির কেন্দ্র। প্রতি বছরের শীতকালে সেখানে বরফ উত্সব আয়োজিত হয়। এই উত্সবে বরফ ভাষ্কর্য, তুষার ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং অনেক রকমের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। পর্যটকরা এখানে স্কিয়িং করতে পারেন, সুন্দর তুষারের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন এবং হরেক রকমের বরফ খেলা খেলতে পারেন। আমরা স্থানীয় মানুষ তুষার দিয়ে ভাস্কর্য বা পুতুল তৈরী করি, তুষারের গান গাই, তুষারের মধ্যে ছবি তুলি এবং মাঝে মাঝে তুষার খাইও। বরফ দিয়ে তৈরী ভাষ্কর্য শিল্প যে কত আকর্ষণীয়! নানা ধরনের ভাস্কর্যের মধ্যে রঙবেরঙের বাতির আলোয় রাতের বেলায় দেখতে রীতিমতো চোখ ধাঁধিয়ে যায়। প্রতি বছরের তুষার উত্সবে অনেক দেশের শিল্পীদেরকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারা বরফ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম তৈরী করেন। সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং শিল্পীদের চমত্কার নিজস্ব নকশা মিলিয়ে অপূর্ব এক বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সবাই মন ভরে উপভোগ করে এই পরিবেশ। "

    কঃ আসলে তুষার কেবল বিনোদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু তাই নয় তা কৃষির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিতও। দীর্ঘকাল ধরে কৃষি জমিতে চাষ করার পাশাপাশি কৃষকরা অনেক প্রবাদ সংগ্রহ করে আসছে। " শীতকালের তুষার মঙ্গল বর্ষের লক্ষণ" দেশজুড়ে প্রচলিত প্রবাদ। শীতকালে তুষার পড়লে কৃষি জমির পোকা মারা যাবে । তা ছাড়া, বসন্ত আসার পর গলে যাওয়া তুষার শুকনো জামির জন্য পানি যোগাতে পারে। এটা বসন্তের ফসলের জন্য খুব উপকারী। উপরন্তু তুষার গলে যাওয়ার পর ভুগর্ভস্থ পানি বাড়ানো যায়। পরে এসব পানি খাওয়ার পানি হতে পারে এবং জলসেচ কাজে লাগানো যায়। সুতরাং একটি প্রবাদে বলা হয়েছেঃ " শীতকালে গমের ওপর তিনটি তুষারের লেপ , আসন্ন বছরে বালিশের পাশে কেবল রুটি"।

    খঃ ঠিকই বলেছেন। প্রকৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে মানুষ কথা একটি অঞ্চলের নিবিড় সম্পর্ক। তা স্থানীয় সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়। যেমন বৃষ্টি বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

    কঃ হ্যাঁ, আমার বিশ্বাস বৃষ্টি সম্পর্কে বাংলাদেশের অনেক প্রবাদও আছে। তাই না সালাউদ্দিন?

    খঃ হ্যাঁ, নিশ্চয় আছে। যেমন ইনো বৃষ।টি দুটো ভাত।

    কঃ তুষার সম্পর্কে চীনের অনেক প্রবাদ আছে।

    শীতের তুষার পড়া মানে মঙ্গল বর্ষের আসন্ন লক্ষণ। তার মানে হল, আসন্ন বছরে বাম্পার ফলন সম্ভব হবে।

    'তুষারের সঙ্গে হিম' মানে দুর্দশা নিয়মিত ঘটে । যেমন ধরুন, বাইরে তুষার পড়ছে, খুব শীত পড়ছে । হঠাত বাসার হিটার ব্যবস্থা বিকল হয়ে গেছে। এটা মানে " তুষার সঙ্গে হিম"।

    'তুষার পড়ার সময় জ্বালানী সরবরাহ' মানে যখন কেউ অসুবিধায় পড়ে ঠিক তখনই অন্যরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। যেমন ধরুন , হাসানের বন্ধুর মানিব্যাগ হারিয়েছে, ঠিক এ সময় আপনি তাকে কিছু টাকা দেন। এটা মানে তুষার পড়ার সময় জ্বালানী সরবরাহ।

    তা ছাড়া, তুষার সম্র্পকে কোনো কোনো প্রবাদে শিক্ষা গ্রহণ ও পড়াশুনার কথা প্রতিফলিত হয়।

    " ছেনমেন লি শিউই "প্রবাদে বলা হয়, শিক্ষক ঘুমিয়ে পড়ার সময় তাকে বিরক্ত না করার জন্য তুষারের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকাতে হয় অনেক ক্ষণ।

    "ইং সুইয়ে তু শু" প্রবাদে বলা হয়, বরফের প্রফলিত আলোর মাধ্যমে বই পড়া। তুষার সম্পর্কে চীনের কবিতাও অনেক বেশি। যেমন চেয়ারম্যান মাওয়ের "ছিন ইউয়ান ছুন সুইয়ে"

    কঃ আজকের কবিতা দিয়ে আজকের অনুষ্ঠান শেষ করছি। আশা করি নতুন বছরে সকল শ্রোতা বন্ধুর জীবন আরো সমৃদ্ধ হবে, সুন্দর হবে।