v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-01-08 21:00:27    
ভাষ্কর্যশিল্পী উ ওয়েই শান

cri
    ভাস্কর উ ওয়েই শানের বয়স কম হলেও তার সাফল্য বেশ বড়। সম্প্রতি তাঁর চীনের ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের ৩০০টি ভাষ্কর্য দেশ-বিদেশের অনেক শিল্পবোধ্যাদের বিশ্লেষকদের প্রশংসা পেয়েছে। অনেকেই তার ভাষ্কর্য সংরক্ষণ ও প্রদর্শনীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উ ওয়েই শানই একমাত্র এশীয় শিল্পী যিনি দি রয়েল সোসাইটি অব ব্রিটিশ স্কাল্পটরস এবং দি ব্রিটিশ রয়েল পোর্ট্রেট স্কাল্পচার এসোসিয়েশনের সদস্য।

    উ ওয়েই শান হলেন চীনের নান চিং বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক। সম্প্রতি তিনি চীনের জাতীয় চারুকলা জাদুঘরে একক প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। প্রদর্শনীতে তার ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের" ধারাবাহিক ভাষ্কর্য প্রদর্শিত হয়। এ প্রদর্শনীতে কনফুসিয়াস, দাওইজমের লাওজি, কৌতূক শিল্পী মা সান লি এবং চীনের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ইয়াং জেন নিংয়ের ভাষ্কর্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এর মধ্যে চীন একীকরণের প্রথম উদ্যোক্তা রাজা ছিন শি হুয়াংয়ের ভাষ্কর্যও রয়েছে। উ ওয়েই শান ছিন শি হুয়াংয়ের শরীরটি তৈরি করেছেন পাহাড়ের আকৃতিতে এবং মাথায় রাজমুকুট পরিয়ে দিয়েছেন। এটি রাজার মর্যাদা ও শক্তিমত্তার প্রতীক, ভাস্কর্যটির মুখ না দেখেও যা উপলব্ধি করা যায়। চীনে দাওইজমের উদ্যোক্তা লাও জি'র ভাষ্কর্যটি ১৬ মিটার উঁচু। তার গায়ে পরিয়ে দেওয়া হয়েছে চীনের ঐতিহ্যবাহী লম্বা পোশাক, ভাবভঙ্গী খুবই প্রাকৃতিক। এই ভাষ্কর্যের থিম হচ্ছে ভালভাবে দাও তন্ত্রের মর্মবস্তু অনুধারণে সাহায্য করা। চীনের প্রয়াত জনপ্রিয় কৌতূক শিল্পী মা সান লি'র ভাষ্কর্য দেখে দর্শকদের মনে প্রথমেই যেন তাঁর রসবোধের কথাই মনে পড়ে যায়।

    এসব ভাষ্কর্য দেখে দর্শকরা যেন চীনের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক জগতে ঢুকে পড়েন। চীনের বিখ্যাত চারুকলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইন শুয়াং সি প্রদর্শনীটির নাম দিয়েছেন "ওয়েন সিন সু হুন" । তিনি মনে করেন উ ওয়েই শানের ভাষ্কর্যের মধ্যে চীনের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের মনোজগত প্রতিফলিত হয়েছে। অধ্যাপক ইন বলেন:

    "উ ওয়েই শান আসলে এসব ব্যক্তিত্বদের ভাষ্কর্যের মাধ্যমে চীনা সংস্কৃতির বৈশিষ্ট এবং মর্ম প্রকাশ করতে চেয়েছেন। তাঁর ভাষ্কর্য চীনের হাজার হাজার ঐতিহাসিক সংস্কৃতির ছায়া পাওয়া যায়। এসব ভাস্কর্য ব্যক্তিত্বরা হলেন চীনা সংস্কৃতির শেকড়। উ ওয়েন শান যেন চীনা সংস্কৃতি'র কেন্দ্রীয় অংশটি সংক্ষেপে কয়েকজন ব্যক্তিত্বের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন। এতে তাঁর ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও দায়িত্বশীলতা বোঝা যায়।"

    কয়েক বছর আগে নেদারল্যান্ডসের রানী বিয়েট্রিক্স উ ওয়েন শানের ভাষ্কর্যগুলো দেখে খুব অবাক হয়ে যান। তিনি বলেছেন, মিস্টার উ'র ভাষ্কর্য দেখে বোঝা যায় এসব ব্যক্তি চীনের ৫ হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের ফসল। প্রশ্ন হলো উ ওয়েই শান কিভাবে চীনের ৫ হাজারের সুবিস্তৃত ইতিহাস ধারণ করে এবং কোন অনুপ্রেরণা থেকে এসব চমত্কার ভাষ্কর্য তৈরী করেছেন? এই জিজ্ঞাস নিয়ে সিআরআই-এর সংবাদাতা উ ওয়েই শানের সঙ্গে কথা বলেছেন।

    উ ওয়েই শানের বয়স এখন ৪৪ বছর, কিন্তু দেখতে আরো তরুন। তিনি ঐতিহ্যবাহী চীনা পোশাক পরেন। তার চোখের দৃষ্টি খুব স্বচ্ছ এবং উজ্জ্বল। দেখলেই মনে হয় প্রতিভাদীত দু'টি চোখ, ব্যবহারও অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে তিনি চীনের ঐতিহ্যিক কবিতা পড়েন। এতে তার চীনা সংস্কৃতি বোধ অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে।

    উ ওয়েই শান চীনের চিয়াং সু প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তার স্বপ্ন ছিল বিজ্ঞানী হওয়ার। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফল ভাল হয়নি বলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হননি। পরে তিনি উ সি শহরের একটি কারিগরী প্রশিক্ষণ স্কুলে ভর্তি হন। উ সি হলো চীনের মাটির পুতুলের জন্মস্থান। মাটির পুতুল বানানো শেখার সময় উ ওয়েই শান অনেক লোকশিল্পীদের সঙ্গে পরিচিত হন। এর মধ্যে ৮০ বছরের প্রবীণ একজন শিল্পী উ ওয়েই শানের উপরে গভীর ছাপ ফেলেন। তার কাছ থেকে উ ওয়েই শান চীনের ঐতিহ্যিক চারুকলার সৌন্দয্য আবিষ্কার করেন।

    পরে নিজের চেষ্টায় উ ওয়েই শান নান চিং নর্মাল ইউনিভার্সিটির চারুকলা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনার সুযোগ পান। সেখানে পড়াশোনা শেষে তিনি শিক্ষক হিসেবে কয়েক বছর কাজ করেন। এরপরে তিনি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে ভাষ্কর্য শেখেন। এরপর যখন আবার চীনে ফিরে এলেন সে সময় চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে উ ওয়েই শান নতুন এক মূল্যবোধ গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন:

    "পশ্চিম ও পূর্ব, ঐতিহ্যিক ও আধুনিক দুই দিক থেকে তুলনা করে আমার মূল্যবোধ গড়ে ওঠে। আমার শিল্পকর্মের ভিত্তি হচ্ছে চীণের কবিতা। চীন হলো কবিতার দেশ। কবিতার মধ্যে চীনা মানুষের বুদ্ধি, কল্পনা ও তন্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে আমি অনুপ্রেরণা খুঁজে পাই।"

    বিংশ শতাব্দীর নববইয়ের দশক থেকে উ ওয়েই শান চীনের ঐতিহ্যিক ব্যক্তিত্বদের ভাষ্কর্য তৈরী করতে শুরু করেন। তাদেরকে ভালভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য তিনি মনোবিদ্যা শিখেছেন। পরে তিনি "লোকন শিল্পের মনোবিদ্যা" নামের ২ লাখ ৬০ হাজার শব্দের একটি বই লিখেছেন। উ ওয়েই শানের শিল্পকর্মে পশ্চিমের আধুনিক ভাষ্কর্যের উপাদান যেমন আছে তেমনি চীনের লোকশিল্পের উপাদানও আছে। অনেকেই তাকে প্রতিভাবান বলে মনে করেন।

    "আমি ভাষ্কর্য তৈরী শুরু করার পরি খুব দ্রুত সেটি শেষ করতে পারি। সৃষ্টিশীলতা যেন ফলসুধারার মতো বের হয়ে আসে আমার মাথা থেকে। আমার অনুপ্রেরণা এক দিকে স্বভাবজাত, আরেক দিকে লোকশিল্প থেকেও জন্ম নেয়।"

    উ ওয়েই শান চীনের ঐতিহ্যিক চিত্রশিল্প, নাটক ও সঙ্গীতের সম্মিলন ঘটিয়ে তার ভাষ্কর্যের মাধ্যমে প্রকাশ করেন। তার ভাষ্কর্য "শুই থুং" বিশ্ববিখ্যাত "প্যাংগোলিন পুরষ্কার" পেয়েছে। উ ওয়েই শান মনে করেন তিনি সফল হয়েছেন কারণ তিনি চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি ভীষণ ভালবাসেন। তিনি বলেন:

    "আমি মনে করি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে শেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারি নি, কিন্তু শিল্পকর্ম সৃষ্টি করার সময় আমি মনে মনে তাদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধ প্রকাশের জন্য এসব ভাষ্কর্য তৈরী করেছি।"