আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জরুরী অধিবেশন ৬ জানুয়ারী কায়রোয় অনুষ্ঠিত হয়। আরব লীগের ২২টি সদস্য দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বা তাদের প্রতিনিধিরা লেবাননের রাজনৈতিক সংকট আর ফিলিস্তিন ও ইস্রাইলের শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
লেবাননের রাজনৈতিক সংকট অবসানের জন্য সম্মেলনে কার্য বিবরণী গৃহীত হয়েছে। কার্য বিবরণীতে "তিন ধাপ" এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তা হচ্ছে লেবাননের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যত দ্রুত সম্ভব প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সমস্যার ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছে লেবাননের সংবিধান অনুযায়ী লেবাননের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাপতি মাইকেল সুলোয়মানকে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্চাচন করা, শিগগির জাতীয় কোয়ালিশন সরকার গড়ে তোলা, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও জাতীয় কোয়ালিশন সরকার প্রতিষ্ঠার পর নতুন নির্বাচন বিল প্রণয়ন করা।
বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে, লেবাননের বিপরীত দুই দল এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। লেবানন পালার্মেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা, "ভবিষ্যত ফ্রন্ট" এর নেতা সাদ আল-হারিরি বলেছেন, সিদ্ধান্তটি হচ্ছে আরব লীগের নেয়া "দায়িত্বশীল অবস্থান"। এর মাধ্যমে লেবাননের বর্তমান কঠিন অবস্থা দূর করা এবং নতুন পরিস্থিতি উন্মুক্ত করার "মানসিক, রাজনৈতিক ও জাতীয় চালিকাশক্তি" সৃষ্টি করা সক্ষম। লেবাননের বিরোধী দলের নেতা, পালার্মেন্টের স্পীকার নাবিহ বারি বলেছেন, আরব দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা লেবাননের স্বার্থ বিবেচনা করে "ঐতিহাসিক অবস্থান" বেছে নিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ সিদ্ধান্তটি লেবাননের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ও বিরোধী দলগুলোর মনোভাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় বিভিন্ন পক্ষ একে স্বাগত জানিয়েছে। প্রথমতঃ এই প্রস্তাবটি ধাপে ধাপে কার্যকর করা হবে। এটা সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের দাবির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। দ্বিতীয়তঃ সিদ্ধান্তটিতে জাতীয় কোয়ালিশন সরকার গঠনের কথা উল্লেখ রয়েছে। এর ফলে বিরোধী দলগুলোর সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছার সুযোগ বেশি হবে।
সিরিয়াও সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করেছে। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী ৬ জানুয়ারী কায়রোয় জোর দিয়ে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত হচ্ছে লেবাননের সংকট সমাধানের একটি সার্বিক পরিকল্পনা। সিদ্ধান্তে জোরালো ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, লেবানন সমস্যা লেবাননের মানুষের ওপর নির্ভর করেই সমাধান হতে হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, লেবাননের জাতীয় পালার্মেন্টে ১২ জানুয়ারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা ছিলো। এবারকার সম্মেলনে গৃহীত সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত আর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সক্রিয় মনোভাব আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য অপেক্ষাকৃত ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। যার ফলে জনসাধারণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে রাজনৈতিক সংকট সমাধানের ব্যাপারে নতুন করে প্রত্যাশা দেখতে শুরু করেছে।
এবার পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের জরুরী সম্মেলনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হচ্ছে বর্তমান ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা। গত বছর নভেম্বর মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত মধ্যে প্রাচ্য সমস্যা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু ইসরাইল তার বসতি সম্প্রসারণের কথা ঘোষণা করে বসায় পুনরায় ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের শান্তি আলোচনার ওপর কালো ছায়া ফেলতে শুরু করেছে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট ও ফাতাহর চেয়ারম্যান আব্বাস বলেন, বসতি নির্মাণ সমস্যা হচ্ছে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের শান্তি আলোচনার প্রধান অন্তরায়।
এ সমস্যা প্রসঙ্গে এবারের অধিবেশনে একটি সিদ্ধান্তের খসড়া গৃহীত হয়েছে। খসড়ায় ইসরাইল সরকারের উদ্দেশ্যে বসতি নির্মাণকাজ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া এবং মধ্য প্রাচ্য সমস্যা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে স্বাক্ষরিত সংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা কার্যকর করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সিদ্ধান্তের খসড়ায় বলা হয়েছে, ইসরাইল বসতি নির্মাণ ও গাজা আক্রমণ অব্যাহত রাখলে অ্যানাপোলিস সম্মেলনে অর্জিত সফলতা নষ্ট হয়ে যাবে। এবারের অধিবেশনের আগে মিশর, জর্ডান ও সৌদি আরব বিভিন্ন সময় বলেছে, তারা ইসরাইলের বসতি নির্মাণের বিরোধিতা করে। তারা মনে করে, এটা ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের শান্তি আলোচনা প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে না। এবার জরুরী অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তটি আরব লীগের ২২টি সদস্য দেশের অভিন্ন অবস্থান সুষ্পষ্ট করে তুলেছে। ফলে নিঃসন্দেহে ইসরাইলের ওপর এর চাপ পড়বে।
জনমত মনে করে, লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট এবং ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের শান্তি সমস্যা সব কিছুই আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার সঙ্গে জড়িত। ফলে তাকে আরব দেশগুলোর সম্মুখীন যৌথ সমস্যা বলেও উল্লেখ করা যায়। এবারের অধিবেশনের আয়োজন হচ্ছে আরব দেশগুলোর সংহতি জোরদার করার জন্য আরব লীগের পুনঃ প্রয়াস। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|