ব্রিটেনের ৬টি সংস্থার সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা গেছে, ২০০৭ সালের শেষে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির প্রতি জন সমর্থনের হার সবচেয়ে বড় বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ে ৯ শতাংশ কম ছিল। বিশ্লেষকরা মনে করেন, অর্থনীতির মন্থর প্রবৃদ্ধি, লেবার পার্টির ঘুষ কেলেংকারী এবং সন্ত্রাস দমন নীতিসহ বিভিন্ন চাপের মধ্যে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের জন্য এ বছরটি মোটেও মসৃণ ও আশাবাদী নয়।
ব্রিটেনের 'দি ইনডিপেন্ডেন্ট' পত্রিকার ৩ জানুয়ারির খবরে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালের শেষে কনজারভেটিভ পার্টির গড় জন সমর্থনের হার ছিল ৪১ শতাংশ এবং লেবার পার্টির জন সমর্থনের হার মাত্র ৩২ শতাংশ। জনমত জরিপে আরো দেখা গেছে, ব্রাউনের প্রতি সমর্থনের হার গত বসন্তে টনি ব্লেয়ারের পদত্যাগের সময়ের ঠিক আগের ফলাফলের চেয়ে কিছুটা ভালো। এর পাশাপাশি কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ডেভিড ক্যামেরনের প্রতি সমর্থনের হার ৪৭ শতাংশ। তিনি কনজারভেটিভ পার্টির নেতা হওয়ার পর এটা সর্বোচ্চ।
আসলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে লেবার পার্টির প্রতি সমর্থনের হার কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ে বেশ কম। বিশ্লেষকদের মতে এর প্রধান কারণ হচ্ছে ব্রিটেনের অর্থনীতির ধীর গতির উন্নয়ন। ব্রাউন সরকারের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের সামর্থ্যের প্রতি জনগণের আস্থা এখন সন্দেহে রূপ নিয়েছে।
অর্থনীতি ব্যবস্থাপনার ক্ষমতাকেই লেবার পার্টি নির্বাচনী প্রচারের তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আর্থিক ঋণ সংকট এবং ব্রিটেনের রিয়াল এস্টেট বাজারের প্রভাব ছাড়াও গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্রিটেনের নরদার্ন রক ব্যাংকে ঋণ বিপর্যয়ের পর ব্রাউন সরকার কর্তৃক ব্যাংকের ওপর আইনী ও আর্থিক বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দেয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। ২০০৭ সালে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার মাত্র ৩ শতাংশ।
যদিও গত ৩০ ডিসেম্বর নববর্ষের ভাষণ দেয়ার সময় ব্রাউন বলেন, ব্রিটেনের অর্থনীতির ভিত্তি দৃঢ় এবং এটাই স্থিতিশীলভাবে ২০০৮ সালে অর্থনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠার ভিত্তি। অন্য দিকে ২ জানুয়ারি ব্রিটেনের ফিনানশিয়াল টাইমস'-এর এক অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, ব্রিটেনের অর্থনীতিবিদদের ধারনা ২০০৮ সাল ব্রিটেনের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে খারাপ বছর হবে। জনমত হচ্ছে, অর্থনীতির ধস ঠেকানোর ক্ষমতা সরকারের তেমন একটা নেই। ব্রিটিশ বণিক সমিতির এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৪ ভাগের ৩ ভাগ ব্রিটিশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সামর্থ্যের প্রতি কিছুটা আস্থা হারিয়েছে এবং নতুন বছরের অর্থনীতির ভবিষ্যত নিয়ে হতাশ।
অর্থনৈতিক কারণের পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের আগে নির্বাচন আয়োজনে ব্রাউনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, লেবার পার্টির ঘুষ কেলেংকারী ও আড়াই কোটি ব্রিটিশ নাগরিকের বাধ্যতামূলক ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহের বিভিন্ন সমস্যার কারণে, ব্রাউন ও তার নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টির প্রভাব ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জানা গেছে, এ বছরের প্রথম দিকে ঘুষ কেলেংকারির ওপর ফৌজদারি তদন্ত শুরু হবে। ফলে লেবার পার্টির সাবেক মহাসচিবকে অভিযোগের মুখোমুখি হতে হবে। নতুন বছরে ব্রাউনকে এ সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে।
তাছাড়া, ব্রাউনের সন্ত্রাসদমন নীতি বিভিন্ন পক্ষের প্রতিবাদের মুখে পড়েছে। ব্রাউন পার্লামেন্টে নতুন সন্ত্রাসদমন আইন অনুমোদনের মাধ্যমে কোনো অভিযোগ ছাড়াই সন্ত্রাসী সন্দেহভাজনদেরকে ৪২ দিন পর্যন্ত আটক রাখার বিধান চালু করতে চান, যা ব্যাপক মানুষ ও মানবাধিকারবাদীদের বিরোধিতার মুখে পড়েছে।
লেবার পার্টির বর্তমান সমর্থনের হার গত বছরের বসন্তকালে ব্লেয়ার পদ ত্যাগ করার সময়ের হারের প্রায় কাছাকাছি। তবে সে সময় লেবার পার্টির হাতে প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তনের মতো একটি বিকল্প ছিল। তুলনামূলকভাবে কনজারভেটিভ পার্টির বর্তমান অবস্থা গত বছরের চেয়ে অনেক শক্তিশালী হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই অবস্থায়, ব্রাউনের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি সরকারের বর্তমান সংকট থেকে বেরিয়ে পুনরার জনসমর্থন পাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ২০০৮ সালে ব্রিটেনের অর্থনীতিকে ভালোভাবে চালানো। যাতে জনগণ সত্যিকারের সুফল ভোগ করতে পারে।
|