২ জানুয়ারী পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচনের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারী পিছিয়ে দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। এর আগে ৮ জানুয়ারী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল।
নির্বাচন পেছানোর কারণ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী মোহাম্মদ ফারুক এদিন ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পিপলস পাটির (পিপিপি)চেয়ারম্যান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় প্রচুর ভোট কেন্দ্র এবং ভোটার তালিকা নষ্ট হয়েছে। সামাজিক শৃঙ্খলার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিভিন্ন প্রদেশের নির্বাচন অফিস এবং এর আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদিতেও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুদ্ধ জনতা। এই পরিস্থিতিতে নতুন ভোটার তালিকা ও ব্যালট পেপার দরকার এবং নির্বাচন প্রস্তুতিসম্পন্ন করতেও আরো সময় লাগবে। তাই ৮ জানুয়ারীর আগে নির্বাচন সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরণের প্রস্তুতিমূলক কাজ সঠিকভাবে শেষ করা সম্ভব নয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পর নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচনের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারী পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিন রাতে জাতির উদ্দেশ্যে এক টিভি ভাষণে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ বলেন, বেনজির ভুট্টোর নিহতের পর পরই উশৃঙ্খল কিছু লোক এবং রাজনৈতিক কর্মীরা দেশব্যাপী দাঙ্গা হাংগামার সৃষ্টি করে। এর ফলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি ঘটে। জনগণের জীবন এবং সহায়-সম্পত্তি ক্ষতি সাধিত হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। তিনি মনে করেন, নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্ত যুক্তিসঙ্গত এবং সঠিক। তিনি আরো বলেন, বেনজির ভুট্টোর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সহায়তার জন্য ব্রটেন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি বিশেষ গ্রুপ পাঠাবে।
এর আগে নির্বাচন পেছাবে কিনা এই সমস্যায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন পার্টি মুসলীম লীগ নির্বাচন পেছানোর পক্ষপাতি। এই পার্টির তথ্য সচিব তারিক আজিম গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর বলেন, পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বেনজির ভুট্টোর প্রতি শোক প্রকাশ করা এবং কিছু কিছু বিরোধী পার্টির ইচ্ছাকৃত নির্বাচন বয়কটের চেষ্টার সংসদ নির্বাচন করা অসঙ্গত হতো। তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচন পেছানোর নির্দিষ্ট সময় কবে হবে তা নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। এদিন পিপলস পার্টি কেন্দ্রীয় কার্য-নির্বাহী কমিটির এক সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে বেনজির ভুট্টোর ছেলেকে এই পার্টির চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি এই পার্টি ২০০৮ সালের ৮ জানুয়ারীর সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ঘোষণা করে এবং শরিফের দল মুসলিম লীগের প্রতি নির্বাচন বয়কট না করার তাগিদ দেয়। শরিফের দল মুসলিম লীগ শিগগিরি নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ঘোষণা করে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বেনজির ভুট্টোর নিহতের ঘটনায় পিপলিস পার্টির প্রতি পাকিস্তানের জনগণের সমবেদনা রয়েছে। পিপলস পার্টির প্রতি সমর্থনের হারও বেড়েছে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংসদ নির্বাচন আয়োজন পিপলস পার্টির জন্য একটি সুযোগ। তাই পিপলস পার্টি আশা করে, ৮ জানুয়ারী সময় মতো সংসদ নির্বাচন আয়োজিত হবে। অন্য দিকে বর্তমান পরিস্থিতি মুসলিম লীগের জন্য প্রতিকূল।
সংসদ নির্বাচন পেছানোর কথা ঘোষণার পর পিপলস পার্টি এবং শরিফের দল মুসলিম লীগ এই সিদ্ধান্তের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে। পিপলস পার্টির যুগ্ম চেয়ারম্যান, বেনজির ভুট্টোর স্বামী আসিফ জারদারি বলেন, পিপলস পার্টি নির্বাচন পেছানোর নিন্দা করে। তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, নির্বাচন পেছানো হলে সম্ভবতঃ সারা দেশে আরো তীব্রতর সশস্ত্র সংঘর্ষ সৃষ্টি হবে। শরিফের দল মুসলিম লীগ বলেছে, এই সিদ্ধান্ত অসংগত। কিন্তু দু'পার্টি উভয়েরই ভাষ্য, তারা নির্বাচন বয়কট করবে না।
উল্লেখ্য যে, মার্কিন সরকার বহুবার জোর দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র আশা করে, পাকিস্তানের সংসদ নির্বাচন সময় মতো অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু পাকিস্তানের নির্বাচন পেছানোর কথা ঘোষণার পর মার্কিন সরকার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এ থেকে দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ পাকিস্তানের নির্বাচন পেছানোর ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করে। তা সত্ত্বেও নিজেদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে তারা আশা করে, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এখন খুব সংকটাপন্ন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা আগামী ৪০ দিনের মধ্যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির পরিবর্তনশীল অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। (লিলি)
|