v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-01-02 21:04:54    
হোফেই শহরের তা ইয়ু বার্ধক্যসদনের বৃদ্ধদের সুখী জীবন

cri

    চীনের অর্থনীতি ও সমাজের দ্রুত উন্নতি এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যগত পরিবেশ এবং জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সংগে সংগে চীন ধাপে ধাপে বার্ধক্যকরণ সমাজে প্রবেশ করেছে । শিল্পোন্নত দেশগুলোর তুলনায় বার্ধক্যকরণ সমাজে প্রবেশ করতে চীনের একটু কম সময় লেগেছে । মাত্র ২০ বছর লেগেছে । এটি চীনের সমাজের জন্যে একটি চ্যালেঞ্জ । কেমন করে বৃদ্ধদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ করা যাবে এবং কি করে তাদের সুখী ও সুন্দর জীবন নিশ্চিত করা যাবে , তার ওপর চীন সরকারসহ সমাজের বিভিন্ন মহলের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে । গত কয়েক বছরে বৃদ্ধদের কল্যাণ নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে চীন সরকার সহায়তার কাজ জোরদার করে চলেছে । আজকে আমি আপনাদেরকে মধ্য চীনের আন হুই প্রদেশে নিয়ে যাবো । সেখানে আপনারা এ প্রদেশের রাজধানী হো ফেইয়ের তা ইয়ু মহকুমা-নগরের সুখী জীবন সম্পর্কে ধারণা পাবেন ।

    হোফেই শহররের তা ইয়ু বার্ধক্যসদনে গিয়ে বৃদ্ধ শেন সুন ইনের সংগে আমাদের সংবাদদাতার দেখা হলো । আমাদের সংবাদদাতাকে দেখে তিনি তার হাত ধরে নিজের থাকার ঘরে নিয়ে গেলেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন ,

    আমার ঘরে দুজন থাকেন । ঘরে আছে টিভিসেট ও কাপড়-চোপড় রাখার আলমারি । এখানে থেকে আমার নিজের বাড়ির চেয়েও আরামদায়ক । সরকার আমাদেরকে লেপ , চাদর , দাঁতের মাজন ও টুথব্রাশ সব দিয়ে দেয় । সরকার আমাদের কল্যাণের জন্যে সবকিছু করেছে । এখন আমরা সবাই কাজ করতে অক্ষম । মুক্তির আগে হলে আমার পক্ষে বেঁচে থাকাও সম্ভব হতো না । চীনা কমিউনিস্ট পাটির নীতি সত্যিই চমত্কার । আমার মত বৃদ্ধদর জন্যে সুব্যবস্থা করেছে ।

    হো ফেই শহরে শেন সুন ইনের মত ২৪ হাজার নি:সন্তান বৃদ্ধবৃদ্ধা রয়েছেন । তাদের কল্যাণমূলক নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে হোফেই পৌর সরকার বেশ কিছু ইতিবাচক ব্যবস্থা নিয়েছে । বিপুল প্রয়াসের সংগে বার্ধক্যসদন নির্মাণ করার উদ্যোগ হচ্ছে এ ব্যবস্থাগুলোর অন্যতম । এ শহরের বৃদ্ধ বিষয়ক কার্যালয়ের পরিচালক সিয়ে চি ফাং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন ,

    হোফেই শহরে যেসব বৃদ্ধের খাওয়া-পরা , চিকিত্সা , বাসস্থান ও কবর দেয়ার নিশ্চয়তা করা দরকার , যাতে তাদের অর্ধেক লোককে ৫ বছরের মধ্যে সরকার নির্মাণ করা বার্ধক্যসদনে থাকার সুযোগ পান , সেজন্যে সরকার ১০ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করবে ।

    গত বছর এ প্রকল্প নির্মাণের কাজ শুরু হয় । এ পর্যন্ত দেড় শ'রও বেশি বার্ধক্যসদন নির্মিত হয়েছে । এতে বেশ কিছু অসুবিধাজনক বৃদ্ধদের জীবনযাপনের সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে ।

    এ ব্যবস্থার কল্যাণে বৃদ্ধ শেন সুন ইন এখন বার্ধক্যসদনে স্বাচ্ছন্দ্যে শেষ জীবন কাটাচ্ছেন । হোয়াং সৌ ছুনের বয়স সত্তরের ওপর । ২০০৬ সালে তিনি তা ইয়ু বার্ধক্যসদনে ভর্তি হয়েছেন । তখন ঠিক চীনের বসন্ত উত্সব ছিল । তিনি অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে সেই বসন্ত উত্সব পালন করেন । তখনকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন ,

    আমি খুশী মন নিয়ে এখানে বসন্ত উত্সব পালন করেছি । এটি আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । সরকার আমাদেরকে নতুন জামা-পোষাকও দিয়েছে । অতীতের চেয়ে আমার এখনকার জীবন অনেক ভালো হয়েছে ।

    তবে হোয়াং সৌ ছুনের মনে একটি পরিতাপের বিষয় রয়েছে । তা হচ্ছে , তার স্ত্রী কয়েক বছর আগে মারা গেছেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , যদি আমার স্ত্রী বেঁচে থাকতেন , তাহলে কমো ভালো হতো । তিনিও আমার মত এখানে সুখী জীবন কাটাতে পারতেন । অতীতে আমার অর্থনৈতিক অবস্থা তত ভালো ছিল না । যদি আগে এখানে থাকার সুযোগ পেতেন , আমার স্ত্রীর রোগও সেরে উঠতো । কেন না , এখানে আমাদের অসুখ হলে সরকার চিকিত্সার সব খরচ বহন করে থাকে ।

    যারা বার্ধক্যসদনে থাকেন , তাদেরকে আর নিজেদের অসুখের জন্যে মাথাব্যাথা করতে হয় না । এ সম্পর্কে তাদের কোনো চিন্তাভাবনা নেই । লিন শাও ফোংয়ের বয়স ষাটের ওপর । তার শরীর ভালো নয় । বার্ধক্যসদনে তার চিকিত্সার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন ,

    গত বছর আমি অসুস্থ্য হয়ে পড়লাম । মহকুমা সরকার আমার চিকিত্সার ব্যবস্থা করল । বার্ধক্যসদনে আসার পর আমার অসুখ হলেও চিকিত্সার খরচ সবই সরকার বহন করে । আমার অসুখ সারাতে ৭ থেকে ৮ হাজার ইউয়ান খরচ হলো । আমার নিজের পক্ষে এমন খরচ করা একেবারে সম্ভব নয় ।

    তা ইয়ু বার্ধক্যসদনে থাকা বৃদ্ধরা আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , আমাদের সদনের পরিচালক অত্যন্ত ভালো লোক । তার নিজের আপনজনের চেয়েও আমাদের যত্ন নেন । এ পরিচালকের নাম ফাং সিয়া । তার বয়স ৪০ বছর । এখানে আসার আগে তিনি একটি বীমা কোম্পানিতে কাজ করতেন । তখন তিনি মাসে ৩ হাজার ইউয়ান বেতন পেতেন । এখানে তিনি মাত্র ৮০০ ইউয়ান বেতন পান । তবে তিনি কেন এ সদনে কাজ করতে এসেছেন ? তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন ,

    আমার নিজের বাড়িতেও দুজন বৃদ্ধ রয়েছেন । তারা আমাকে খুব আদর করেন । কাজেই বৃদ্ধদের সংগে আমার ভাব আছে । প্রথমে মহকুমা সরকার যখন এ বার্ধক্যসদনে কাজ করার জন্যে আমার কাছে অনুরোধ করেন , তখন আমার সংশোয় ছিল । পরে একবার আমার বাড়ির বৃদ্ধ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে আমি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই । সেসময় আমি অনুভব করলাম যে , বৃদ্ধদের দেখাশোনা করা একান্ত দরকার । তাই আমি এ সদনে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম ।

    দীর্ঘদিন ধরে বৃদ্ধদের সংগে মেলামেশা করে তাদের সংগে ফাং সিয়ার মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে । বৃদ্ধদের কোনো প্রয়োজন পড়লে ফাং সিয়াকে জানালে তিনি ও তার সহকর্মীরা তাদের প্রয়োজন মেটাতে সবসময় সাধ্যমত চেষ্টা করেন । মৌসুম পরিবর্তনের সময় ফাং সিয়া সর্বদাই বৃদ্ধদের জন্যে নতুন কাপড়-চোপড় কিনে নেন । তিনি বলেন , যদিও তাদের জামা-পোষাক পুরনো হয় নি , তবুও তারা নতুন কাপড় পড়লে তাদের ভালো লাগবে । তারা আনন্দিত হলে তাদের শরীরও ভালো থাকে । ফাং সিয়ার বাড়িতেও বৃদ্ধবৃদ্ধা ও ছেলেপেলে আছে । তাদেরও দেখাশোনার দরকার আছে । অথচ ফাং সিয়া বার্ধক্যসদনে প্রতিদিন অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে থাকেন । একবার ফাং অতি ক্লান্তিতে অসুস্থ্য হয়ে পড়লেন । তিনি হাসপাতালে ১৫দিন থাকলেন । যখন তিনি সেরে উঠে বার্ধক্যসদনে ফিরে আসলেন , তখনকার দৃশ্য তিনি কোনোদিন ভুলবেন না । তিনি বলেন ,

    তখন আমার শরীর খুব দুর্বল বলে আমি গাড়িতে করে সদনে ফিরলাম । বৃদ্ধরা আমার কাছে এসে হাঁটার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসলেন । এতে আমি অত্যন্ত অভিভূত হয়ে পড়লাম ।