একজন মার্কিন কূটনীতিবিদ পয়লা জানুয়ারী সুদানের রাজধানী খার্তুমে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির গুলিতে নিহত হয়েছেন। এটা হলো গত কয়েক বছর ধরে সুদানে বিদেশী কূটনীতিবিদের ওপর সংঘটিত গুলিতে প্রথম হত্যাকান্ডের ঘটনা।
১ জানুয়ারী ভোর চারটায় যুক্তরাষ্ট্র দুতাবাসের একটি গাড়ী খার্তুমের একটি প্রধান রাস্তায় অজ্ঞাত পরিচয় এক অস্ত্রধারী ব্যক্তির হামলার শিহার হয়। ঘটনাস্থলেই ড্রাইভার মারা যান। গাড়ীর ভিতরে থাকা আন্র্তজাতিক উন্নয়ন সংস্থার একজন কর্মকর্তা একাধিক গুলিতে আহত হন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু গুরুতর আহত হওয়ায় তিনি মারা যান। এখন পযর্ন্ত কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি এই হত্যার দায়িত্ব স্বীকার করেনি।
জনমত অনুযায়ী, এই ঘটনার ফলে নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ মার্কিন-সুদান সর্ম্পকের অবনতি ঘটবে। গত শতাব্দীর নব্বই দশকের শুরু থেকেই সুদান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ , সুদান সরকার আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীকে সমর্থন করে এবং দার্ফুর অঞ্চলে " সাম্প্রদায়িক হত্যালীলা " চালিয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে সুদান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। ১৯৯৮ সালে সন্ত্রাসীদের ওপর আঘাত হানার অযুহাতে যুক্তরাষ্ট্র নগ্নভাবে খাতুর্মের উত্তরাংশের একটি ঔষুধ তৈরী কারখানার ওপর বোমা বর্ষণ করে। এর পর দার্ফুর সমস্যার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে শান্তিরক্ষী কর্মসূচীর নেতৃত্ব নিজেদের নিয়ন্ত্রণের নেওয়ার অপচেষ্টা চালায়। ২০০৭ সালের ২৯ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জজ ডাব্লিও বুশ ঘোষণা করেন, সুদানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক অবরোধের ভিত্তিতে নতুন শাস্তির আরোপের ব্যবস্থা নেয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত সুর্তানের জনসাধারণের ভেতর মার্কিনীদের প্রতি বিলোধীতার সৃষ্টি হয়েছে। তারা নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। সুদান সরকারের কর্মকর্তারাও বেশ কয়েক বার জানিয়েছেন, সুদানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অবরোধ এক ধরনের " বর্বরচিত আচরণ" এর শাসন । সুদান সরকার কখনই যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না।
উল্লেখ্য, মার্কিন কূনীতিবিদ হামলায় নিহত হওয়ার এক দিন আগে, বুশের অধ্যাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংগরাজ্য ও স্থানীয় সরকারকে তেল ও জ্বালানী সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুদানের সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোতে সঙ্গে পুঁজিবিনিয়োগ বন্ধের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সুদানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ আরও জোরদার করার সঙ্গে এবারের এই গুলির কোন সম্পর্ক আছে কিনা, তা এখন পযর্ন্ত জানা যায়নি।
তবে, এ ঘটনার পর, সুদানের কোন কোন স্থানীয় প্রচারমাধ্যমে এই মত প্রকাশিত হয়েছে যে, এবারের ঘটনা সম্ভবতঃ আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কিত। স্থানীয় প্রচারমাধ্যমে বলা হয়েছে, বিল লাদেন আর তার সহকারী জাওয়ারি এক সময় সুদানে পাশ্চাত্য দেশগুলোর বিরুদ্ধে জিহাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ২০০২ সালে জর্দানের রাজধানী আম্মানে একজন মার্কিন কূটনীতিবিদ একটি হামলায় প্রাণ হারায়। পরে প্রমাণিত হয় যে, আল কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা একটি সশস্ত্র সংস্থা এই হামলার নাটের গুরু ছিলেন।
তবে, মার্কিন কূটনীতিবিদ মারা যাওয়ার পর সুদানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এবারের গুলি করে হত্যার ঘটনাই কোন সন্ত্রাসী হামলা নয়। এ ঘটনা রাজনীতির সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। এই ঘটনা সুতানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে সুদানের সম্পর্কের ওপর কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। বিবৃতিতে আরও জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, সুতান সরকার সব সময় এ দেশে বসবাস করা বিদেশী নগরীকদের সহযোগিতা ও নিরাপত্তা দিয়ে আসছে। সুদানের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ হত্যাকান্ডের ওপর তদন্ত চালাবে। অপরাধী নিশ্চয়ই এক দিন শাস্তি পাবেই।
|