আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের দীর্ঘ স্থায়ী বিষন্নতার লক্ষণ নিয়ে কিছু কথা বলবো। আপনি কি বিষন্ন? বিষন্নতা কী তা কি জানে ? বন্ধুরা, তাহলে মনোযোগ দিয়ে শুনুন বিষন্নতার কথা । দীর্ঘস্থায়ী বিষন্নতার লক্ষণ রোগটির ইংরেজী নাম হলো ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম। যদি কারো সবসময় ঘুমুতে ইচ্ছে করে, ঘুমের সময় ঠিকমত ঘুম হয় না, মাথা ব্যথা হয় অথবা মাথা ঘোরে এবং আগের কাজ সহজে ভুলে যাওয়া । এ সব কিছুই এ রোগের লক্ষণ। ২৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী কর্মকর্তাদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি । আমরা কী ভাবে জানবো এ রোগে আক্রান্ত না হওয়ার কারণগুলো ? বন্ধুরা, তাহলে এখন জানিয়ে দিচ্ছি ।
সব সময় ক্লান্তি লাগে এবং কোনো প্রকার শরীর চর্চা করতে ইচ্ছে করে না । একটু ব্যয়াম করলেই শরীর ঘেমে যায় এবং সহজেই ঠাণ্ডা লেগে যায় । শরীর চর্চার চেয়ে সবসময় শুয়ে থাকতে বা বসে থাকতে বেশ ভালো লাগে । কিছুই করতে ইচ্ছে হয় না । তবে করার আগ্রহ থেকে যায় মনের ভেতর ।
অনিদ্রার মধ্যে থাকা । রাতে ঘুমের সময় ভালো ঘুম না হওয়া, সবসময় দুঃখজনক স্বপ্ন দেখা এবং দীর্ঘকাল ধরে অনিদ্রা রোগে ভোগা। তারপর দীর্ঘকাল ধরে মন খারাপ থাকা, কোনো ধরনের কাজ বা তত্পরতাই মনে সুখী ভাব এনে দিতে পারে না । এর পাশপাশি স্মরণ শক্তিও কমে যাওয়া ।
খাবার খাওয়ার পরিমাণ আগের চেয়ে কম হওয়া । একবার অনেক খাবার খাওয়ার পর কয়েক দিন ধরে খাওয়ার ইচ্ছা না থাকা । যদি আপনাদের এ ধরনের অনুভব হয়ে থাকে, তাহলে খুব সম্ভবত আপনারা দীর্ঘ স্থায়ী বিষন্নতার লক্ষণে আক্রান্ত ।
কী ধরনের কাজ করা লোক সহজে এ রোগে আক্রান্ত হয় ?
সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা । বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিদিন নানা ধরনের ঘটনা ঘটে এবং অনেক আকস্মিক খবর এর মধ্যে সৃষ্টি হয় । সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের প্রতিদিন মনোযোগ দিয়ে বিভিন্ন সাক্ষাত্কার বা রিপোর্ট তৈরীর জন্য তাঁদের মস্তিষ্কে সবসময় উত্তেজনা বিরাজ করে এবং নানা ধরনের সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় ঘুমানো ও খাবার গ্রহণের নিয়ম বজায় রাখতে পারে না । ফলে তাঁরা সহজে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে যায় ।
ডাক্তার । প্রতিদিন নানা ধরনের রোগী অসুস্থ্য হয়ে পড়ার কারণে হাসপাতালে আসে । তখন তাদের মন খারাপ এবং শরীরও অসুস্থ্য। ডাক্তাররা রোগীদের রোগের চিকিত্সা করার পাশাপাশি তাদের মনের দুঃখের কথাও শুনে থাকেন । রোগীদের স্বাস্থ্যের চিকিত্সা করার জন্য তাঁরা প্রতিদিন আন্তরিকতার সঙ্গে নিজেদের কাজ করেন এবং রোগীদেরকে আনন্দ দেয়ার জন্য নানা ধরনের চেষ্টা করে থাকেন । দীর্ঘকাল ধরে ডাক্তারদের এ কাজ করার ফলে মন সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং ভালভাবে এর সমাধান করতে না পারলে সহজেই দীর্ঘ স্থায়ী বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন ।
তাহলে দীর্ঘ স্থায়ী বিষন্নতার লক্ষণের সঙ্গে মানসিকতার কোন সঙ্গে পার্থক্য আছে কিনা ?
মানসিকতা হল মানুষের শরীর স্বাস্থ্য ও রোগের অন্তবর্তীকালীন অবস্থা । সবসময় অসুস্থ্য লাগে ,কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে নানা পরীক্ষার করার পর দেখা যায় কোনো রোগে আক্রান্ত হয় নি । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা থেকে জানা গেছে,বিশ্বের ৭০ শতাংশ লোকের শরীরের অসুস্থতা হচ্ছে এক ধরনের মানসিক চাপ । কিন্তু দীর্ঘ স্থায়ী বিষন্নতার লক্ষণ হলো মানুষের শরীরে দীর্ঘকাল ধরে ক্লান্তি লাগা, সবসময় মন খারাপ থাকা এবং কোনো কাজ করার ইচ্ছা না থাকা । তা থেকে বোঝা যায় , দুই রোগের অর্থ আসলে এক নয় ।
সহজে দীর্ঘ স্থায়ী বিষন্নতায় আক্রান্ত হওয়া লোকদের জীবনযাত্রার পদ্ধতি প্রায় একই । ঘুমানোর সময় , খাবার খাওয়ার সময় এবং শরীর চর্চার সময় শৃঙ্খলহীন এবং অনেকে এ ধরনের জীবনযাত্রার সঙ্গে অব্যস্ত হয়ে গেছে । এসব বিশৃঙ্খল পদ্ধতির পরিবর্তন করে শৃঙ্খলার ফিরিয়ে আনতে পারলে এ রোগের চিকিত্সা করা সম্ভব ।
|