২৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীরাওয়ালপিন্ডিতে এক নির্বাচনী সমাবেশে বর্বরোচিত আত্মঘাতী হামলায় নিহত হয়েছেন।
১৯৫৩ সালের ২১ জুন মাসে বেনজির ভুট্টো পাকিস্তানের সিনধু প্রদেশে জন্ম গ্রহণ করেন।তিনি পাকিস্তানের প্রয়াত্ত প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর বড় মেয়ে।বেনজির ভুট্টো দুবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন ইসলামী দেশগুলোর প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। তা ছাড়া, তিনি ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সের মহিলা প্রধানমন্ত্রী।
বেনজির ভুট্টো ১৬ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ফড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুর্তি হন। পরে তিনি আবার অক্সর্ফোট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুর্তি হন। ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পাকিস্তানের পিপলস পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। সামরিক অভ্যূত্থানে তাঁর বাবাকে গ্রেফতার করা হওয়া ও মৃত্যুদন্ড দেওয়ার পর বেনজির ভুট্টো আটবার গৃহবন্দী ও কারাবন্দী হয়েছিলেন। অবশেষে তিনি বিদেশে নির্বাসন জীবন ঘাটতে বাধ্য হন। ১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসে দেশে ফিরে আসার পর তিনি পিপলস পার্টির দুই চেয়াম্যানের অন্যতম মনোনীত হন। ১৯৮৮ সালের নভেম্বরে আয়োজিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে পিপলস পার্টি বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। ৩৫ বছর বয়স্ক বেনজির ভুট্টো পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯০ সালের আ্যগষ্ট মাসে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিযে দেয়া হন। ১৯৯৩ সালের অক্টোবর মাসে পিপলস পার্টি সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করার পর বেনজির ভুট্টো আরেক বার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হন। একই বছরের ডিসেম্বর মাসে তিনি পাকিস্তানের পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নভেম্বর মাসে তাঁকে মন্ত্রীর পদ থেকে বের করে দেয়া হয়। ১৯৯৭ সালের মার্চ মাসে বেনজির ভু্ট্টো পাকিস্তানের পিপলস পার্টর আজীবন নেতা নির্বাচিত হন।
১৯৯৪ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের দু'টো আদালতের রায় অনুযায়ী বেনজির ভু্ট্টো আর তাঁর পরিবারের কয়েক ডর্জন কোটি মার্কিন ডলারের সম্পত্তি ও ব্যাংকের আমানত জব্দ করা হয়। ১৯৯৪ সালের এপ্রিল মাসে তাকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড করা হয়। আদালতের রায় অনুযায়ী, তিনি কোন দিন সরকারের কর্মচারী হতে পারেন না এবং ৮৬ লাখ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়। এর পাশাপাশি তাঁর স্বামীকেও কারাদন্ড দেয়া হয়। একই বছর বেনজির ভুট্টো বিদেশে নির্বাসন জীবন ঘাটতে বাধ্য হন।
২০০৭ সালের অট্টোবর মাসের প্রথম দিকে, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ ও বেনজির ভুট্টোর মধ্যে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সহ বিভিন্ন বিষয়ে এক দফা সমঝোতামূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, পারভেজ মোশাররফ বেনজির ভুট্টো সহ পাকিস্তানের কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তাকে বিশেষ ক্ষমা দিয়েছেন। এর বিনিময়ে বেনজির ভুট্টোর নেতৃত্বে পিপলস পার্টি নির্বাচন বর্জন করবে না। গত অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখে বেনজির ভুট্টো আট বছরের নির্বাসন জীবন শেষ করে পাকিস্তানের দক্ষিণাংশের করাচিতে ফিরে এসেন। সেন দিন রাতে করাচিতে তাঁর বিরুদ্ধে দু'দফা বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এতে ১৪০ জন নিহত ও ৫০০জনের বেশী লোক আহত হয়। বেনজির ভুট্টো মৃত্যু থেকে রেহাই পান।
বেনজির ভুট্টো ১৯৭২ , ১৯৮৯ এবং ১৯৯৩ সালে চীন সফর করেছেন। ১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বর তিনি পেইচিংএ আয়োজিত চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনে অংশ নেন।
১৯৮৭ সালের জুলাই মাসে বেনজির ভুট্টো সিনধু প্রদেশের ব্যবসায়ী আসিফ আলী জারদারিকে বিয়ে করেন। তাঁর দুই ছেলে এক মেয়ে আছে।
|