v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-12-28 15:02:26    
হুপেই প্রদেশে মিথেন গ্যাস ও পুনঃব্যবহার্য দ্রব্যের ব্যাপক প্রয়োগ

cri

    মধ্য চীনের হুপেই প্রদেশের এনশি থুচিয়া জাতি মিয়াও জাতি স্বায়ত্তশাসিত বিভাগ পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত । আগে যোগাযোগের অপর্যাপ্ততার কারণে বহিঃর্বিশ্ব থেকে এ বিভাগ বিচ্ছিন্ন ছিল । স্থানীয় অর্থনীতি পিছিয়ে রয়েছে । গত কয়েক বছরে এ বিভাগে মিথেন গ্যাস ও অন্যান্য পুনঃব্যবহার্য দ্রব্যের ব্যাপক প্রয়োগ বিষয়ক একটি কর্মসূচী জনপ্রিয় করে তোলা হয়েছে । ফলে পরিবেশ সংস্কার করা হয়েছে , ফসলের উত্পাদন ত্বরান্বিত করা হয়েছে এবং কৃষকরা আরো সচ্ছল হয়ে গেছেন ।

    এতক্ষণ আপনারা যা শুনলেন , তা এনশি থুচিয়া জাতি মিয়াও জাতি স্বায়ত্তশাসিত বিভাগের থুচিয়া জাতির একজন মেয়ের গাওয়া অতিথিদের মদ খাওয়ানো নামে লোক সংগীত । তিনি মিষ্টি কন্ঠে গান গেয়ে দূর থেকে আসা অতিথিদের স্বাগত জানাচ্ছেন ।

    এনশি থুচিয়া জাতি মিয়াও জাতি স্বায়ত্তশাসিত বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় গত শতাব্দির আশির দশকে । অঞ্চলের আয়তন ২৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার , লোকসংখ্যা ৩৮ লাখের একটু বেশি । এ অঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি অধিবাসী হচ্ছে থুচিয়া , মিয়াও ও তুংসহ ২৭টি সংখ্যালঘু জাতির ।

    এনশি অঞ্চলের সংখ্যালঘু জাতি নাচ ও গান পরিবেশনে দারুণ পারদর্শী । এখানে সবাই গান গাইতে পারেন এবং নাচ করতে পারেন । এ ছাড়াও এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব সৌন্দর্যময় । বনাঞ্চলের আয়তন ৬৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে । কিন্তু আগে শিএন বিভাগ ছিল চীনের অন্যতম দরিদ্র অঞ্চল । পার্বত্য এলাকায় যোগাযোগের অপর্যাপ্ততার দরুণ শিল্প ও কৃষি উত্পাদন অত্যন্ত অনুন্নত ছিল । এ অঞ্চলের মাথাপিছু বার্ষিক আয় মাত্র ১ হাজার ৮ শো ইউয়ানেরও কম ছিল ।

    চার বছর আগে শিএন অঞ্চলে মিথেন গ্যাসের ব্যাপক ও সার্বিক প্রয়োগের একটি কর্মসূচী শুরু হয়েছে । রান্না-বান্না ও গোসলের জ্বালানী হিসেবে কৃষকরা মানুষ ও পশুদের মল কাজে লাগিয়ে মিথেন গ্যাস তৈরী করছেন । মিথেন গ্যাস তৈরীর পাশাপাশি যে তরল পদার্থ সৃষ্টি হয় , তা চা ও সবজিসহ বিভিন্ন ফসল জলসেচের ব্যাপারে ব্যবহার করা যায় । ফলে কৃষকদের খরচ অনেক কমেছে এবং গ্রামীণ পরিবেশ দারুণভাবে উন্নত হয়েছে ।

    ৫৮ বছর বয়স্ক হু ইয়ুন চিয়াং চীনের অন্যতম মিথেন গ্যাস বিষয়ক বিশেষজ্ঞ । তিনি মনে করেন , আগে শহরবাসীদের গ্রামীণ বাথরুমের পরিবেশ খারাপ লাগতো । তারা নোংরা পরিবেশে দেখে চিন্তিত থাকতেন ।

    মিথেন গ্যাস উত্পাদক যন্ত্র নির্মিত হওয়ার পর গ্রামীণ পরিবেশের অনেক সংস্কার হয়েছে । আগেকার নোংরা বাথরুম আর দেখা যাচ্ছে না । বর্তমানে বাড়িতে বাড়িতে পাইপের মাধ্যমে মিথেন গ্যাস উত্পাদক যন্ত্রের সঙ্গে গোসল কক্ষ ও পাকা ঘর যুক্ত । ফলে মিথেন গ্যাস কাজে লাগিয়ে যেমনি গোসল তেমনি রান্না করা যায়।

    গ্রামবাসী থান কুই ইং সংবাদদাতাকে বলেন , মিথেন গ্যাস বহু ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায় । সুতরাং মিথেন গ্যাস উত্পাদক যন্ত্র নির্মাণের প্রয়োজন আছে ।

    আগে গোসল ও রান্না করার জন্য ব্যবহার্য জ্বালানী হিসেবে কাঠ সংগ্রহ করা হতো । এখন মিথেন গ্যাস আছে । এ ধরনের কাজের প্রয়োজন আর নেই । বিনা পয়সায় মিথেন গ্যাস ব্যবহারের খুব সুবিধা আছে ।

 

    গ্রামবাসী থান কুই ইং মিথেন গ্যাস ব্যবহারে খুব সন্তুষ্ট । বিশুদ্ধ জ্বালানী হিসেবে মিথেন গ্যাস দূষণমুক্ত । ব্যবহারের সময় ধোঁয়া নেই । মিথেন গ্যাস বিশেষজ্ঞ হু ইয়ুন চিয়াং বলেন , মিথেন গ্যাস উত্পাদক যন্ত্র চালু হওয়ায় যেমনি গৃহিনীদের বাড়ির কাজের চাপ কমে গেছে , তেমনি তাতে স্থানীয় বনাঞ্চল সম্পদও রক্ষা পাচ্ছে।

    গ্রামে মিথেন গ্যাসের ব্যবহার জনপ্রিয় হওয়ার পর গৃহিনীদের বাড়ির কাজের চাপ কমে গেছে । তাদের বাসাও অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়েছে । মিথেন গ্যাস ব্যবহৃত হওয়ার পাশাপাশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমান বিপুল পরিমানে হ্রাস পেয়েছে ।

    জানা গেছে , মিথেন গ্যাস ও অন্যান্য পুনঃব্যবহার্য দ্রব্য যেমনি নিত্য দিনের জীবনযাপনে সহায়ক তেমনি কৃষি উত্পাদনেও ব্যাপকভাবে কাজে লাগানো যায়। মিথেন গ্যাস তৈরী করার পাশাপাশি যে বর্জ্য পদার্থ বিপুল পরিমানে সৃষ্টি হয় , তাও সার হিসেবে কৃষি জমিতে ব্যবহার করা যায় । এখানকার চা বাগানে এ ধরনের বর্জ্য পদার্থ ব্যবহার করা হচ্ছে , তা রাসায়নিক সারের চেয়ে একটুও দুর্বল নয় । মিথেন গ্যাস বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হু ইয়ুন চিয়াং বলেন ,

     কৃষি জমিতে শুধু রাসায়নিক সার এবং মানুষ ও পশু'র মল দিলে দূষণ সৃষ্টি হতে পারে । কিন্তু চা বাগানে মিথেন গ্যাসের বর্জ্য পদার্থ ব্যবহার করলে জমির উত্পাদন শক্তি ৫ বছর বজায় থাকবে । মিথেন গ্যাস তৈরীর পাশাপাশি যে তরল বর্জ্য সৃষ্টি হয় , ফসল উত্পাদনের জন্য সে তরল বর্জ্য প্রচুর পুষ্টি আছে। মিথেন গ্যাসের তরল বর্জ্যব্যবহার করায় ফসল বেশ কিছু দিন আগেই পেকে যাবে ।

    এনশি শহরের পার্টি- কমিটির ডেপুটি সম্পাদক লি কুও ছিং মনে করেন , কৃষকরা বিনা পয়সায় মিথেন গ্যাস ব্যবহার করতে পারেন । একটি মিথেন গ্যাস উত্পাদক যন্ত্র তৈরীর জন্য ১ হাজার ৬ শো ইউয়ান লাগে । এতে সরকার ১ হাজার ইউয়ান ভর্তুকী প্রদান করে । মিথেন গ্যাস তৈরী ও ব্যবহারে ফসল বপন , পশু পালন এবং কৃষি ও পার্শ্বজাত দ্রব্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিপুল লাভ বয়ে আনবে । তিনি বলেন , এ অঞ্চলে মিথেন গ্যাসের বর্জ্য পদার্থ ব্যবহার করায় কৃষকদের আয় লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে গেছে ।

    এনশি শহরে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে চা বপন করা হয় । এ সব চা উন্নত মানের । প্রত্যেক হেক্টর জমিতে চায়ের বার্ষিক আয় ৪৫ হাজার ইউয়ানে দাঁড়ায়।

    জানা গেছে , শিএন থুচিয়া জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে অর্ধেকেরও বেশি কৃষক পরিবারে মিথেন গ্যাস উত্পাদক যন্ত্র চালু করা হয়েছে । পরিকল্পনা অনুযায়ী , ২০১০ সালের মধ্যে এ অঞ্চলে মিথেন গ্যাসের ব্যবহার আরো জনপ্রিয় জনপ্রিয় হয়ে উঠবে । (লিলি)