v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-12-28 11:53:08    
সরল ও সত মেয়ে লি সিয়াওপিংয়ের গল্প

cri
    কাও সিয়াওসুং " একই টেবিলের সহপাঠি" নামে গান রচনা করেছেন , ছোট গল্প লিখেছেন এবং চলচিত্রের নায়ক হয়েছেন । এই কারণে তিনি চীনে খুব বিখ্যাত । কিছু দিন আগে কাও সিয়াওসুং একজন গরীব ছাত্রকে আর্থিক সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিন । কিন্তু তিনি ভাবতে পারেননি যে , যাকে তিনি সাহায্য করতে চেয়েছিলেন সেই মেয়ে তার আর্থিক সাহায্য গ্রহণ করবে না। ব্যাপারটা কী ? পরিবারের অবস্থা তেমন ভাল না ,তবে কেন সে অন্য লোকের আর্থিক সাহায্য চায় না !

    আকস্মিক এক সুযোগে সঙ্গীত শিল্পী কাও সিয়াওসুং জানতে পারেন , সিছুয়ান প্রদেশের নেইচিয়াং জেলার মাধ্যমিক স্কুলের লি সিয়াওপিং নামে একজন ছাত্রী ৬৮৩ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছে । এই পয়েন্ট অনুযায়ী লি সিয়াওপিং একজন ভাল এবং বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযোগ্য ছাত্রী ।

    তবে লি সিয়াবোপিংয়ের পরিবার খুব গরিব । বাবা মা মাত্র ০.৬ হেক্টর জমি চাষ করে পরিবারের ৪জনের সংসার চালাতেন । অবসরকালে বাবা কয়লা খনিতে গিয়ে মজুরের কাজও করতেন । লি সিয়াওপিং ও তার ভাই দুজনের স্কুল ফির জন্য বাবা মা বিশ-বাইশ হাজার ইউয়ান ঋণী হয়েছেন । তাই লি সিয়াওপিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার বিষয় বাবা মার ওপর ভারী বোঝা হয়ে দাঁড়ায় । মেয়ের স্কুলফি'র জন্য বাবা মা খুব চিন্তা করছেন ।

    লি সিয়াওপিংয়ের কাহিনী শুনে অনেক লোক টেলিফোনে তাকে আর্থিক সাহায্য করার কথা বলেন । বিখ্যাত সঙ্গিতশিল্পী কাও সিয়াওসুং তাদের মধ্যে একজন । কাও সিয়াওসুং নিজেই লি সিয়াওপিংয়ের ফোনের নম্বর খুজে বের করেন এবং তাকে ফোন করেন । তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্কুলফি' পরিশোধের ব্যাপারে তাকে সাহায্য করতে চান। তিনি আরও বলেন, যে বিশ্ববিদ্যালয় সিয়াওপিংকে গ্রহণ করবে তা জানার পর সিয়াওপিং কাও সিয়াওসুংকে খবর দেবে এবং তিনি সিয়াওপিংয়ের কাছে স্কুলফি পাঠাবেন ।

    দু সপ্তাহ পর কাও সিয়াওসুং খবর পেলেন, চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় সিয়াওপিংকে গ্রহণ করেছে । কাও সিয়াওসুং মনে করেন, সিয়াওপিং স্কুলফি চাচ্ছে । দ্বিতীয় দিন তিনি সিয়াওপিংকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেন , স্কুলফি কত লাগবে । সিয়াওপিং ফোনে বলে, আমি আপনার টাকা পয়সা নিতে পারব না কথাটা জানানোর জন্য আমি আপনাকে ফোন করেছি । চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে গ্রহণ করেছে । আমি কথা দিয়েছিলাম যে, যখন খবর পাই তখনই আপনাকে জানাব । কিন্তু আমি আপনার টাকা নিতে পারব না । আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ।

    কাও সিয়াওসুংয়ের ফোন পাওয়ার আগের দিন লি সিয়াওপিং নিংপো শহরের এক চাচার ফোন পেয়েছে । এই চাচা এক বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক । তিনি বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে আর্থিক সাহায্য করছেন । এই চাচা সিয়াওপিংকে চার বছরের খাওয়া , পরা এবং থাকাসহ সব স্কুলফি দিতে পারেন এবং তার কোনো প্রতিদান চাইবেন না । এই চাচার স্নেহমায়া ও আন্তরিকতায় সিয়াওপিং মুগ্ধ হয় এবং তার সাহায্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় । সুতরাং সিয়াওপিং কাও সিয়াওসুংয়ের সাহায্য প্রত্যাখান করল ।

    সিয়াওপিংয়ের ব্যাখ্যা শুনে কাও সিয়াওসুং খুবই মুগ্ধ হলেন । সিয়াওপিং অন্যের কাছ থেকে বেশি আর্থিক সাহায্য পাওয়ার মাধ্যমে নিজের পারিবারিক অবস্থা পরিবর্তন করতে পারত । কিন্তু সিয়াওপিং তা করেনি । কাও সিয়াওসুং জানেন , চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় হাংচৌ শহরে অবস্থিত হওয়ায় মাসিক খরচ তার বেশি লাগবে । তিনি সিয়াওপিংকে মাসে ৫০০ ইউয়ান দেয়ার কথা বলেন । সিয়াওপিং তাও প্রত্যাখান করে এবং কাও সিয়াওসুংকে বলে, ঐ নিংপো চাচা তার খাওয়া সহ সব ফির ভার নিয়েছেন । তাই সিয়াওসুং কাকা আপনাকে আর কষ্ট দিতে চাই না । আমি আপনার কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ । বড় হলে আমি আপনাদের মতোই যাদের সাহায্য প্রয়োজন সেসব লোকদের সাহায্য করব এবং আপনাদের মতো সমাজকে ভালবাসব । শিল্পী কাও সিয়াওসুং বলেন , আমি এক পয়সাও দিতে পারিনি। তবে মেয়েটি আমাকে উল্টো শিক্ষা দিয়েছে । আমি তাকে কিছু দিতে চেয়েছিলাম, অবশেষে সে আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে ।

    অনেকে মনে করে , খাওয়া, পরা সহ সব স্কুলফি পেয়েছে কথাটা কাও সিয়াওসুংকে সিয়াওপিং না বলেও তার আর্থিক সাহায্য গ্রহণ করতে পারতো। সিয়াওপিং মনে করে , খাওয়া ও পরাসহ স্কুলফির যে সাহায্য আমি পাই তা পারিবারিক সংসারে ব্যবহার করা ঠিক নয় । যারা আমাকে সাহায্য করছেন তারা সহানুভূতি এবং স্নেহপূর্ণ । আমাকে বিশ্বস্ত হওয়া উচিত । সারা জীবনে যদি কোনো একটি সিদ্ধান্ত একবার নেয়া হয় এবং এক সময় এই সিদ্ধান্তের জন্য নিজের উপকার হয় । তবে পরে তুমি সবসময় অনিশ্চিত থাকো তাহলে এটাকে কি লাভ বলা যায় ? আমি মনে করি,নিজের জন্য কিছু স্মরণীয় জিনিস রাখলে ভাল ।

    লি সিয়াওপিংয়ের কথা যেমন সরল ও সহজ তেমনি স্বাভাবিক ও অকৃত্রিম ।

    যারা তার সাক্ষাত্কার নিয়েছিলেন সেই সব সাংবাদিক বলেন , লি সিয়াওপিংয়ের চোখে কোন জটিলতা নেই । এমনকি কোনো লোভও নেই । তার চোখে শুধু আছে শান্তি ও বিশুদ্ধতা । খুব সম্ভবত এই শান্তি ও নির্মলতা কাও সিয়াওসুংসহ সবাইকে মুগ্ধ করেছে ।

    কাও সিয়াওসুং বেশ কয়েকবার বলেছেন , লি সিয়াওপিংয়ের আচরণে তিনি বিশেষভাবে মুগ্ধ হন । সেই সময় যখন যাকে দেখেন তখন তাকে তিনি লি সিয়াওপিংয়ের কথা উল্লেখ করতেন । তার বর্ণনা শুনে সবাই তার মতো মনে করতেন , আমাদের সমাজে অনেক উষ্ণতা ও সহৃদয়তা সম্পূর্ণ মানুষ এখনও আছে । আমি ভাবতে পারিনি , এমন একটি মেয়ে অনেক দূর থেকে আমাকে মুগ্ধ করতে পারে । তাকে কিছু দিতে চেয়েচিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেয়েটিই আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে । শিল্পী কাও সিয়াওসুং মনে করেন , এটা তাঁর সম্পদ, জীবনে প্রাপ্ত নির্মল পুরস্কার । তিনি চিরকালই তা মনে রাখবেন ।