আজকের অনুষ্ঠানে আমরা বেড়াতে যাবো চীনের 'মু লান দর্শনীয় স্থান'-এ।
'মু লান দর্শনীয় স্থান' চীনের হু পেই প্রদেশের উ হান শহরের উত্তর-পূব দিকে অবস্থিত। স্থানীয় অধিবাসীরা একে বলে উ হান শহরের 'বাগান'। দর্শনীয় স্থানটি 'তা বিয়ে শান পাহাড়'-এর পাশে অবস্থিত এবং পাহাড়, জল ও উপত্যকার এক অপূর্ব সমাহার। সেখানকার দৃশ্য এতোই সুন্দর যে 'বাগান' বললেও কম বলা হয়। বিশেষ করে গরমকালে, সেখানকার তাপমাত্রা উ হান শহরের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড কম থাকে। ফলে গ্রীষ্ম অবকাশ কাটানোর জন্য দারুন জায়গা এটি।
মু লান দর্শনীয় স্থানের আয়তনও বেশ বড়, প্রায় ৭শ' ৫০ বর্গকিলোমিটার। সেখানে কয়েক শ' বড় ও ছোট ছোট দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে ৮টি। এ গুলো হচ্ছেঃ মু লান শান পাহাড়, মুলান থিয়েনছি, মুলান প্রাচীন গেইট, মুলান তা ইয়ু ওয়ান, মুলান ছিং লিয়াং চাই, মুলান ইয়ুন উ শান পাহাড়, মুলান জলমাতৃক অঞ্চল, মুলান থিয়েন চি শান পাহাড়। আপনাদের নিশ্চয়ই কৌতূহল হচ্ছে কেন এ সব দর্শনীয় স্থানের নামের সঙ্গে 'মুলান' শব্দটি যুক্ত। কেনই বা সেখানকার নাম 'মুলান দর্শনীয় স্থান'? ছালাউদ্দিন, আপনি কি এর কারণ শ্রোতাবন্ধুদের জানাবেন?
কারণ এটি প্রাচীন চীনের বীরঙ্গনা হুয়া মু লান-এর জন্মস্থান। হুয়া মুলান তত্কালীণ চীনের একজন বিশিষ্ট নারী। ২ হাজারেরও বেশী বছর আগে, চীনের হান রাজবংশের আমলে উত্তর চীনের সংখ্যালঘু জাতি সম্প্রদায় হান রাজবংশের ওপর বড় ধরনের হামলা চালিয়েছিল। রাজকীয় সরকার প্রত্যেক পরিবারকে দেশ রক্ষার জন্য একজন করে ছেলেকে যুদ্ধে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিল। এই আদেশ পাওয়ার পর, মুলান ভাবছিলেন, তার বাবার বয়স হয়েছে, ছোট ভাই'য়ের বয়স খুব কম, শুধু তার নিজের বয়সটাই যুদ্ধে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত। কিন্তু তিনি তো একজন মেয়ে? কি করা যায়-এই দুশ্চন্তায় নাওয়া খাওয়া বন্ধ মুলানের। ঠিক মতো, কাজও করতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, ছেলে সেজে তিনি নিজেই যুদ্ধে অংশ নেবেন। ১২ বছর ধরে, কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে মুলান একজন মেয়ে। এমনকি বার বার তিনি যুদ্ধে কৃতিত্বের জন্য খেতাব পেয়েছেন এবং রাজকীয় সরকার তাকে জেনারেল পর্যন্ত নিযুক্ত করেছে। কিন্তু মুলান সেই বিলাসী জীবন ত্যাগ করে বাড়িতে ফিরে আসেন এবং বাবা মাকে আগলে রাখেন। জন্মস্থানের মানুষ মুলানের মহত্বের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে সেখানকার জায়গা অথবা দর্শনীয় স্থানের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে 'মুলান' নামটি।
মুলান শান পাহাড় হচ্ছে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ। সেখানকার আয়তন প্রায় ৭৮ বর্গকিলোমিটার। মুলান শান পাহাড় সমুদ্র সমতল থেকে ৫শ' ৮০ মিটার উঁচুতে। পর্যটকরা সেখানে গেলেই ঘন ঘন বনে হাঁটতে যায়, মৃদমন্দ বাতাসে শরীর-মন জুড়িয়ে যায়। একজন মহিলা শেরপা উ ইয়ু বলেছেন—
শরীরে খুব বেশি ঘাম হয়, তারপরও ভারি আরাম আর মনটা প্রফুল্ল লাগে। একেবারেই ক্লান্তি লাগে না।
মুলান পাহাড়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য রীতিমতো চোখ ধাঁধানো। থরে থরে বিশেষ ধরনের পাথর সাজানো। বীরাঙ্গনা হুয়া মুলানের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক এই পাহাড়, তাই একে ডাকা হয় মুলান শান পাহাড়। মুলানের নামের সঙ্গে যুক্ত সুন্দর সুন্দর জায়গাগুলোকে ঘিরে মানুষ তৈরি করেছে দারুন সব কিংবদন্তী। অনেক পর্যটক ঠিক এ কারণেই বিশেষ করে এখানে আসেন। কুয়াং তোং-এর একজন পর্যটক ল্যুই সোং বলেছেন—
ছোটবেলায় মুলানের গল্প অনেক শুনেছি। সে জন্যই এখানে বেড়াতে আসা। আমার মনে হয়, মুলান শান পাহাড়ের দৃশ্য খুব বৈশিষ্টময়। তাছাড়া, পাহাড়ের দৃশ্য খুব বর্নাঢ্য এবং পাথর ও প্রাচীন সমাধি সংখ্যাও অনেক বেশি।
|