খাবার খাওয়ার জন্য দাঁত আমাদের মুখের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অতি জরুরি প্রত্যঙ্গ । দাঁতের এনামেল ও স্বাস্থ্য ঠিক রাখলে সুন্দর লাগার পাশাপাশি শরীরের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে । এর জন্য প্রথমেই দরকার প্রতিদিন ভোরে জেগে উঠার পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে ভালো করে দাঁত ব্রাশ করা । সম্প্রতি জার্মানীর একজন দন্ত বিশেষজ্ঞ বলেছেন, প্রতিদিন চা খাওয়া দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো । কারণ চায়ের মধ্যে প্রচুর ফ্লোরাইড রয়েছে ,যা দাঁতের ওপর এ্যাসিড উপাদান সৃষ্টি প্রতিরোধ করে । আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের জন্য দাঁত কিভাবে ঝকঝকে সাদা রাখা যায় সে কথাই জানাবো ।
চায়ের ফ্লোরাইড গরম পানির সঙ্গে মেশার পর দাঁতের ওপর শক্ত প্রলেপ তৈরি করে । এক লিটার লাল চায়ের মধ্যে ২ মিলিগ্রামফ্লোরাইড থাকে । প্রতি কেজি শুষ্ক চায়ের মধ্যে ৪০ থেকে ৩৩০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ফ্লোরাইড থাকে, যা অন্য যে কোনো উদ্ভিদের চেয়ে ১০ গুণেরও বেশি । বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের চা গবেষণা থেকে দন্ত গবেষকরা জানতে পেরেছেন, চীনের উলোং চা এবং সবুজ চায়ের মধ্যে ফ্লোরাইডের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি । এছাড়া, চায়ের ভেতরের পোলিফেনল উপাদান দাঁতে পোকাধরা ঠেকায় । জানা গেছে, নানা ধরনের মিষ্টি খাবার খাওয়ার পর মুখে চিনির উপাদান বেড়ে যায় যা থেকে মুখে ও দাঁতে নানা ধরনের জীবানু তৈরি হয় । বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, প্রতিদিন ৫বার এবং প্রতিবার ৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে লাল চা দিয়ে কুলকুচি করে মুখে পরিস্কার করে ফেলুন, এতে দাঁতের ওপরে জীবানু ও অ্যাসিড তৈরি বন্ধ হয়ে যাবে।
আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞান বলে, সঠিকভাবে যত্ন করলে, সারাজীবনেও দাঁত পড়বে না । জেনে রাখা ভালো যে, আমাদের কিছু কিছু অভ্যাস দাঁতের জন্য বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে ।
প্রথমত,বেশি চাপ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা । যদি আপনার টুথ ব্রাশটি ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন যে আপনি অতিরিক্ত চাপ বা শক্তি প্রয়োগ করে দাঁত ব্রাশ করেন । দাঁত ব্রাশ করা একদিকে যেমন আমাদের মুখ পরিস্কার রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি অন্যদিকে বেশি শক্তি দিয়ে ব্রাশ করা , দাঁতের ক্ষতির ও কারণ ।
দ্বিতীয়ত, বেশি বেশি শক্ত খাবার খাওয়া । অনেকেই মনে করেন, সবসময় শক্ত খাবার খেলে, দাঁতের বেশি চর্চা হবে এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে । কিন্তু না, এ চিন্তা ভুল । সবসময় শক্ত খাবার খেলে দন্তমূলের ওপর বেশি চাপ পড়ে যা দাঁত এবং দুই চোয়ালের হাড়ের জন্য ক্ষতিকর। ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া এবং অতিরিক্ত পরিমাণে শক্ত খাবার না খাওয়া দাঁত ঠিক রাখার জন্য সহায়ক ।
তৃতীয়ত,শুধু এক পাশের দাঁত ব্যবহার করে খাবার খাওয়া ।অনেকেই এক পাশের দাঁত দিয়ে খাবার খেতে পছন্দ করেন । এ অভ্যাস দাঁতের জন্য ক্ষতিকর । যে পাশের দাঁত সবসময় ব্যবহৃত হয় অন্য পাশের চেয়ে তা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ঐ পাশের চোয়ালের মাংসপেশি বেশি শক্ত হয়ে যায় । এতে চেহারাও অসুন্দর লাগে । বেশির ভাগ লোক এক পাশের দাঁতে খাবার খায় কারণ তাদের অন্য পাশের দাঁত অসুস্থ বা পোকাধরা থাকে , ফলে খাবার খাওয়ার সময় ব্যথা লাগে । যদি আপনাদের দাঁতে এ সমস্যা থাকে তাহলে দ্রুত দন্ত চিকিত্সক বা হাসপাতালে গিয়ে চিকিত্সা করিয়ে নিন। নইলে, দীর্ঘকাল ধরে এ অভ্যাস গড়ে উঠলে পরে পরিবর্তন করা কঠিন হবে এবং মুখের সৌন্দর্য্যও নষ্ট হয়ে যাবে ।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এতক্ষণ আমি আপনাদের জন্য দাঁত ঠিক রাখার কিছু পদ্ধতির কথা জানালাম । আশা করি, শোনার পর আপনারা আরও ভালভাবে ও সঠিকভাবে নিজেদের দাঁতের যত্ন নেবেন । কথায় আছে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা কেউ বোঝে না । তাই দাঁত থাকা অবস্থায় এর যত্ন নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ । এতে আপনারা খাবার খেয়েও মজা পাবেন ।
|