v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-12-26 10:37:21    
মিকেলির ইতালির স্বপ্ন

cri

    আজক আপনাদেরকে চীনে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চান এমন একজন ইতালিয়ানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো । তাঁর নাম মিকেলি পাট্রিজিও। মধ্য চীনের হু পেই প্রদেশের উ হান শহরে মিকেলি একটি ইতালিয়ান রেঁস্তারা খুলেছেন । তার রেঁস্তারার নাম "সোগ্নি ইতালিয়ানি" , এর অর্থ হল ইতালির স্বপ্ন ।

    উত্তর ইতালির ভারেসি শহরে মিকেলির জন্ম । তাঁর বয়স ৪৩ বছর । মিকেলি সবসময় নিজের ভালোভাবে পরিকল্পনা চলেন । তরুণ তিনি জীবনের জন্য তিনটি স্বপ্ন নির্ধারণ করে নেন । আমরা চীনারা যেমন ভালো চাকরি পাওয়ার পর বিয়ের কথা ভাবেন। রোমান্টিক ইতালিয়ানরা সেখানে আগেই নিজের প্রিয়জনকে খুঁজে বেড়ান । তাই মিকেলের প্রথম স্বপ্ন ছিল নিজের প্রিয় মেয়েকে খুঁজে পাওয়া । তবে অনেক বছর পর্যন্ত তাঁর এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় নি । সাত বছর আগে মিকেলি রোমে চুও না নামে একজন চীনা মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় । মিকেলি বলেন :

    আমার কাছে তার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল তার ধৈর্য্য , যে কোনো সমস্যা হলে সে খুব শান্তভাবে মোকাবেলা করতে পারে । এমন ধীর স্থির চরিত্রকে আমি বলি "চীনা শান্তি" । সমস্যা মোকাবেলার এই গুণ আমাদের পশ্চিমা দেশগুলোর লোকজনের মধ্যে নেই ।

    পশ্চিমা দেশগুলোর শিল্পের প্রতি প্রীতির কারণে সাত বছর আগে চীনের উ হান শহরে বড় হওয়া চুও না ইতালিতে গিয়ে লেখাপড়া করার সিদ্ধান্ত নিলেন । তবে খুব লাজুক স্বভাবের বলে চুও নার সঙ্গে স্থানীয় অধিবাসীদের যোগাযোগ খুব কম । তাই তার ইতালিয়ান ভাষার কোনো উন্নতি হয় নি । সে সময় চুও না লেখাপড়া বন্ধ করে দেশে ফিরে আসার কথাও ভাবেছিলেন । ঠিক এ সময় একজন চীনা বন্ধু চুও নাকে একজন ধৈর্যশীল ভাষা শিক্ষকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন । এই শিক্ষকটির নাম মিকেলি । ফলে চুও নার ইতালি ভাষার শেখা তরতর করে এগিয়ে গেল , অন্য দিকে রোমান্টিক ইতালিয়ান পুরুষটি চুও নার হৃদয়ও জয় করে ফেললেন । চুও না বলেন :

     আমার মনে হয় তার অনেক বুদ্ধি আছে । মাথা ভরা আইডিয়া । আমার কল্পনার দৌড় খুবই কম । আমি তার চরিত্রের এ দিকটা খুব পছন্দ করি । মিকেলি খুব আন্তরিক মানুষ , তার ভালোবাসা গভীর , ঘৃণা বোধও গভীর । কাজ ভালো হলে খুশি , খারাপ হলে ভীষণ মন খারাপ হয় তার ।

    মিকেলি এই গভীর ভালোবাসার পরিণতি যথারিতি বিয়ে । তার প্রথম স্বপ্ন এভাবেই পূরণ হয়েছে । ইতালিতে ৫ বছর মধুর সময় কাটানোর পর চুও না নিজের বাড়ির জন্য কাতর হয়ে ওঠেন এবং চীনে ফিরে আসতে চান । মিকেলির ভালোবাসায় স্ত্রী ছাড়া থাকা অসম্ভব , তাই তিনি ইতালির কাজ ছেড়ে দিয়ে চুও নার সঙ্গে উ হানে রওয়ানা দিলেন । প্রথমে মিকেল শুধু ভালোবাসার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিলেও এ কারণে তাঁর দ্বিতীয় স্বপ্নটিও পূরণ হয়েছে ।

    ইতালির চিরায়ত শিল্পই শুধু বিশ্ববিখ্যাত নই , সেখানকার খাবারও খুব সুস্বাদু । মিকেলির দ্বিতীয় স্বপ্ন খাবার নিয়ে একটি ইতালিয়ান রেঁস্তোরা খোলা । রোমে মিকেলির এ পরিকল্পনা ছিল , তবে সেখানে রেঁস্তোরা খুলতে অনেক টাকা লাগে । উ হানে আসার পর তার মনে হলো এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার সুযোগ সেখানে আছে ।

    প্রায় দু'বছর আগে উ হানের অর্থনীতি উন্নয়ন এলাকায় ফ্রান্স স্ট্রিট প্রকল্প শুরু হয়। এর আগে এ অর্থনীতি উন্নয়ন এলাকায় সবসময় গাড়ি , ওষুধসহ বিভিন্ন হাই টেক প্রকল্প কেন্দ্রিক উন্নয়ন কাজ চলছিল । শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদেরকে জীবনযাপনের শুধু মৌলিক সেবাগুলোই সেখানে দেওয়া হতো । এখন এ এলাকার সংস্কার হচ্ছে , রেঁস্তরা , হোটেলসহ বিভিন্ন প্রকল্পের নির্মাণও শুরু হয়েছে ।

    এ এলাকার বাণিজ্যিক পরিবেশ নিজ চোখে দেখার পর মিকেলি এখানেই তার স্বপ্নের রেস্তরা খোলার সিদ্ধান্ত নিলেন । তিনি তাঁর রেঁস্তোরার একটি সুন্দর নাম দিয়েছেন --সোগ্নী ইতালিয়ানি , মানে ইতালির স্বপ্ন । তিনি বলেন :

    আমি খুব সন্তুষ্ট । আমার রেঁস্তারা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেছে । আমার স্বপ্নও বাস্তবায়িত হয়েছে । আমার ইতালির বন্ধু আমাকে প্রশংসা করে বলে , এখন উ হানে তুমি বস হয়েছো । রেঁস্তরা খোলা এবং বাড়ি কেনা ইতালিতে সহজ নয় । দেড় বছর আগে এখানে কোনো ব্যবসায়ী ছিল না , এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে । আরো দু'বছর পর হয়ত এখানে পরিবর্তন হবে যে দেখলে অবাক হতে হবে । কে জানে ?

    মিকেলির তৃতীয় স্বপ্ন ফুটবল নিয়ে । ২০ বছর আগে তিনি ইতালির ভারেসা ফুটবল দলের একজন খেলোয়াড় ছিলেন । এ দল থেকে অপসর নেয়ার পর তিনি একজন ফুটবল কৌচ হতে চেয়েছিলেন । কিন্তু সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় নি । চীনে আসার পর তিনি চীন ও ইতালির ফুটবল বিনিময়ের জন্য অবদান রাখতে খুবই আগ্রহী । উ হানে সময় পেলে মিকেলি প্রতিবেশীদের শিশুদের ফুটবল খেলা শেখান । তিনি বলেন , স্থানীয় ফুটবল দলের কৌচ হওয়া এখন তাঁর শেষ স্বপ্ন।

    আমি আশা করি একটি চীনা শিশু ফুটবল দল গড়ে তুলতে পারবো । আমি আরো আশা করি চীনা যুবকদের নিয়ে ইতালিতে ফুটবল খেলতে পারবো । এটি আমার আরেকটি একটি স্বপ্ন ।

    যদিও মিকেলি তরুণ নন , তবে বিশ বছর আগে জীবন যেমন ছিল ঠিক সেই জীবনের প্রতি এখনো তার দুর্বার টান । তিনি বলেন , চীনে আসার পর তাঁর স্বপ্ন আরো বেড়েছে , ভবিষ্যতে আরো বেশি স্বপ্ন তিনি বাস্তবায়ন করবেন ।