v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-12-25 20:35:52    
ইয়াং সি জাং -এর ৪০ বছরের সাধনা ইন সুই

cri

সম্প্রতি লিথুয়ানে অনুষ্ঠিত বিশ্ব উত্তরাধিকার সম্মেলনে চীনের ইন সুই সাংস্কৃতিক হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ইন সুই হলো চীনের ইন রাজবংশের ধ্বংসাবশেষ। এটি চীনের প্রাচীন সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। অনেক বিস্ময়কর বিষয় এখান থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ববিদ ইয়াং সি জাং হলেন ইন সুই গবেষণা ক্ষেত্রের একজন বিশেষজ্ঞ।

ছিংহাই-তিব্বত মালভূমি উত্স থেকে বয়ে যাওয়া হুয়াং হো নদী হলো চীনের মাতা নদী। হুয়াং হো নদীর মধ্য ও নিম্ন অববহিকা অঞ্চলের আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব ভাল বলে তা প্রাচীণ চীনের সাংস্কৃতিক সূতিকাগারে পরিণত হয়। হুয়াং হো নদীর মধ্য অববাহিকা অঞ্চলের হো নান প্রদেশের আন ইয়াং শহরের সিয়াও থুন গ্রামে ২৪ বর্গকিলোমিটার আয়তন জুড়ে ইন সুই-এর অবস্থান।

ইন সুই হলো ৩ হাজার বছর আগেকার শাং রাজবংশের রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ। এখানে ২০টি জনপদ ছিল। বিংশ শতাব্দী থেকে এ পর্যন্ত প্রত্নতত্ত্ববিদরা বহু বার এখানে গবেষণা ও খনন কাজ করেছেন। এখানে রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ, রাজা ও রাজবংশের হাজার হাজার কবর পাওয়া গেছে। এতে চিয়া কু ওয়েন(প্রাণীর হাড় ও কচ্ছপের চাঁড়ার উপরে প্রাচীন চীনা শব্দের ভাস্কর্য), ব্রোঞ্জের তৈরী যন্ত্রপাতি, জেড পাথরের জিনিসপত্র এবং মাটির পত্রসহ সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব আবিষ্কার প্রাচীণ চীনের সংস্কৃতি গবেষণার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ৭০ বছর বয়স্ক ইয়াং সি জাং এই গবেষণায় ব্যাপক অবদান রেখেছেন।

বিংশ শতাব্দীর ৫০'এর দশকে ইয়াং সি জাং পেইচিং ইউনিভার্সিটির প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে স্নাতক হন। ১৯৫৮ সালে ২২ বছর বয়সে তিনি চীনের সামাজিক একাডেমির প্রত্নতত্ত্ব গবেষণাগারে চাকরি শুরু করেন। সারা চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে এই গবেষণাগারের কার্যালয় আছে। ৪ বছরের পর ইয়াং সি জাং পেইচিং থেকে হো নান প্রদেশের আন ইয়াং কার্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। তিনি কল্পনাও করতে পারেননি যে সেই আন ইয়াংই হবে তার স্থায়ী ঠিকানা। সেই যে তিনি গেলেন তারপর আছেন ৪০ বছর ধরে। স্ত্রীর সঙ্গেও চলছে তার ৪০ বছরের বিরহ। এ নিয়ে অবশ্য তার কোনো অভিযোগ অনুযোগ নেই। তিনি বলেন: "পরিচালক আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন, আমার কাজ হলো ইন সুইকে অনুসন্ধান করা। ইন সুই নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্য হচ্ছে তার আসল চেহারা বের করে আনা।"

ইয়াং সি জাং'এর জন্ম দক্ষিণ চীনের সু চৌ শহরে। দক্ষিণ ও উত্তর চীনের মধ্যে খাদ্যাভ্যাস আর জীবনযাত্রায় অনেক ভিন্নতা। আর প্রত্নতত্ত্বের কাজ প্রধানত শহর থেকে অনেক দূরের জনপদে হয়, তাই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো খুব কঠিন ব্যাপার। ১৯৬৩ সালে ইয়াং সি জাং একজন সুন্দর সু চৌ মেয়েকে বিয়ে করেন। তার স্ত্রী তখন স্বপ্নেও জানতেন না যে বিয়ের পর ৪০ বছরের অধিকাংশ সময় দু'জনকে আলাদা শহরে থাকতে হবে। অবসর নেওয়ার পরও ইয়াং সি জাং প্রত্নতত্ত্ব অনুসন্ধানের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। ইয়াং সি জাং তার স্ত্রীকে বলেন, খনন থেকে উঠে আসা অনেক তথ্য এখনো বিন্যস্ত করা হয়নি। আমার রিপোর্ট শেষ হয়নি।

অনেকেই হয় তো মনে করেন, প্রত্নতত্ত্বের কাজ খুব মজার এবং উত্তেজনাকর। আসলে ইয়াং সি জাংয়ের ৪০ বছরের ইন সুই খননের অভিজ্ঞতা অধিকাংশ সময় একঘেয়ে ছিল। প্রতি দিন মাটিতে ছোট বড় গর্ত খুঁড়ে তিনি কাজ করেন। কিন্তু অনুসন্ধানের কাজে নিশ্ছিদ্র মনোযোগ দরকার হয়। কারণ যে কোনো সময়ে ছোট খাটো অথচ গুরুত্বপূর্ণ কোনো জিনিস পাওয়া যেতে পারে অথবা চোখের আড়ালে চলে যেতে পারে। ১৯৯০ সালে ইয়াং সি জাংয়ের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের ঘটনাটি ঘটে। আর সেটি হলো রাজবংশের কবর আবিষ্কার।

১৯৯০ সালে প্রথম কবরটি খুঁজে পাওয়ার পর ইয়াং সি জাংয়ের উদ্যোগে শুরু হয় ব্যাপক খননকাজ। এরই ফসল কুও চিয়া জুংয়ের ১৬০টি কবর। এ আবিষ্কার রীতিমতো বিস্ময়কর। এগুলো রাজ পরিবারের সদস্যদের কবর, যা সুরক্ষিত অবস্থায় আছে। এই খনন উঠে আসে আরো ৩৪৯টি বিভিন্ন নিদর্শন। সে বছর চীনের "প্রত্নতত্ত্বের দশটি বড় আবিষ্কারের" মধ্যে এটি ছিল অন্যতম। ইয়াং সি জাং'এর সহকর্মী তাকে ভাগ্যবান হিসেবে অভিনন্দন জানান। কিন্তু ইয়াং সি জাং'এর মতে সাধারণ কবরের মধ্যেও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক তথ্য রয়েছে। তিনি বলেন: "ছোট কবর থেকেও বড় আবিষ্কারের ঘটনা ঘটে। যেমন আন ইয়াংয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রথমে ছোট কবরগুলোতে খনন কাজ চালানো হয়। এসব কবর ও হাজার হাজার নিদর্শনের শ্রেণীবিন্যস্ত গবেষণা থেকে তখনকার পরিবারিক কাঠামো বোঝা যায়। আগে এই গবেষণার জন্য কয়েক বছর ব্যয় হলেও তেমন এগোয়নি। কবরগুলো আবিষ্কৃত হওয়ার পর এই গবেষণা অনেক সহজ হয়ে যায়। প্রাচীণকালের কিছু বইপত্রে তখনকার পরিবারিক কাঠামোর যে বর্ণনা আছে এবারের খনন সেই তথ্যগুলোর সত্যতা প্রমাণ করেছে।"

খনন ছাড়াও আবিষ্কৃত তথ্যগুলোকে শ্রেণীবিন্যস্ত করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এসব অনুসন্ধান রিপোর্ট আকারে প্রকাশের পর অন্য গবেষকরা তা ব্যবহার করতে পারবেন। ইয়াং সি জাং'এর উদ্যোগে প্রায় প্রতিটি খননের ওপরে সম্পূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এর ভিত্তিতে ইয়াং সি জাং কিছু বইও লিখেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি প্রত্নতত্ত্ব ক্ষেত্রে পুরষ্কারও পেয়েছে। এ নিয়ে ইয়াং সি জাং বলেন: "আমার সারা জীবন ইন সুই প্রত্নতত্ত্ব গবেষণায় কেটেছে। এ ক্ষেত্রে আমি অবদান রেখেছি। আমরা যে কাজ করেছি তার ভিত্তিতে পরের গবেষকরা দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবেন। এটি আমার জন্যও বড় সাফল্য। আমার সারা জীবন ধরে একটি কাজই করেছি। আমার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে।"

ইয়াং সি জাং বলেন, শতাধিক বছর ধরে ইন সুই খননের কাজে মোট দেড় লক্ষ নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়। ইন সুই সম্পর্কে অনুসন্ধান একটি বিশেষ গবেষণার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি ইন সুই বিশ্ব সাংস্কৃতিক হেরিটেজে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আর এর প্রবীন গবেষক হিসেবে ইয়াং সি জাং খুব সন্তুষ্ট । (ইয়াং ওয়েই মিং)