v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-12-21 21:23:01    
উ ইয়ুছিং ও চাও সিয়াওইয়ুনের সুখের পারিবারিক জীবন

cri
    ৫ প্রজন্মের এক বড় পরিবার । বড় পরিবারের কর্তা হলেন উ ইয়ুছিং । বিয়ের দিন থেকে এ পর্যন্ত প্রবীন স্বামী-স্ত্রী দুজন এক সঙ্গে তাদের ৮৬ বছরের দাম্পতী-জীবন অতিক্রম করেছেন । সারা জীবন বুড়োবুড়ি দুজনেই সুখের জীবন যাপন করেছেন । শত বছর বয়সী দুজন বুড়োবুড়ি মনখুলে নিজেদের দীর্ঘায়ু হবার গোপন তথ্য সম্পর্কে বলেন । তাদের দীর্ঘায়ুর গোপনীয়তা কী ?

    ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে বুড়িমা উ ইয়ুছিংনের বয়স ১০০ পূর্ণ হবে । ৫ প্রজন্মের বড় পরিবারের প্রবীন পিতামহী উ ইয়ুছিং ১০৮ সদস্য বিশিষ্ট বড় পরিবারের কর্তা । এ বছর স্বামী চাও সিয়াওইয়ুনের ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী । এ উপলক্ষে তিনি এক ভোজসভার আয়োজন করেছেন । এদিন তিনি আনন্দের সঙ্গে সন্তানদের ফোন করেন এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নাতিকে হোটেলের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন । উ ইয়ুছিং ও চাও সিয়াওইয়ুন একসঙ্গে ৮৬ বছর ধরে জীবনযাপন করা দম্পতি । উ ইয়ুছিং ১৯০৮ সালে জন্ম নেন এবং স্বামী চাও সিয়াওইয়ুন ১৯০৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন । একসঙ্গে ৮৬ বছর অতিক্রম করলেও দুজন এখনো সুন্দর ও সুখে-শান্তিতে জীবনযাপন করছেন । প্রতি দিন ভোরে চাও সিয়াওইয়ুন স্ত্রী উ ইয়ুছিংয়ের চুল আঁচড়ে দেন—এই অভ্যাস এখনো বজায় রয়েছে । স্ত্রী উ ইয়ুছিংয়ের ঘণ কালো চুল এখন পাতলা পাতলা সাদা চুলে পরিণত হয়েছে বটে । কিন্তু চাও সিয়াওইয়নের চোখে স্ত্রী উ ইয়ুছিং আগের মতোই সুন্দর । যতই দেখুক না কেন তার ততই ভাল লাগে ।

    ১৯২১ সালে ১৭ বছর বয়সী চাও সিয়াওইয়ুন ও ১৪ বছর বয়সী উ ইয়ুছিং বাবামার আদেশে বিয়ে করেন । তাদের সেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলতে গেলে উ ইয়ুছিং এখনো মনে করেন, এটা তার সারা জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় সময় । তিনি বলেন , আমরা আকাশ ও মাটিকে এবং বাবা মাকে অভিবাদন করেছি । বাবা মা ও শ্বশুড়শ্বাশুড়ি আমাদের চেয়ে অনেক উচুতে দাঁড়িয়েছিলেন । নিজের চেয়ে ৪ বছর বড় স্বামীর কথা বললে বুড়িমা উ ইয়ুছিংয়ের মুখ সুখের ভাবে ভরে যায় । স্বামী চাও সিয়াওইয়ুন বাড়ির কর্তার দায়িত্ব তাকে দিলেন । স্ত্রী উ ইয়ুছিং যা বলতেন তিনি তা মেনে নিতেন । তিনি মনে করতেন, একটি বাড়িতে কর্তা না থাকা ঠিক নয় । ঝগড়া বা রাগ করা নিজেদের জন্য কোনো উপকার হবে না ।

    স্বামীর ভালবাসা এবং নিজে যা বলে স্বামী তা মেনে চলার ফলে উ ইয়ুছিং সবচেয়ে আনন্দিত মহিলা । স্বামী-স্ত্রী দুজন সুখে-দুঃখে ৮৬ বছর কাটিয়েছেন । দজনের দুটি ছেলে আর সাতটি মেয়ে আছে । এখন তারা ৫ প্রজন্মের ১০৮ সদস্য বিশিষ্ট বড় পরিবারের কর্তা । যুবককালে যে কষ্ট পেয়েছিলেন তার তুলনায় বুড়োবুড়ি দুজন অত্যন্ত সন্তুষ্ট । চাও সিয়াওইয়ুন অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, অতীতে যথেষ্ট খাবার ছিল না বলে পেট ভরে খেতে পারতাম না । রাতে প্রদীপ জ্বালানো হত । এখন বিদ্যুতের বাতি জ্বালানো হয় । টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয় । থাকার জায়গা বড় হয়েছে । আমাদের জীবনযাপন সুখশান্তিতে চলছে ।

    থাং ইউয়ান অর্থাত আঠালো চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরী গোল গোল খাদ্যবস্তু খেতে বুড়ো স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই সবচেয়ে ভাললাগে । অতীতের কষ্ট সময়ে কিছু থাংইউয়ান খাওয়া তাদের পক্ষে অভাবনীয় ব্যাপার ছিল । সেই সময় চাও সিয়াওইয়ুন উপার্জনের খুব চেষ্টা করতেন । কিছু টাকাপয়সা জমা হলে তিনি স্ত্রী উ ইয়ুছিংয়ের জন্য কিছু থাংইউয়ান কিনতেন । এখন থাংইউয়ান খাওয়া কোনো বিলাসী কিছু নয় । তবে এটা তাদের একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে । গুড়ের পুর দেয়া আঠালো চালে তাদের যৌবনকালের অসংখ্য স্মৃতি জড়ানো রয়েছে এবং তাদের ৮৬ বছরের সুখ-দুঃখ প্রমাণিত হয়েছে । সেটা ছিল একটা রোমান্টিক সময় । এটা তাদের আজীবন প্রেমের পরিচায়ক ।

    চাও সিয়াওইয়ুন বলেন , গত ৮৬ বছরে তাদের মধ্যে কখনো ঝগড়া হয়নি । মারামারিতো দূরের কথা । স্বামীর কথায় উ ইয়ুছিং একমত হন । তিনি বলেন , সারা জীবনে ভালবাসা সবসময় তার সঙ্গে ছিল । যত গরিব হোক না কেন , খুশি বা অখুশি হোক না কেন স্বামী-স্ত্রী দুজন কখনো ঝগড়া করেননি । জ্ঞানে অজ্ঞানে দুজনের বয়স ১০০ বছর হয়েছে । উ ইয়ুছিং এখনো যুবককালের মতোই প্রতিদিন চাও সিয়াওইয়ুনকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে দেন ।

    প্রত্যোক দিন খাওয়ার আগে অল্প মদ খাওয়া বুড়ো স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই শখ । তারা যে মদ খাচ্ছেন তা হল ছুয়ানকোং নামে এক ধরণের লতাপাতা দিয়ে তৈরী স্থানীয় মদ । আসলে চাও সিয়াওইয়ুন ও উ ইয়ুছিংয়ের খাবার অত্যন্ত সাদাসিধা । দাঁত পড়ে গেলো বলে তারা অতি সিদ্ধ মাংস ও শাকসব্জি নরম ভাত খেতে পছন্দ করেন । খাওয়াটা তাদের পক্ষে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় । তবে নিজের ছেলেমেয়ে এবং পরবর্তী প্রজন্মের সঙ্গে খাওয়ার পরিবেশ তারা খুব ভালবাসেন । গত কয়েক বছরে চাও সিয়াওইয়ুনের শ্রবন শক্তি অনেক কমেছে । তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে উচ্চস্বরে বলতে হয় । কিন্তু স্ত্রী উ ইয়ুছিং তার সঙ্গে স্বাভাবিক স্বরে কথা বললেও তিনি সহজে স্ত্রীর অর্থ বুঝতে পারেন এবং সহজভাবে মতবিনিময় করতে পারেন ।

    খাওয়ার পর অথবা অবসর সময় চাও সিয়াওইয়ুন স্ত্রীকে রসিকতার গল্পও শোনাতেন । যেমন গরুর রাজা ও মশার বিয়ে সম্পর্কে গল্পটি তিনি ৮৬ বছর ধরে বলেছেন । উ ইয়ুছিং গল্পটি ৮৬ বছর ধরে শুনেছেন । নতুন প্রজন্মের লোকদের কাছে এটা কোনো রসিকতাপূর্ণ গল্প নয় । তবে ১০২ বছর বয়সী চাও সিয়াওইয়ুন এখনো একই গল্প শোনাচ্ছেন এবং স্ত্রী উ ইয়ুছিং একই গল্প শুনে একইভাবে মনখুলে হাসি-খুশি রয়েছেন । বাড়িতে টেলিভিশন সেট থাকলেও উ ইয়ুছিংয়ের কাছে স্বামীর হাস্যকর গল্প শোনাই সবচেয়ে আকর্ষণীয় ।

    বুড়িমা উ ইয়ুছিং ফুল পছন্দ করেন । যখন বসন্তকাল আসে তখন উঠানে সাদা , হলুদ , লাল নানা রঙের নানান ফুল ফোটে । ফুলের সুগন্ধ হাওয়ায় চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে । গোটা উঠান ফুলের সুগন্ধে ভরে যায় । স্ত্রী উ ইয়ুছিং একটা হলুদ রঙের ফুল তুলে স্বামী চাও সিয়াওইয়ুনের কানে লাগিয়ে দেন । স্বামীর সরলতা ও সততা দেখে তিনি মৃদু হেসে ওঠেন । তারা দুজন যৌবনকালের মতো তাদের রোমান্টিক কাহিনী শুনিয়ে যাবেন আর বসন্তের ফুলের মত দুজন শত বছর বয়সী বুড়ো মানুষের অপরিবর্তিত প্রেমের কাহিনী জেগে থাকবে দিনের পর দিন ।