২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়া লেবাননের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আএক দফা ভন্ডুল হয়ে যাওয়ায় পরস্পরকে দোষারোপ করেছে ।
২২ ডিসেম্বর লেবাননের পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে অধিবেশন বসার কথা । তবে এর আগে পার্লামেন্টে এ ধরনের অধিবেশন ৯ বার স্থগিত হয়ে গেছে । যুক্তরাষ্ট্রের নিকট প্রাচ্য সমস্যা বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডেভিড ওয়েলস ২০ ডিসেম্বর তাঁর তিন দিনব্যাপী লেবানন সফর শেষ করেছেন । সফর শেষ হওয়ার আগে তিনি লেবাননের পার্লামেন্টের বিরোধী দলের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করার অভিযোগ তোলেন এবং সিরিয়ার বিরুদ্ধে এই নির্বাচনে সহায়ক ভূমিকা পালন না করার জন্য দায়ী করেন । তিনি জোর দিয়ে বলেন , লেবাননের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেকে আনা সংকট যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাধান করতে হবে । লেবাননের উচিত নিরাপদ , স্থিতিশীল ও স্বাধীন লেবানন উপভোগ করা এবং বিভিন্ন পক্ষের হস্তক্ষেপ দূর করা । তিনি আরো বলেন , লেবাননের জনগণ ও ভোটারদের নির্বাচিত অধিকাংশ পার্লামেন্ট সদস্যদের আকাঙ্খাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে । উল্লেখ্য হল , সফরকালে ওয়েলস শুধু লেবাননের পার্লামেন্টের বিরোধী দলের স্পীকার নাবিহ বারীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন । ওয়েলস বলেন , সফরকালে তিনি বিরোধী দলের আরেক জন নেতা মিচেল আউনের সঙ্গে বৈঠক করেন নি । তিনি তাঁকে বাস্তব ব্যবস্থা নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়া দ্রুততর করার আহ্বান জানিয়েছেন । একই দিন , মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ বলেছেন , তাঁর ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনা আপাতত নেই । সেদিন হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত একটি সংবাদ সম্মেলনে লেবাননের রাজনৈতিক সংকট অবসানের জন্য বাশারের সঙ্গে বৈঠক করবেন কিনা সংবাদদাতার এ প্রশ্নের উত্তরে বুশ বলেন , বাশারের প্রতি তিনি ধৈর্য হারিয়ে দেলেছেন । কারণ বাশার ফিলিস্তিনে হামাসকে সমর্থন করেন , লেবাননি হিজবুল্লাহকে সাহায্য করেন , এ সংস্থার আত্মঘাতী জঙ্গীদের ইরাকে প্রবেশের জন্য সুবিধা করে দেন এবং লেবাননের স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছেন । বুশ সিরিয়াকে লেবাননের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সেদেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করার জন্য সিরিয়ার বিরুদ্ধে দোষারোপ করেন ।
বুশের এ ভাষ্য প্রকাশের কয়েক ঘন্টার মধ্যে সিরিয়া তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে । সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়ালিদ আল মালিম এদিন সংবাদদাতাদের সঙ্গে সাক্ষাত্কালে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লেবাননে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে সমর্থন দিলে বিরোধী দলের ওপর আঘাত হানার এবং সেদেশের অভ্যন্তরীণ সমঝোতায় অন্তরায় সৃষ্টি করার অভিযোগ আনেন । তিনি বলেন , যুক্তরাষ্ট্রের কারণেই লেবাননের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সংক্রান্ত সংকট সমাধানে সিরিয়া ও ফ্রান্সের প্রচেষ্টা নস্যাত্ হয়ে গেছে । মালিম বলেছৈন , লেবাননের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিষয়ে সিরিয়া ও ফ্রান্সের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রয়েছে , দু'পক্ষ এসব যোগাযোগের মাধ্যমে তিনটি নীতি ঘোষণা করেছে , এগুলো হল : লেবাননের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে লেবাননের সেনাপ্রধানকে সমঝোতার মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের পদে বসানো , লেবাননী দলগুলোকে নিয়ে একটি জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকার গঠন করা এবং লেবাননের নির্বাচন আইন যৌক্তিকভাবে সংশোধন করা । সিরিয়ার বিরুদ্ধে ওয়েলসের ওয়েল্চের অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দেন মালিম । তিনি বলেন , সম্প্রতি ওয়েলস দু'বার লেবানন সফর করেছেন , লেবাননের সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্টির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কথা সরাসরি ঘোষণা করেছেন এবং লেবাননে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন । এ থেকে বোঝা যায় , যুক্তরাষ্ট্র লেবাননের জনগণের সমঝোতার প্রক্রিয়াকে মোটেও এগিয়ে নিতে চায় না । তবে সিরিয়া ও ফ্রান্স লেবাননের দু'পার্টির ব্যাপারে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে একমত হয়েছে । তিনি জোর দিয়ে বলেন , লেবাননে সিরিয়া গঠনমূলক ভূমিকা পালন করছে এবং সেখানকার অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হস্তক্ষেপ করছে না । কারণ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার একমাত্র লেবাননেরই ।
|