চীনের শহরায়ন ও শিল্পায়নের প্রক্রিয়া বাড়তে থাকায় গ্রামাঞ্চলের প্রচুর শ্রম-শক্তি উন্নত অঞ্চলে গিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছে। বর্তমানে চীনে গ্রাম থেকে আসা প্রায় ১২ কোটি শ্রমিক স্থাপত্যকর্ম, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং গৃহে পরিসেবাসহ বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন। পূর্ব চীনের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক শহর হিসেবে শাংহাইয়ে গ্রাম থেকে আসা শ্রমিকের সংখ্যা ৪০ লাখেরও বেশী। তাঁরা শাংহাইয়ের উন্নয়নে বিশাল অবদান রাখছেন। পাশাপাশি শাংহাই পৌর সরকার তাদের চিকিত্সা সুনিশ্চিতকরণ এবং শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের জীবনযাত্রার উন্নয়নে সহায়তা করছে। ফলে তারাও শাংহাইয়ের উন্নয়নের সাফল্য ভোগ করতে পারছেন।
শাংহাই-এর চিয়াতিং জেলার এলাকার মালু মহকুমা-নগরের ইয়ুংশেং কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য শানতোং প্রদেশের গ্রাম থেকে আসা শ্রমিক হুয়াং ফালেই তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে কারাওকের মাধ্যমে গান গাইচ্ছেন। ঘরে একটি ২৯ ইঞ্চি টিভিসেট রয়েছে। তা ছাড়াও, আরো আছে লাল রঙ্গের সাউন্ড বক্স। অবসর সময় তাদের এই ঘরে গানের সুরে সুরে ভরে যায়।
তিন বছর আগে নির্মিত ইয়ংশেং কমিউনিটি হচ্ছে বহিরাগত শ্রমিকদের জন্য শাংহাইয়ের সবচেয়ে আগে নির্মিত একটি বড় এলাকা। সরকারের সাহায্যে মোট ৩০ কোটিরও বেশী ইউয়ান রেনমিনপি ব্যয়ে এই ভবন নির্মিত হয়েছে। হুয়াং ফালেইসহ গ্রাম থেকে আসা এ ধরণের শ্রমিকরা এখানে বসবাস করেন। প্রতি মাসে তাদের মাত্র ৮০ ইউয়ান রেনমিনপি ভাড়া দিতে হয়। ইয়ংশেং ভবন প্রসঙ্গে হুয়াং ফালেই বলেন,
বাইরের চেয়ে ভবনে বসবাস করা খুব আরামদায়ক। আমার মনে হয়, বাইরে থাকলে গোসলের সময় পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুব অসুবিধাজনক এবং আমাদের বেতনের টাকায় তা সম্ভব নয়।
ইয়ং শেং কমিউনিটি ১০টি ছ'তলা ভবন নিয়ে গঠিত। বাইরে থেকে দেখতে খুব সুন্দর। কমিউনিটির ফুল বাগানে নানা রকমের ফুল ও ঘাস আছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব ভাল। ডাইনিং রুম, সুপার মার্কেট, চিকিত্সা কেন্দ্র, সেল্ফ-হেলপ ব্যাংকসহ জীবনের জন্য সব ব্যবস্থাই এখানে আছে। তা ছাড়াও, এখানে রয়েছে লাইব্রেরী, নেটক্যাফ এবং শরীর চর্চার যন্ত্র, যুবক-যুবতীদের লেখাপড়া, স্বাস্থ্য রক্ষা এবং বিনোদনের চাহিদা পূরণ করে এমন সব কিছু। পাশাপাশি কমিউনিটির ব্যবস্থাপনা ও পরিসেবা কেন্দ্র বিশ্ব-বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এবং আইন উপদেষ্টাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে গ্রাম থেকে আসা শ্রমিকদেরকে পেশাগত প্রশিক্ষণ ও আইন সহায়তাসহ নানা ধরণের সেবা দিচ্ছে।
গ্রাম থেকে আসা শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মৌলিক নিশ্চয়তা মেটানো ছাড়াও, শাংহাই পৌর সরকার তাদেরকে আরো সুবিধাজনক সামাজিক নিশ্চয়তা সেবা দিচ্ছে। শাংহাই-এর গ্রাম থেকে আসা শ্রমিকদের বিষয়ক দপ্তরের মহা-পরিচালক চাও চিয়ানদে বলেন, শাংহাই গ্রাম থেকে আসা ৪০ লাখ শ্রমিকদের জন্য "আশ্রিত ছাতা" গড়ে তুলছে। শাংহাই শহরের শ্রমিক ও সামাজিক নিশ্চয়তা ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য সূত্রে জানা গেছে, গ্রাম থেকে আসা শ্রমিকদের জন্য শাংহাই শহরের সার্বিক বীমা আবৃতির হার অব্যাহতভাবে বাড়ছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ নাগাদ বীমাকারীদের সংখ্যা ৩১ লাখ ৯০ হাজার। এই সংখ্যা গ্রাম থেকে আসা শ্রমিকদের মোট লোকসংখ্যার ৮০ শতাংশ। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৯০ শতাংশে দাঁড়বে।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা এখন যে কন্ঠ শুনচ্ছেন তা হচ্ছে শাংহাই শহরের মিনহাং এলাকার "ভাসমান লোকসংখ্যার মধ্যে প্রসূতীদের বিশেষ প্রসব কেন্দ্রে রেকর্ড করা।
মিনহাং এলাকার অধিকাংশ লোকই গ্রাম থেকে আসা শ্রমিক। তাদের মধ্যে প্রসূতীর সংখ্যাও প্রচুর। তাদের অর্থনৈতিক ঝামেলা কমানোর উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালে স্থানীয় স্বাস্থ্য সংস্থা পুচিয়াং মহকুমা-নগরের ক্লিনিকে "বিশেষ প্রসব কেন্দ্র" স্থাপন করে সস্তা ও পূর্ণাঙ্গ পরিসেবা দিচ্ছে। এটি হচ্ছে গ্রাম থেকে আসা প্রসূতীদের জন্য শাংহাইয়ে সবচেয়ে আগে স্থাপিত প্রসব কেন্দ্র। প্রসব রুমে শিশু কাঁদছে এবং নতুন বাবা-মা হওয়া দম্পতির মুখে আনন্দময় হাসি ফুটে উঠছে। এইমাত্র একজন ছেলে পাওয়া উ ওয়েনওয়েন বলেন,
আমার কাছাকাছি সব বন্ধুদের স্ত্রীরাই এখানে প্রসব করেন। এখানে ফি খুব যৌক্তিক। বড় হাসপাতালের চেয়ে এখানকার ফি অনেক কম। গ্রাম থেকে আসা শ্রমিক হিসেবে আমরা প্রথমত ফি'র কথা বিবেচনা করি। দ্বিতীয়ত বিবেচনা করি নিরাপত্তার বিষয়টি। এখানে ডাক্তাররা পেশাগতভাবে কাজ করেন। সাধারণভাবে বলা যায়, অন্যান্য হাসপাতালের চেয়ে ভালো।
গ্রাম থেকে আসা শ্রমিকদের সবচেয়ে মনোযোগী বিষয় হচ্ছে ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সমস্যা এখন সমাধান হয়েছে। শাংহাইয়ে গ্রাম থেকে আসা শ্রমিকদের ছেলেমেয়ারা স্থানীয় ছেলেমেয়েদের অনুরূপ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। তারা সরকারী স্কুলে লেখাপড়া করতে পারে। তা ছাড়া, তারা বাবামায়ের কাজ করার স্থানের কাছাকাছি স্কুলে লেখাপড়া করতে পারে। এসব স্কুল বিশেষভাবে তাদের জন্য স্থাপিত হয়েছে।
২০০৬ সালে শাংহাই শহরের শিক্ষা কমিশন মোট তিন কোটি ইউয়ান রেনমিনপি পুঁজি বিনিয়োগ করে সারা শহরের গ্রাম থেকে আসা শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের জন্য নির্মিত ২৭৭টি স্কুলের অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ করেছে।
গ্রাম থেকে আসা শ্রমিকরা ক্রমে শাংহাই শহরের সদস্যে পরিণত হচ্ছে। শাংহাইয়ের সকল কমিউনিটি তাদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। তারা শহরের গেমসেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারছেন। গ্রাম থেকে আসা শ্রমিকদের বিষয়ক শাংহাই শহরের সরকারী দপ্তরের পরিচালক চাও চিয়ানদে বলেন, সরকার আরো বেশি ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রাম থেকে আসা শ্রমিকদের জীবন-যাত্রার মানের উন্নতি করবে। এর ফলে শাংহাই-এর অধিবাসীদের সঙ্গে তারাও শাংহাইবাসী হিসেবে শাংহাইকে অপরূপ করে গড়ে তুলতে পারবেন। (লিলি)
|