জামালপুর জেলার শ্রোতা আব্দুল্লাহেল হাদী তাঁর চিঠিতে চীন দেশের ফ্লাই ওভার সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, প্রিয় বন্ধু, চীনের প্রত্যেক বড় বড় শহরে ফ্লাই ওভার আছে। সারা চীনের মধ্যে রাজধানী পেইচিংএ ফ্লাই ওভারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। পেইচিংএ ঠিক যে কতটা ফ্লাই ওভার আছে তা সঠিকভাবে বলা খুব কঠিন। শহরের পরিবহণে ফ্লাই ওভার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। চীনের অথর্নীতির দ্রুত উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে চীনের শহরগুলোতে ফ্লাই ওভার সংখ্যা আরও বাড়বে।
রাজশাহি জেলার শ্রোতা সুজন তাঁর চিঠিতে চীনের তাও ধর্ম সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এখন এই ধর্ম সম্পর্কে কিছু বণর্না করবো। তাও ধর্ম চীনের হান জাতির মধ্যে উদ্ভূত এক ধরনের দেশীয় ধর্ম। এ ধর্মের প্রবতর্ক ছিলেন চীনের পূর্ব হান রাজবংশ আমলের যাং তাওলিং। যাং তাওলিং ছিলেন বতর্মান জিয়াংসু প্রদেশের অধিবাসী। তাও ধমার্বলম্বীরা লাও জিকে তাঁদের ঋষি বলে ভজনা করেন। তাঁদের প্রধান ধমর্গ্রস্থ লাও জির রচিত তাও ডে জিং । ধমীর্য় দৃষ্টিভংগী থেকে তাঁরা এই তাও ডে জিং গ্রস্থের ব্যাখ্যা করে থাকেন বলে তাঁদের ব্যাখ্যা লেখক লাও জির দশর্নের অভীষ্ট অর্থ থেকে ভিন্ন। তাও ধমার্বলম্বীরা নানা অতিপ্রাকৃত সত্তার পূজা করেন। তাঁদের বিশ্বাস এই যে ধ্যান ও কৃচ্ছ্রকঠোরতা সহ বিশেষ সাধনার মধ্য দিয়ে মানুষ অমরত্ব লাভ করতে এবং পার্থিব দু:খকষ্ট থেকে চিরকালের জন্যে মুক্ত হতে পারে। তাও ধর্মেরও অনেক শাখা প্রশাখা আছে। মিং ও ছিং আমলে এবং পরবর্তী সময়ে তাও ধর্মের ক্রমাবনতি ঘটতে থাকে। ১৯৫৭ সালে পেইচিংয়ে চীনের তাও ধর্মের একটি সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সমিতির উদ্দেশ্য সারাদেশের তাও ধমার্বলম্বীদের ও ধমীর্য় পন্ডিতদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং তাও ধর্মের ইতিহাস ও ধমীর্য় শিক্ষা সম্পর্কে গবেষণা করা।
কিশোরগঞ্জ জেলার শ্রোতা আশরাফুল ইসলাম তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের কোন প্রদেশে সবচেয়ে বেশী সুসলমান বাস করে এবং সেখানে কয়টি দেশে কতটি সমজিদ আছে? প্রিয় বন্ধু , আপনার এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে চীনের ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কিছু বলবো। চীনে ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসার শুরু হয় খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মধ্য ভাগে অথার্ত চীনের থাং রাজবংশ আমলে। চীনের থাং রাজবংশ ও সোং রাজবংশ আমলে ইসলাম ধমার্বলম্বী আরব ও পারষ্যের ব্যবসায়ীরা স্থলপথে মধ্য-এশিয়ার উপর দিয়ে উত্তর-পশ্চিম চীনে আসতেন, আর নৌপথে আসতেন চীনের দক্ষিণ প্রান্তের গুয়াংযৌ শহরে ও দক্ষিণপূর্ব চীনের উপকূলীয় অঞ্চলের অন্যান্য বন্দরে। এতে আরব ও পারশ্যের জনগণের সঙ্গে চীনা জনগণের বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময় যেমন প্রমারিত হয়েছিল, তেমনি চীনে ইসলাম ধর্মের প্রচার ও বিস্তারও শুরু হয়েছিল। বিদেশ থেকে ইসলাম ধর্মের উলেমা, ধমর্প্রচারক ও মুসলমান পযর্টকদের আসতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে চীনের বিভিন্ন স্থানে মসজিদও স্থাপিত হতে থাকে। ইউয়ান রাজবংশ ও মিং রাজবংশ আমলে চীনে ইসলাম ধর্মের আরও প্রসার হয়। চীনের হুই, উইগুর, কাজাক, উজবেক, তাজিক, তাতার , কিরগিজ, ডোংসিয়াং, সালার, এবং বোনান এই দশটি সংখ্যালঘু জাতির মধ্যেই ইসলাম ধমার্বলম্বীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। যদি কোন প্রদেশে বসাবসরত মসুলমানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী বলতে বলা হয়, তাহলে বলা যায় নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ও সিনজিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে মুসলমানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। চীন দেশে কত মুসজিদ আছে তা বলা খুব কঠিন। এ প্রশ্নের উত্তর ঠিকমত দিতে না পারার জন্যে দু:খিত।
|