v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-12-19 20:42:03    
চীনের চিলিন প্রদেশের কাঁচাঘরের সংস্কার অভিযান

cri

    গত কয়েক বছর উত্তর-পূর্ব চীনের চি লিন প্রদেশে ব্যাপকহারে কাঁচাঘরের সংস্কার চালানো হয়েছে । অতীতে যারা এসব কাঁচাঘরে বসবাস করতেন , আজ তারা সবাই নতুন নতুন আবাসিক এলাকার বাড়িতে উঠেছেন । এ বছর তারা আরামে শীত মৌসুম কাটাতে পারছেন ।

    নয়া চীন প্রতিষ্ঠার গোড়ার দিকে চিলিন প্রদেশের শহরগুলোতে মাটি ও পাথর দিয়ে বিপুল সংখ্যক কাঁচাঘর নির্মিত হয় । তাছাড়াও যারা গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন , তারাও কিছু অস্থায়ী কাঁচাঘর নির্মাণ করেন । কেবল  চিলিন প্রদেশের রাজধানী ছাং ছুন শহরেই এ রকম কাঁচাঘরের আয়তন ৭০ লাখেরও বেশি বর্গমিটারে দাঁড়িয়েছিল ।

    প্রতি বছরের শীতকালে যারা এসব কাঁচাঘরে থাকতেন , তাদের জন্যে বেশ অসুবিধা থাকতো । কেন না , চিলিন প্রদেশের শীত মৌসুম যেমন ঠান্ডা পড়ে , তেমনি সুদীর্ঘ । এসব কাঁচাঘরে বাস করে লোকেরা শীত প্রতিরোধ করতে পারতেন না । ছাং ছুন শহরের থুয়ান শান চিয়ে এলাকার অধিবাসী চৌ রুই ফানের বয়স ৫১ বছর । তিনি কাঁচাঘরে ২০ বছর ধরে বসবাস করেছেন । একটি ২০ বর্গমিটারের ঘরে তার পরিবারের ৫জন সদস্য থাকতেন । তখনকার কষ্টকর জীবন বর্ণনা করে তিনি বলেন ,

    আমি সবসময় চিন্তিত হতাম । বৃষ্ট হলে ঘরটি পানিতে ডুবে যেতো । যে কোনো সময় ঘরটি পড়ে যেতো ।

    এ সব এলাকায় ঠাসাঠাসিতে বসবাসের কারণে প্রতিবেশীদের মধ্যে মাঝেমধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হতো । থুয়ান শান চিয়ে এলাকার অধিবাসী উই ছুন লি সবসময় ড্রেইনটি বন্ধ থাকার জন্যে অসুবিধায় পড়তেন । তিনি বলেন , বৃষ্টি হলে আমার বাড়ির ড্রেইনটি বন্ধ হয়ে যেতো । তখন আমার প্রতিবেশীদের বাড়িগুলো ডুবে যেতো । এতে প্রতিবেশীদের সংগে আমার সম্পর্ক তিক্ত হতো । আমি নিজেও দু:খ পেতাম ।

    নগরায়নের সংগে সংগে চিলিন প্রদেশের বিভিন্ন শহরে একটির পর একটি দালানকোঠা গড়ে ওঠছে । অধিকতর সংখ্যক শহরবাসী আরামদায়ক ও প্রশস্ত বাড়িঘরে উঠেছেন । এ দৃশ্য দেখে কাঁচাঘরে থাকা লোকেরা ইর্শা করতেন । তবে সীমিত অবসরকালীন ভাতা ও দারিদ্র্যের কারণে এসব বাড়ি কেনা তাদের পক্ষে একেবারে অসম্ভব ।

    চিলিন প্রাদেশিক সরকার সবসময় এসব অধিবাসীর আবাসিক সমস্যা সমাধানের জন্যে নানা পদক্ষেপ নিয়ে এসেছে । ২০০৫ সালের শেষ দিকে চিলিন প্রাদেশিক সরকার " কাঁচাঘরের সংস্কার সংক্রান্ত একটি অভিমত" প্রকাশ করে । এতে বলা হয়েছে , তিন বছরের মধ্যে দেড় কোটি বর্গমিটার এলাকায় কাঁচাঘর সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হবে । এতে কাঁচাঘরে থাকা ৩ লাখেরও বেশি পরিবারের প্রায় ১০ লাখ অধিবাসী লাভবান হবেন । ২০০৬ সালের গোড়ার দিকে ছাং ছুন শহরের কাঁচাঘরের সংস্কার কাজ সার্বিকভাবে শুরু হয় ।

    এ সংস্কার সম্পর্কে অধিবাসীদের আস্থা বাড়ানোর জন্যে সংস্কার কাজে নিয়োজিত কর্মীরা নানা উপায় গ্রহণ করেছেন । থুয়ান শান চিয়ে এলাকা সংস্কার প্রকল্পের ম্যানেজার ওয়াং সুং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , আগে উচ্ছেদ বাবাদ ভাতা মাসে মাসে অধিবাসীদের দেয়া হতো । পরবর্তীকালে ৬ মাস পর পর তাদের এ ভাতা দেয়া হয় । অধিবাসীদের সংশয় দূর করার জন্যে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান নানা উপায় অবলম্বন করে । ম্যানেজার ওয়াং বলেন ,

    আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে কাঁচাঘর উচ্ছেদ করা । তারপর কাল বিলম্ব না করে সেসব এলাকায় নতুন দালানকোঠা নির্মাণের কাজ শুরু করি , যাতে অধিবাসীরা সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থা রাখতে পারেন ।

    উত্তর-পূর্ব চীনে শীতকালে খুব ঠান্ডা পড়ে । সাধারণ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এ মৌসুমে তাদের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখে । কেমন করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাঁচাঘর সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করা হবে এবং অধিবাসীদের হাতে একটি সুন্দর দালানকোঠা তুলে দেয়া হবে , তা নিসন্দেহে সরকারের সদিচ্ছার জন্যে একটি পরীক্ষা । উই ছুন লি যে এলাকায় থাকতেন , সে এলাকা সংস্কারের কাজ গত বছরের অক্টোবর মাসে শুরু হয় । তিনি লক্ষ্য করেন যে , কনকনে শীতকালেও সংস্কারের কাজ বন্ধ হয় নি । নতুন দালানকোঠা নির্মাণের গতি দেখার জন্যে তিনি মাঝেমধ্যে নির্মাণস্থলে যেতেন । ১৪ মাস অপেক্ষার পর উই ছুন লির আশা পূরণ হয়েছে ।

    এ বছরের নভেম্বর মাসে ছাং ছুন শহরের থুয়ান শান চিয়ে এলাকা সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হয় । উই চুন লি ও তার প্রতিবেশীরা তাদের বহুল প্রত্যাশিত নতুন বাড়ির চাবি পেয়েছেন । তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান । তিনি বলেন ,

    চাবি নেয়ার সময় আমি খুব খুশী হয়েছি । আমাদের নতুন আবাসিক এলাকা সত্যিই চমত্কার । এখানে সবুজ ঘাস আছে , ছোট গাছ আছে এবং নানা ধরণের ফুল আছে । আমরা শেষ পর্যন্ত দালানকোঠায়ও উঠেছি ।

    উই ছুন লির নতুন বাড়ির আয়তন ষাটেরও বেশি মিটার । জানা গেছে , মৌলিকভাবে অধিবাসীদের আবাসিক অবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে ছাং ছুন শহরের নির্মাণ কমিশন একটি বিধিতে বলেছে , নতুন নির্মিত বাড়ির আয়তন ন্যূনতম ৪৯ বর্গমিটার হতে হবে । এছাড়া আরো ৫৪ ও ৬৪ বর্গমিটারের বাড়ি রয়েছে । বাড়ি বদলের আয়তনের ব্যবধানের বেলায় অধিবাসীরা নির্মাণ কাঁচামালের দামের এক তৃতীয়াংশ দামে কিনতে পারেন । এ ক্ষেত্রে সরকার নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে ভাতা দিয়ে থাকে ।

    ছাং ছুন শহরের ছাং থুং লু এলাকা সংস্কারের কাজ একটু দেরীতে শুরু হয় । তবে উই ছুন লির দৃষ্টান্ত দেখে এ এলাকার অধিবাসী লি ইয়ুং ছুন সময়মত নতুন বাড়ির চাবি পাওয়ার জন্যে খুবই আস্থাবান । তিনি বলেন ,

    বিজ্ঞপ্তিতে লেখা আছে , ২০০৮ সালের ৩০ অক্টোবর আমাদের নতুন বাড়িতে ওঠার সময় । তখন আমার নতুন বাড়ি হবে । আশেপাশে সবুজ ঘাস থাকবে । অবশ্য আমার ঘরসজ্জার কাজ হবে । সেসময় আমার বয়স ৬০ পূর্ণ হবে । আমি আরামে আমার শেষ জীবন কাটাতে পারবো ।

    অধিবাসী চেং ছুয়ান চিয়াং অতীতে পালাক্রমে নিজের দুটি মেয়ের বাড়িতে থাকতেন । এখন তিনি ছাং সিন ইউয়ান আবাসিক এলাকার নতুন বাড়িতে উঠেছেন ।

    চীনের পূর্ত মন্ত্রী ওয়াং কুয়াং থাও স্বয়ং চিলিন প্রদেশের রাজধানী ছাং ছুন শহরের ছাং সিন ইউয়ান আবাসিক এলাকায় গিয়ে অধিবাসীদের হাতে নতুন বাড়ির চাবি বিতরণ করেন । তিনি বলেন ,

    গৃহায়ণের ক্ষেত্রে চীন সরকার সবসময় দুর্বল গোষ্ঠীর ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে । সরকারকে অবশ্যই ভালোভাবে তাদের বাসস্থানের সমস্যা সমাধান করতে হবে । এতে বাসস্থানের ব্যাপারে সামাজিক ন্যায়বিচার বাস্তবায়িত হবে ।

    জানা গেছে , নির্দিষ্ট সময়ের আগে অর্থাত এ বছরের শেষ নাগাদ চিলিন প্রদেশে কাঁচাঘর সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে ।